আলোচনা সভায় বক্তারা

শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিতে গণমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে হবে

বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার আর্টস অডিটোরিয়ামে কমিউনিকেশন ও রিসার্চ ভিত্তিক সংগঠন ‘কোর’ এর আয়োজনে ‘সাম্প্রতিক শিশু হত্যা ও সামজিক অস্থিরতা প্রতিরোধে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভাশিশুর বেড়ে ওঠার পাশাপাশি তার নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে মানবিকতা এবং গণমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। তারা বলেন, বর্তমানে শিশুরা তাদের পরিবার থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্র, পড়াশোনা, ইন্টারনেটসহ সব ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। যা তাদের মানসিকতা ও স্বাভাবিক পরিবেশে বেড়ে ওঠার জন্য প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের যেমন মানবিকতা নিয়ে তাদের পাশে থাকা জরুরি, তেমন শিশুর বেড়ে ওঠার প্রতিবন্ধকতাগুলো স্বাধীনভাবে তুলে ধরে গণমাধ্যমকেও শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করতে হবে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার আর্টস অডিটোরিয়ামে কমিউনিকেশন ও রিসার্চ ভিত্তিক সংগঠন ‘কোর’ এর আয়োজনে ‘সাম্প্রতিক শিশু হত্যা ও সামজিক অস্থিরতা প্রতিরোধে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তারা এ আহ্বান জানান। সংগঠনের পরিচালক জাহিদ হাসানের সঞ্চালনায় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, বিশেষ অতিথি হিসেবে টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক এ জে এম শফিউল আলম ভূঁইয়া, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর সুলতানা রহমান, প্রধান বক্তা হিসেবে একাত্তর টেলিভিশনের ডিরেক্টর অব নিউজ সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা ও সেভ দ্যা চিলড্রেনের চাইল্ড প্রটেকশন ডিরেক্টর লায়লা খন্দকার উপস্থিত ছিলেন।

শিশুদের সমস্যার সমাধান সবার আগে সামাজিক করতে হবে জানিয়ে আলোচনা সভায় অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, শিশুদের নিয়ে বর্তমানে যেসব সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে তার যেমন বিচারের দিক দিয়ে সমাধান রয়েছে, তেমনই সামাজিক সমাধানও রয়েছে। এর মধ্যে সবার আগে আমাদের সামাজিক সমাধান নিশ্চিত করতে হবে। আর শিশুদের বিষয়ে গণমাধ্যম ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা থাকলেও আশা করবো গণমাধ্যম কর্মীরা এ বিষয়ে আরও জোরারোপ করবেন। তবে এর পূর্বে তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে।

অধ্যাপক এ জে এম শফিউল আলম ভূঁইয়া বলেন, এখনকার সমাজের কাঠামোতে পরিবর্তন আসছে। যৌথ পরিবার থেকে দ্রুত একক পরিবার হওয়ার একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে সবার মাঝে। যার প্রভাব পরছে শিশুদের মানসিক বিকাশের ওপর। একক পরিবারে বাবা-মা যথাযথভাবে শিশুর খেয়াল রাখতে পারেন না। অপরদিকে তাদের অনুপস্থিতিতে শিশুর যত্ন নেওয়ার জন্য যে ব্যবস্থার প্রয়োজন রয়েছে সেটিও নিশ্চিত করা হচ্ছে না। যার কারণে শিশুরা মানসিক দিকে দিয়ে যেমন বেড়ে ওঠার সুযোগ পাচ্ছে না তেমন নিরাপত্তাহীতার মধ্যেও পরতে হচ্ছে। শিশুদের এই নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি তুলে ধরার জন্য গণমাধ্যম আগের তুলায় এখন একটু হলেও ভূমিকা রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার বিষয়টিও গুরুত্ব পাওয়ার দাবি রাখে।

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, বর্তমানে সমাজে শ্রেণিবৈষম্য অনেকে বেড়ে গেছে। যার ছোঁয়া লেগেছে আমাদের পরিবারেও। এখন নির্যাতন ও শাসনের মধ্যে পার্থক্য বোঝেন না বাবা-মা। তাই এমন শ্রেণিবৈষম্যপূর্ণ অবস্থায় শিশুর নিরাপত্তা অনেকটা নেই বলা চলে। তবে শিশুদের নিয়ে গণমাধ্যমের পূর্বের অবস্থানের এখন কিছুটা পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। কয়েক বছর আগেই গণমাধ্যম হাউজগুলোতে শিশুদের বিষয়ে কোনও নীতিমালা ছিল না। কিন্তু এখন অনেক গণমাধ্যমেই নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আবার গণমাধ্যমের স্বাধীনভাবে কাজ করাটাও প্রয়োজন। কেননা, অনেক সংবাদ মাধ্যমই ব্যক্তি মালিকানায় থাকে সেক্ষেত্রে তাই সংবাদকর্মীদের স্বাধীনতা রক্ষা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

কোনও ঘটনা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত গণমাধ্যমকে সে ঘটনার বেশি বেশি ফলোআপ করার আহ্বান জানিয়ে লায়লা খন্দকার বলেন, শিশুদের নিয়ে অনেক ঘটনাই মিডিয়াতে আসছে। কিন্তু একটি নির্দিষ্ট সময় পর সেটা অন্য একটি ঘটনার আড়ালে পরে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে মিডিয়াতে আসা ঘটনাগুলোর ফলোআপ করাটাও প্রয়োজন। পাশাপাশি শিশু সংক্রান্ত চলমান ঘটনাগুলো সম্পর্কে নীতি নির্ধারকদেরকে অবহিত করাটাও দায়িত্বের মধ্যে পরে।

শিশুদের বেড়ে ওঠার জন্য সবাইকে আরও বেশি মানবিক হতে হবে উল্লেখ করে সুলতানা রহমান বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে যে শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে তা নতুন কিছু নয়। সভ্যতার শুরু থেকেই শিশুরা ঝুঁকির মধ্যে বেড়ে উঠছে। তাদের নিরাপদ পরিবেশে বেড়ে ওঠার জন্য যে সুযোগ-সুবিধার প্রয়োজন তা আমরা কতটা দিতে পারছি? এখন শিশু রাজন, রাকিব হত্যার ঘটনা মিডিয়াতে আসছে। কিন্তু অনেক শিশুই আড়ালে অন্তরালে পরিবারে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। কিন্তু এর সব ঘটনাই গণমাধ্যমে আসছে না। অনেক পরিবারে বাবা-মা শিশুদের পর্যাপ্ত সময় দিতে পারেন না। স্কুলগুলোতেও বেড়ে ওঠার পর্যাপ্ত সুযোগ নেই। তাহলে শিশুদের মানসিকতার বিকাশ কীভাবে ঘটবে সেটা আমরা ভাবি না। তাই এখন থেকেই আমাদের সবাইকে মানবিকতার দিক দিয়ে শিশুদের বেড়ে ওঠার সুযোগ নিশ্চিতের জন্য এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি গণমাধ্যমকে শিশুদের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে প্রতিকূলতাগুলো তুলে ধরে সবাইকে সচেতন করার আহ্বানও জানান তিনি।

/এসআর /এএইচ/