বিমানবন্দর সূত্র জানায়, সপ্তাহে দুই সপ্তাহে ৪৪২ কার্টন চুরির ঘটনায় আমদানিকারকরা লিখিত অভিযোগ করেছেন কাস্টম ও বিমানের কাছে। কার্গো ভিলেজে পণ্য চুরি হয় রাতে, যখন আমদানি করা পণ্য সরবরাহ কার্যক্রম বন্ধ থাকে। এছাড়া, দিনের বেলায় ছোটছোট আকৃতির কার্টন চুরি হয়। একাধিবার বিভিন্ন ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়াডিং (সিঅ্যান্ডএফ) এজন্টেসহ আমদানিকারকরা এয়ারফ্রেইট ইউনিটে কাস্টম কর্মকর্তাদের কাছে পণ্যচুরির বিষয় নিয়ে বৈঠকও করেছেন। গত ১৩ এপ্রিল চুরি নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বিমান, কাস্টম হাউজ, সিঅ্যান্ডএফ, ফ্রেইট ফরোর্য়াড প্রতিনিধিদের। ওই বৈঠকে বিমানের কার্গো মহাব্যবস্থাপক উপস্থিতি থাকলেও ব্যবসায়ীদের চুরি বন্ধে কোনও জবাব দিতে পারননি।
আরও পড়তে পারেন:
জানা গেছে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এককভাবে দুই ধরনের হ্যান্ডেলিং করে। গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের আওতায় বিভিন্ন এয়ারলাইনস ও যাত্রীদের লাগেজসহ বিভিন্ন সেবা দেওয়া হয়। কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের আওতায় ব্যবসায়ীদের আমদানি-রফতানিতে সেবা দেওয়া হয়। বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে আসা পণ্য কার্গো ভিলেজে প্রথম পাঁচদিন কেজি প্রতি ৩টা ৫০ পয়সা গুদাম ভাড়া দিতে হয় বিমানকে। পরবর্তী ১০ দিন ৫০ কেজি ইউনিট ধরে প্রতি ইউনিটের জন্য ৫০ টাকা করে ভাড়া দিতে হয়।
কাস্টম হাউজ সূত্র জানায়, প্রায় প্রতিদিনই চুরির অভিযোগ নিয়ে কাস্টম কর্মকর্তাদের কাছে আসেন ব্যবসায়ীরা। অনেক সময় ব্যবসায়ীর সঙ্গে শুল্ক কর্মকর্তাদের বাকবিতণ্ডা হচ্ছে। গুদামের ভাড়া, শুল্ক পরিশোধ করেও পণ্য না পাওয়ার ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের চাপে পড়ে একজন সহকারী কমিশনার গত ১৮ এপ্রিল ঢাকা কাস্টম হাউজের কমিশনারের কাছে চুরি রোধে সমন্বয় সভার আহবানের অনুরোধ করেন। সেই চিঠিতে বলা হয়, শুল্ক, এয়ার ফ্রেইট, গুদাম ভাড়া দিয়েও পণ্য বুঝে না পেয়ে শাহজালাল বিমানবন্দর ব্যবহার করে আমদানির আগ্রহ হারাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সিঅ্যান্ডএফ এজন্টে, বিজিএমইএ, বিমান, আমদানিকারকদের সঙ্গে সমন্বয় সভা করতে অনুরোধ জানান সহকারী কমিশনার।
আরও পড়তে পারেন:
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত ১৩ মার্চ এসকেএফ বাংলাদেশ লিমিটেড নামের একটি ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন তাদের পণ্য চুরির ঘটনায় নিয়ে। অভিযোগপত্রে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে উল্লেখ করা হয়, ৭৬ হাজার ৯৫০ ডলার মূল্যের ওষুধ উৎপাদনে জন্য আমদানি করা কাঁচামাল গত ১৫ জানুয়ারি বিমানের কার্গো শাখায় আসে। ২০ জানুয়ারি কাঁচামাল ডেলিভারি নিতে গেলে, দিতে পারেননি বিমানের কার্গো শাখার কর্তব্যরত কর্মকর্তা। ওইদিনই বিমানের কার্গো ব্যবস্থাপককে পণ্য সরবরাহ দিতে আবেদনে করে প্রতিষ্ঠনটির সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট। এ আবেদনের পরও কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় পুনরায় ২৫ জানুয়ারি বিমানের কার্গোকে অভিযোগ করা হয়। এরপরও পণ্য বুঝে না পেয়ে প্রতিষ্ঠানটি ৪ ফেব্রুয়ারি বিমানের মহাব্যবস্থাপকের কাছে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দেয় এসকেএফ। এরপর বিমানের কাছ থেকে পণ্য বুঝে না পেয়ে গত ১৩ মার্চ এসকেএফ বাংলাদেশের নির্বাহী আইন কর্মকর্তা বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এসকেএফ বাংলাদেশের আবদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকে ১৫ দিনের মধ্যে পণ্য ফেরতের ব্যবস্থা নিতে বলা হলেও কোনও সমাধান পায়নি প্রতিষ্ঠানটি।
