পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা জানিয়েছেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী যেসব পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনের নিজস্ব ট্রাক টার্মিনাল রয়েছে, সেগুলোতে পণ্যবাহী ট্রাক টার্মিনাল টোল দিয়ে থাকে। যেখানে টার্মিনাল নেই সেখানে টোলের নামে চাঁদা তোলা অবৈধ। কিন্তু বেশ কিছু পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনে এ নির্দেশনা মানা হচ্ছে না। বাঁশকল ও টোলঘর বসিয়ে প্রকাশ্যে চাঁদা তোলা হচ্ছে।
এসব টোলঘর ও বাঁশকল থেকে ট্রাকপ্রতি চাঁদা নেওয়া হচ্ছে- নরসিংদীর মাধবদীতে ৫০ টাকা, রংপুর বাইপাসে ৫০ টাকা, ঝিনাইদহ পুলিশ লাইনের কাছে ৩০ টাকা, বাগেরহাট বড় বাজারের সামনে ৬০ টাকা, মাদারীপুর শহরের প্রবেশ পথে ৮০ টাকা, মাদারীপুরের রাজৈর পৌরসভার নামে টেকেরহাটে ৬০ টাকা, গোপালগঞ্জ পুলিশ লাইনের পাশে রাস্তার ওপর টোলঘর বসিয়ে ৫০ টাকা ও যশোরে ২০ টাকা।
গত ১৩ মার্চ সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত ‘সড়ক পরিবহন খাতের বিদ্যমান সমস্যা নিয়ে পর্যালোচনা সভায় নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজির এ চিত্র তুলে ধরে বলেন, যেসব গাড়ি টার্মিনাল ব্যবহার করে না সেগুলো টোল দেবে কেন? তিনি বলেন, বিভিন্ন স্থানে গাড়ি থামিয়ে চাঁদা তোলা হচ্ছে, পুলিশকে বললাম, কিছু হচ্ছে না।
আরও পড়ুন:
সভায় উপস্থিত পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, রাস্তা থেকে যাতে চাঁদা তোলা না হয় সে জন্য পৌরসভাগুলোকে আমরা লিখিতভাবে পত্র দিয়েছি।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, চাঁদাবাজি যদি কেউ পলিটিক্যালি করে তাকেও ধরে পেটাবেন।
শ্রমিক নেতারা বলেছেন, মন্ত্রণালয়ের ওই সভার পর কয়েকদিন গোপনে চাঁদাবাজি হয়। এরপর আবারও চাঁদাবাজরা প্রকাশ্যে চলে এসেছেন। এসব স্থান দিয়ে ট্রাক যতবার অতিক্রম করে ততবারই চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা না দিলে কখনও ট্রাক আটকে রাখা হয়, কখনও চালক-শ্রমিকদের মারধর করা হয়।
জানা গেছে, পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের অভিযোগের পর স্থানীয় সরকার বিভাগ গত ৩ ডিসেম্বর বিভিন্ন সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বরাবর পত্র জারি করে। মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সরোজ কুমার নাথ স্বাক্ষরিত ওই পত্রে বলা হয়, কোনও কোনও সিটি করপোরেশন/পৌরসভা কর্তৃক স্ব স্ব এলাকায় বিভিন্ন মহাসড়কে বাস/ট্রাক টার্মিনালের বাইরে বক্স বসিয়ে এবং বিভিন্ন কৌশলে টোল/ট্যাক্স আদায় করা হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ অবৈধ। এভাবে হয়রানি করা থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
অভিযোগ উঠেছে, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের পরও পৌরসভাগুলো টোলের নামে চাঁদাবাজি বন্ধ করেনি। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সহসভাপতি আবদুর রহিম বক্স দুদু পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কাগজে-কলমে চাঁদাবাজি বন্ধ হয়েছে। তবে বাস্তবে হয়নি। এখনও আমরা বিভিন্ন এলাকা থেকে চাঁদাবাজির খবর পাচ্ছি। চাঁদাবাজির মাধ্যমে যেহেতু কাঁচা টাকা পাওয়া যায়, সেহেতু একবার এটা চালু হলে সহজে বন্ধ হতে চায় না। তিনি বলেন, বিষয়টা আমরা আবারও মন্ত্রণালয়কে জানাব।
আরও পড়ুন:
ওএফ/এমএসএম/আপ-এজে