আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) চলমান উদ্যোগে সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক ও বিশেষজ্ঞদের একটি প্রতিনিধিদল।
বুধবার (৯ জুলাই) বিকালে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকে শেষে এ কথা জানান তারা।
বৈঠকে অংশ নেন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থা ‘দ্য অপোজিশন ইন্টারন্যাশনাল’-এর প্রতিনিধি ড. ওয়েন লাইপার্ট, মার্কিন রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ ফরেস্ট কুকসন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকারকর্মী ও আলোকচিত্রী ড. শহিদুল আলমসহ আরও কয়েকজন। এ সময় প্রবাসী ভোটারদের রেজিস্ট্রেশন, ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ, ভোটগ্রহণ পদ্ধতি এবং তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে প্রবাসীদের সঙ্গে কার্যকর যোগাযোগ স্থাপন নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ড. শহিদুল আলম বলেন, ‘প্রবাসীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে নতুন বাংলাদেশ গঠনে অংশ নেওয়ার। বিশেষ করে যারা গত জুলাইয়ের অভ্যুত্থানে রেমিট্যান্স পাঠানো বন্ধ করে প্রতিরোধ দেখিয়েছিল এবং পরে তা আবার চালু করেছিল। সেখানে আমরা সহায়তা করতে পারি কিনা এবং সত্যিকার অর্থে এই নতুন বাংলাদেশে যাতে সারা বিশ্বের প্রবাসী বাংলাদেশিরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণমূলকভাবে যুক্ত হতে পারে, সেটার একটা প্রচেষ্টা। আমাদের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনূস শুরু থেকেই বলেছেন প্রবাসীদের নির্বাচনে সম্পৃক্ত করা জরুরি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা এমন একটি মেগাফোন হতে চাই, যার মাধ্যমে প্রবাসীদের কাছে ইসির বার্তা পৌঁছায়। অনেক সময় তথ্য ঘাটতির কারণে তারা প্রক্রিয়ার বাইরে থেকে যান। সেই জায়গায় সচেতনতা বাড়ানোই আমাদের লক্ষ্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ভূমিকা হলো এই উদ্যোগকে আরও মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। যেসব জায়গায় তথ্য জানার ঘাটতি রয়েছে, সেসব জায়গায় আমরা কানেক্টিভিটি বাড়ানোর চেষ্টা করছি। আমি এই প্রতিষ্ঠানের কেউ নই। তবে বিভিন্ন দেশের প্রবাসী বাংলাদেশিরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, তাদের আশঙ্কা ছিল—তারা ভোটাধিকার থেকে বাদ পড়তে যাচ্ছেন। সেই উদ্বেগ থেকেই আমি তাদের (প্রতিনিধিদলের) সঙ্গে এসেছি।’
কী প্রক্রিয়ায় প্রবাসীদের ভোট নেওয়া যায় এমন প্রশ্নের জবাবে শহিদুল আলম বলেন, ‘এই ব্যাপারে আমরা সিইসির সঙ্গে যখন কথা বললাম ওনারা বলেছেন রেজিস্ট্রেশনের ব্যাপারে অনেক দূর কাজ করেছেন। কীভাবে ভোট হতে পারে না হতে পারে সমস্যাগুলো কী, সেগুলো সবই। এই আলাপেই আমরা জানলাম যে সবকিছুই চলমান এবং অনেক দূর হয়ে গেছে। ওনারা ৪০টা দেশে পৌঁছাতে চাচ্ছেন এবং অনেকগুলো সেন্টার ইতোমধ্যে হয়ে গেছে। ওনারা রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে অ্যাম্বেসির মাধ্যমে এগুলো করবেন। আমাদের কাজ হচ্ছে তাদের মূল মেসেজটাকে বর্ধিত করা, পৌঁছে দেওয়া। অনেক বেশি মানুষের কাছে যাতে পৌঁছাতে পারে এবং এই প্রক্রিয়ায় যেই জটিলতাগুলো আছে সেগুলো যাতে সহজভাবে লোকের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়।’
এ সময় সংশ্লিষ্টরা বলেন, ‘দ্য অপোজিশন ইন্টারন্যাশনাল’ একটি বৈশ্বিক নাগরিক সংগঠন, যারা গণতান্ত্রিক শাসন ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে কাজ করে। প্রতিনিধিদলের মতে, প্রবাসী ভোটারদের বাদ দিলে ‘ইনক্লুসিভ’ বা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন পূর্ণতা পায় না। সে কারণে তারা প্রবাসীদের রেজিস্ট্রেশনের প্রচারণায় অংশ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।’
বৈঠকে প্রবাসীদের জন্য একটি ডিজিটাল আউটরিচ পোর্টাল, সহজ ভাষায় তথ্য সরবরাহ, রেজিস্ট্রেশন সহায়তা ও দূতাবাসগুলোতে তথ্য কেন্দ্র স্থাপনের মতো কিছু আলোচনাও হয়েছে।
তবে প্রতিনিধিরা বলেন, এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নের দায়িত্ব ইসির, তাদের কাজ হবে প্রচার ও বার্তা পৌঁছে দেওয়ায় সহায়তা করা।