এ প্রসঙ্গে এসকেএফ বাংলাদেশের নির্বাহী আইন (কর্মকর্তা) মো. মাজহারুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, একাধিকবার বিমানকে চিঠি দিয়ে কোনও সহযোগিতা না পেয়ে অভিযোগ জানিয়ে সচিবকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত বিমান পণ্য বুঝিয়ে দিতে পারেনি। আমরা এখন আইন অনুয়ায়ী মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। কাঁচামাল না পাওয়ায় ওষুধ উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। এতে আমাদের বড় ধরনের ক্ষতির মূখে পড়তে হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ধর্মঘটসহ আন্দোলনের কথা ভাবছি। এছাড়া আর উপায় নেই।
কার্গো ভিলেজ থেকে মালামাল চুরি হওয়া প্রসঙ্গে ঢাকা কাস্টম অ্যাসোসিয়েশনের বন্দর সম্পাদক মো. আলমগীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, অসহনীয় মাত্রায় চুরির ঘটনা বাড়ছে। বিমানকে চিঠি দিয়েও কোনও কাজ হচ্ছে না। বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার বৈঠক করেও সমাধান হয়নি। গুদামভাড়া, শুল্ক পরিশোধ করেও পণ্যের নিরাপত্তা পাওয়া যাচ্ছে। এভাবে ব্যবসা পরিচালনা সম্ভব নয়।
আরও পড়তে পারেন:
টেলিফোনে এ বিষয়ে জানতে বুধবার বিকেলে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএম আসাদুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমি এখন একটি মিটিংয়ে আছি। আমাকে কাল সকালে (বৃহস্পতিবার) ফোন করুন, অথবা জনসংযোগ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলুন। তবে, বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন করলেও ফোন রিসিভ করেননি বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এম আসাদুজ্জামান।
অন্যদিকে, বিমানের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) খান মোশাররফ হোসেনকে ফোন করলে তিনিও মিটিংয়ে আছেন বলে জানান। তিনি বলেন, এ বিষয়ে জানতে এমডি (ব্যবস্থাপনা পরিচালক) স্যারের সঙ্গে কথা বলুন।
বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ১৫ দিনের মধ্যে এসকেএফ বাংলাদেশের চুরি যাওয়া পণ্য ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়ের চিঠির সত্যতা নিশ্চিত করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব (বিমান ও সিএ উইং) মো. জিয়াউল হক। তিনি বলেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার হওয়ায় আগের মতো চুরির ঘটনা ঘটে না। চুরি নিয়ে আমাদের কাছে তেমন কোনও অভিযোগ আসেনি। এসকেএফ বাংলাদেশের আবেদনে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ১৫ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা কাস্টম হাউজের কমিশনার লুৎফর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের কাছেও ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করছেন। একটি সংরক্ষিত এলাকা থেকে চুরি গ্রহণযোগ্য নয়। দেশের আমদানি-রফতানি প্রক্রিয়া যেন ব্যাহত না হয়, সেজন্য আমরা উদ্যোগ নিচ্ছি। তবে, মালামালের নিরাপত্তা দেওয়ার পুরো দায়িত্ব বিমানের।
/এমএনএইচ/