সানজিদা রহমান লিথি, মায়ের হিসাবে বয়স ৩২ বছর।লিথি যখন ইচ্ছা হাসেন, যখন ইচ্ছা কাঁদেন, বাসায় আর সবার সঙ্গে সম্পর্কটা ভালো হলেও ভাইয়ের দেড় বছর বয়সী মেয়েটার সঙ্গে সারাদিন লেগে থাকেন। লিথি চান, সবাই তার দিকে মনযোগ দিক, সবাই তাকে ঘিরে থাকুক। লিথি বয়সে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ হলেও তার আচার-আচরণ-ব্যবহার সবই শিশুর মতো। কারণ লিথি একজন বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষ, প্রচলিত ভাষায় একজন অটিস্টিক। অথচ এই লিথির গানের গলা ভালো। ২০০৩ সালে দিল্লীতে গিয়ে গান করেছেন।
লিথির মা জানান,‘ওকে নিয়েই আমার সবকিছু। ওর বাবা মারা যান ১৯৮৬ সালে। তবে পরিবারের সবাই আমাকে খুব সাপোর্ট করেছেন। এদিক দিয়ে আমি খুব লাকি। আত্মীয়-স্বজনরাও লিথিকে খুবই আদর করেন।’
মা দিলওয়ার জাহানের সঙ্গে কথা বলার সময় হাসি মুখে লিথি বলে ওঠেন,‘আমি প্রতিবন্ধী না, যারা কিছু পারে না তারা প্রতিবন্ধী।’ মায়ের মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে লিথি বলে উঠলেন,‘আমি খেলা পারি, গান পারি, হাতের কাজসহ অনেক কিছু পারি।’
অপরদিকে অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের বাবা-মায়েদের সংগঠন প্যারেন্টস ফোরাম ফর ডিফারেন্টলি অ্যাবল-এর প্রেসিডেন্ট সাজিদা রহমান ড্যানি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,যে পরিবারে এমন বিশেষ শিশু আছে, সে পরিবারের পুরো ধরণটাই পাল্টে যায়। সবকিছু বাদ দিয়ে আমরা অটিজম ফোকাস হয়ে যাই, হয়ে যেতে হয়। অটিজমকে বলা হয় দি মোস্ট কমপ্লিকেটেড নিউরোলজিক্যাল ডিজঅ্যাবেলিটি। এর সঙ্গে অনেক বিষয় জড়িয়ে রয়েছে। পাঁচটা ইন্দ্রিও এতে প্রভাবিত হয়। আবার পাঁচ ইন্দ্রিয়ের একটাও যদি ইফেক্টেড হয়, তাহলেও সেটা বাইরে থেকে বোঝার সুযোগ থাকে না। মানুষের স্বাস্থ্যগত প্রচুর ইস্যুজ বিষয় এর সঙ্গে জড়িত, কোনটা যে কার সঙ্গে জড়িত, সেটা বোঝা খুবই কঠিন বিষয়। এতো ডিটেইল অ্যাসেসমেন্ট আমাদের দেশে নাই। আবার যারা এসব ক্ষেত্রে প্রফেশনাল তারাও এতোটা জানেন না। আমাদের দেশে এখনও ১৫ বছরের ওপরে অর্থাৎ অ্যাডাল্ট অ্যাসাসমেন্ট নেই। আমি যদি না জানি তার কাজ করার ক্ষমতা কতটুকু রয়েছে, তাহলে তাদেরকে নিয়ে কাজ করবো কিভাবে। এই জায়গাগুলোতে আমরা চিন্তাই করছি না, হাতই দিচ্ছি না। এটা সত্যি যে,এই এরিয়াতে কাজ করা অনেক কঠিন, বলছিলেন সাজিদা রহমান।
বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে লিথির মায়ের সঙ্গে কথা বলে, মা-মেয়ের ছবি তুলে যখন পা বাড়ালাম, তখন পাশ থেকে লিথি বলে ওঠেন,‘আসো না...একটা সেলফি তুলি।’ পাশে গিয়ে জড়িয়ে ধরতেই ভুবনজয়ী একটা হাসি মুখে নিয়ে সেলফিতে পোজ দেন স্বর্ণজয়ী লিথি।
এপিএইচ/