মঙ্গল শোভাযাত্রাটি হোটেল শেরাটনের সামনে থেকে ঘুরে চারুকলায় এসে শেষ হয়।
আরও পড়তে পারেন- ছায়ানটর বর্ষবরণ ১৪২৩ : সূর্যোদয়ে ধ্বনিত হলো মানবতার মর্মবাণী
চারুকলার সাবেক শিক্ষার্থী এবং এই মঙ্গলশোভা যাত্রার সব কাজের অন্যতম পরামর্শক ইমরান হোসেন পিপলু বলেন, বর্তমান সময়ে শিশু নির্যাতনের ঘটনা অনেক বেড়ে গিয়েছে। সেই বিষয়টিকেই এবার আমরা ফোকাস করতে চেয়েছি, এখান থেকেই এবারের স্লোগান করা হয়েছে, অন্তর মম বিকশিত করো, অন্তরতর হে…। শিশু নির্যাতন বন্ধ হোক, এটাই এবারের নতুন বছরের কামনা, শিশু নির্যাতন যেন আর না হয়।
চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, বর্তমান সময়ে দেখছি, সন্তানের হাতে মা, মায়ের হাতে সন্তান খুন হচ্ছে। এবারের শোভা যাত্রার মূল জায়গাটা এই সামাজিক মূল্যবোদের অবক্ষয়। সেই সঙ্গে রয়েছে ধর্ম ব্যবসায়ীদের আস্ফালনসহ নানা অবক্ষয়ভ আমরা এসব থেকে মুক্তি চাই, আলোর দিকে যেতে চাই।
এবারের মঙ্গলশোভা যাত্রার একটি বিশেষ দিক হলো, যে বড় স্ট্রাকচারগুলো বানানো হচ্ছে, সেগুলোর প্রতিকৃতি খুবই রেয়ার। এই ফর্মগুলো এখন তৈরিই হয় না, বিলুপ্ত হয়ে গেছে। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের সংগ্রহে থাকা প্রায় ৮০ বছরের ছবির ক্যাটালগ থেকে নিয়ে এবার এগুলো করা হয়েছে।
আরও পড়তে পারেন: শুভ বাংলা নববর্ষ
চারুকলার সাবেক এবং বর্তমান শিক্ষার্থী শিক্ষকদের গত প্রায় দেড় মাসের পরিশ্রমের ফসল হচ্ছে পহেলা বৈশাখের এই মঙ্গল শোভাযাত্রা। তবে এরইমধ্যে সব কাজ শেষ হয়েছে, আর গত প্রায় এক সপ্তাহ সারারাত কাজ হয়েছে এখানে। আজও সারা রাত কাজ হবে, তুলির শেষ আঁচড় ছোঁয়ানো হবে প্রতিটি ভাস্কযে, জানালেন শিক্ষার্থীরা।
মুখোশের দায়িত্বপ্রাপ্ত সুবর্ণা মোর্শেদা বলেন, এবার সরকার থেকে একটা নিষেধাজ্ঞা রয়েছে মুখোশের বিষয়ে। তবে একটা বিষয় পরিষ্কার যে, মঙ্গলশোভা যাত্রার র্যালিতে হাতে যেসব মুখোশ বহন করা হবে সেসব মুখোশের ব্যাপারে কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই, কেবল মুখে যেন কোনও মুখোশ কেউ না পরে সেটাই বলা হয়েছে সরকার থেকে। আর মঙ্গলশোভা যাত্রায় আমাদের কোনও শিক্ষক-শিক্ষার্থী কখনও মুখে কোনও মুখোশ পরে না, সবাই হাতে হাতে মুখোশ বহন করে।
আরও পড়তে পারেন- বর্ষবরণে যৌন নিপীড়ন: অস্পষ্টতায় ঘিরে আছে মামলার তদন্ত
সুবর্ণা মোর্শেদ বলেন, র্যালিতে নেওয়ার জন্য এবার সবচেয়ে বড় মুখোশ দুটি হলো রাজা-রানী। এছাড়া রয়েছে পেঁচা, বাঘ, টেপা পুতুল রয়েছে। মোট কথা হলো- লোকজ বিষয়গুলোকেই আমরা প্রাধান্য দেই সবসময়। পেঁচাকে লক্ষ্মীর প্রতীক হিসেবে ধরা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা চাই সকল অশুভ শক্তি দূর হয়ে গিয়ে এবারের নতুন বছর যেন শুরু হয় লক্ষ্মী দিয়ে। আর বাঘতো বাঙালির গর্বের একটা জায়গা, তাই র্যালিতে রাখা হয়েছে বাঘ, বাকি মুখোশগুলোও করা হয়েছে বাঙালির ঐতিহ্যের সঙ্গে মিল রেখে। মা ও শিশু, গরু, হরিণ, পঙ্খীরাজের মতো একটা নৌকা, হাতির পিঠে মানুষ, পাখিসহ রয়েছে নয়টি বড় ভাস্কর্য হিসেবে।
এবার এই মঙ্গলশোভা যাত্রার আয়োজনে রয়েছে চারুকলার ১৭তম ব্যাচ।
শিক্ষক শির্ক্ষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ১৯৮৯ সালে প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউিটের উদ্যোগে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয়। সে বছরই লোকজনরে দৃষ্টি আর্কষণ করতে সক্ষম হয়।
জানা গেল, তখন এই শোভাযাত্রার নাম ছিল বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা। পরে ১৯৯৬ সালে এসে মঙ্গল শোভাযাত্রা নাম ধারণ করে। যদিও অনেকে বলে থাকেন, ১৯৮৬ সালে চারুপীঠ নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে যশোরে প্রথমবারের মতো নবর্বষ উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রার আয়োজন করেন মাহবুব জামাল শামীম। তবে এর সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেন ইমরান হোসেন। তিনি বলেন, এটা নিয়ে নানা সময়ে আমরা নানা কথা শুনেছি। তবে বলতে চাই, কেউ কাউকে দেখে শুরু করেননি। সমসাময়িক মানুষের ভেতরে একই ভাবনা এসেছে। একটা ঢাকার বাইরে আরেকটা ঢাকার ভেতরে। এটা কপি না বা ওনাকে দেখে করা না, শামীম ভাই কিংবা ঢাকায় যারা শুরু করেন তারা একই ভাবনার মানুষ, ওই জায়গা থেকেই শুরু। ওটা আগে হয়েছে না এটা আগে হয়েছে, এটা নিয়ে বির্তকের কোনও অবকাশ নেই।
/জেএ/এজে/বিটি /এপিএইচ/