এর আগে সপ্তাহজুড়ে নতুন বছর বরণের উৎসাহ উদ্দীপনা এবং বাঙালি সংস্কৃতি ধারণে মানুষের আগ্রহ নষ্ট করতে ভয় দেখানোর জন্য একের পর এক ‘ফতোয়া’ দিয়েছে হেফাজতে ইসলামসহ ইসলামী দলগুলো। সর্বশেষ জীবজন্তুর মূর্তি নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা, মুখে উল্কি আঁকা এবং নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ ইসলাম সম্মত নয় ও বিজাতীয় সংস্কৃতি বলে বিবৃতি দেওয়ার পাশাপাশি প্রচার চালানো হয় ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও।
ভোর সাড়ে ৬টায় রমনা বটমূলে ছিলো ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। ভোর থেকেই হেঁটে হেঁটে রমনা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে সববয়সী নারীরা। তাদের চোখে মুখে ভয়ের লেশমাত্র ছিল না। এমনকি অংশ নেওয়া অনেকেই বলছেন, এ ধরনের ভয়ভীতির পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইলে সবার আরও বেশি করে বাইরে আসা জরুরি।
আর নারীনেত্রী ও অ্যাক্টিভিস্টরা বলছেন, বাঙালি সংস্কৃতি সম্পর্কে বিন্দুমাত্র জ্ঞান থাকলে এ ধরনের ‘ফতোয়াবাজি’ করার কথা ভাবতো না এসব সংগঠন। এরা কেবল ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করতে চায়। মানুষ সাংস্কৃতিকভাবে শক্তিশালী হলে তাদের কুসংস্কারগুলো শুনবে না, সেটা তারা জানেন এবং জানেন বলেই ভয় তৈরি করতে চান।
হেফাজতে ইসলাম তাদের দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেছে, মঙ্গল শোভাযাত্রা ঈমান-আকিদা ও ইসলামী আদর্শের ঘোরতর বিরোধী। বর্ষবরণের নামে মূলত মুসলমনাদের ঈমান-আকিদাবিরোধী ভিনদেশি হিন্দুত্ববাদি সাংস্কৃতির প্রসার ঘটানোর চেষ্টা চলছে।
আরও পড়ুন: বর্ষবরণে কদর কমেছে পান্তা- ইলিশের
চারুকলা বিভাগের আয়োজনের অন্যতম শিক্ষক নেসার আহমেদ বলেন, মঙ্গল শোভাযাত্রা কোনও নির্দিষ্ট ধর্মের হাত ধরে শুরু হয়নি। আমরা সামাজিক রাজনৈতিক যেসব বিষয়কে প্রতিরোধ করা জরুরি মনে করি, সেসব থিম ধরে মঙ্গল কামনায় এই র্যালি করে থাকি। এটাকে ভুল ব্যাখ্যা করার কোনও সুযোগ নেই।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া নারীরা নেচে আনন্দে রঙ মেখে বছরের শুরুর দিন উৎযাপন করেন। অংশ নেওয়া শেহরিন জামান বলেন, হেফাজত বা ইসলামী দলগুলো যে কথা বলার চেষ্টা করছে, সেটা নারীদের দমিয়ে রাখার অপচেষ্টা। আমরা কারো প্রয়োজনে বাইরে বের হই না, নিজের জন্যই বের হই। এটা যত তাড়াতাড়ি মেনে নেবে ততই তাদের জন্য মঙ্গল।
তিনি বলেন, আগে আমি মঙ্গল শোভাযাত্রায় না এসে একটু দেরি করে বের হতাম। কিন্তু এবার প্রতিবাদের অংশ হিসেবে এই শোভাযাত্রায় এসেছি।
নারীনেত্রী ও মানবাধিকার কর্মী খুশী কবীর বলেন, এসব হুমকি দিয়ে কখনোই নারীদের ঘরে আটকে রাখা যায়নি। যে কোনও আন্দোলনে এখন পর্যন্ত বাংলার নারীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। ভয়ের সংস্কৃতির মধ্যে ঢুকাতে ইসলামী দলগুলোর দেওয়া এসব হুমকি ধামকিতে সচেতন মানুষ কান দেয় না, এটা ঐতিহাসিক সত্য।
উন্নয়নকর্মী চিররঞ্জন সরকার মনে করেন, মৌলবাদী নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বৈশাখী উৎসবে নারীর ব্যাপক অংশগ্রহণ যেন সমাজে নতুন বার্তা। যুক্তিহীন নিষেধাজ্ঞা কোনও কালেই কেউ মানেনি।
তিনি বলেন, এবার পহেলা বৈশাখের উৎসব উদযাপনের ক্ষেত্রেও তাইই দেখা গেল। গতবছর এই দিনটিতে নারীর ওপর বেপরোয়া হামলা হয়েছে। হামলাকারীরা চিহ্নিতও হয়নি, ধরাও পড়েনি। সেই নপুংসকেরা হয়তো ভেবেছিল, এরপর নারীরা আর ঘরের বাইরে বের হবে না। সবাই ভয়ে ঘরে বসে থাকবে। পুরুষতন্ত্র ও ধর্মব্যবসায়ীদের আকাঙ্ক্ষাও কিন্তু তাই। কিন্তু তাদের বাড়া ভাতে ছাই পড়েছে। মেয়েরা ঠিকই উৎসবে অংশ নিয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘লাভিং পিপল’
/এজে/