দেশে বর্তমানে নারী ও শিশু নির্যাতন মহামারি পর্যায়ে পৌঁছেছে মন্তব্য করে সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ বলেছেন, গত ২০ থেকে ২৯ জুন পর্যন্ত ২৪টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ধর্ষণের শিকারদের মধ্যে ১২ জনের বয়স ছয় বছরের নিচে। আমরা তো খুব উঁচু গলায় বলি, আমরা ধর্মভীরু জাতি। ৬০ বছরের বুড়ো কী করে একটি ছয় বছরের মেয়ের গায়ে হাত দিতে পারে।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সচিবালয়ে সারা দেশে অব্যাহত নারীর প্রতি সহিংসতা, ধর্ষণ ও নিপীড়ন বন্ধে গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান উপদেষ্টা।
শারমীন এস মুরশিদ বলেন, আমি ৪০ বছর ধরে নারী ও শিশু নির্যাতন নিয়ে কাজ করছি। সরকার এসেছে সরকার গেছে, কেউ কিন্তু এটা সামাল দিতে পারেনি। এর বড় কারণ হচ্ছে রাজনীতি ও মাদক। আর একটা বড় কারণ হচ্ছে আমরা আমাদের তরুণ, বাচ্চা ছেলে-মেয়েদের ঠিকমতো মানুষ করতে পারছি না।
উপদেষ্টা বলেন, কিছুদিন আগে আমার কাছে একটা অভিযোগ এসেছে, অভিযোগ শুনে আমি হাত পা ছেড়ে দিয়ে ভাবছি—আমি এটা নিয়ে কী করবো! ১০ বছরের একটি বাচ্চা আড়াই বছরের একটি মেয়েকে ধর্ষণ করেছে। এটাকে আমি কী করে ধর্ষণ বলি? এটা আমি কোন ভাষায় ব্যাখ্যা করবো? তার যে মানসিক বিকৃতি ঘটছে, আমরা যারা দায়িত্বশীল তারা কী করছি? আমরা এ শিশুদের প্রোটেকশন দিতে পারছি না।
তিনি বলেন, এ সহিংসতাগুলো এতই ব্যাপক, যে এগুলোর ব্যাপারে আমরা মন্ত্রণালয় থেকে কঠোর কতগুলো আইনি দাবি তুলতে যাচ্ছি। একটি হচ্ছে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ। সারা বিশ্ব যদি পর্নোগ্রাফির নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, আমার দেশ কেনও পারবে না! একটি বয়সের নিচে এর অ্যাক্সেসই (প্রবেশের সুযোগ) থাকবে না। এ দাবিটা আমি তোমাদের সামনে করছি, আমি আমার জায়গা থেকে সরকারে থেকে যতটুকু সম্ভব এটা নিয়ে যুদ্ধ করবো। আমাদের বাচ্চাদের হাতে এটা (পর্নোগ্রাফি) তুলে দেওয়া যাবে না।
নারী ও শিশুনির্যাতন প্রতিরোধে উপজেলা পর্যায়ে নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নেতৃত্বে কুইক রেসপন্স টিম গঠন করা হচ্ছে। এরই মধ্যে এর কাঠামো চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা। বলেন, ১০ মাস আমরা যে পুরোটা পাল্টে ফেলতে পারবো, তা নয়। কিন্তু আমরা কতগুলো মৌলিক কাজ করে যেতে পারবো। মৌলিক কাঠামো তৈরি করে যেতে পারবো। কতগুলো মৌলিক গবেষণা করে যেতে পারবো।
নারী ও শিশু নির্যাতন রোধে সচেতনতা সৃষ্টিতে জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া ৫ হাজার জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ৭০ শতাংশ মেয়ে এবং ৩০ শতাংশ ছেলেকে এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রশিক্ষিত এ ছেলে-মেয়েরা মাঠ পর্যায়ে কুইক রেসপন্স টিমের সঙ্গে কাজ করবে।