‘রানা প্লাজার শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দরকার’

আলোকচিত্র প্রদর্শণীরানাপ্লাজা ধসের ঘটনায় ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে  প্রতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া দরকার বলে মনে করছেন শ্রমিক নেতা ও এ খাতের বিশ্লেষকরা। তারা মনে করেন, রাষ্ট্রের দায়িত্ব এড়ানোর সুযোগ নেই। কেননা বেসরকারিভাবে যতই দায়িত্ব নেওয়া হোক রাষ্ট্র যতক্ষণ দায়িত্ব না নেবে, ততক্ষণ সেটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাবে না। রানাপ্লাজা ধসের ঘটনায়  আহতদের পুনর্বাসন ও তাদের ফিরে পাওয়া জীবন নিয়ে শনিবার ব্র্যাক আয়োজিত আলোচনা সভায় তারা এসব কথা বলেন।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, একেকটি ঘটনায় আলাদা আলাদাভাবে ক্ষতিপূরণের জন্য দাবি জানানো এবং সেটা নিশ্চিত করা কঠিন। আর এর ফলে বড় অঙ্কের নিহতের ঘটনা না ঘটলে শ্রমিক ন্যায্য হিস্যা পায় না। কর্মক্ষেত্রে নিহত আহতদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি সমাধান হওয়া জরুরি।
আলোচনাকালে রানাপ্লাজা ক্লেইমস অ্যাডমিস্ট্রেশনের নির্বাহী কমিশনার মোজতবা কাজাজি বলেন, ক্ষতিপূরণের সবচেয়ে বড় সমস্যা দুর্ঘটনার পর শ্রমিকদের তালিকা না পাওয়া।  বাংলাদেশের পরিস্থিতি অনেক শ্রমিকের বদলি শ্রমিক কাজ করে তারা অর্থ পাবে কিনা এ ধরনের ছোট-ছোট সমস্যা আছে। তাজরীন ও রানাপ্লাজার ঘটনায় কাজ করতে গিয়ে দেখা গেছে, অনেকের কোন বেতন স্লিপই নেই। এজন্য একটা ন্যাশনাল সিস্টেম দরকার, যেখানে শ্রমিকের তালিকা, তার কাজের বিষয়ে উল্লেখ থাকবে। শ্রমিক জানবেন, তার ক্ষতিপূরণের জন্য কোথায় যেতে হবে। তিনি বলেন, শ্রম আইনে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ যা দেওয়া, আছে তা অবিলম্বে পরিবর্তন হওয়া জরুরি।

আরও পড়তে পারেন: 111 নিরাপত্তা প্রশ্নে শ্রমিকদের কথা শোনা জরুরি: বার্নিকাট

এ কথার রেশ ধরেই আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার গার্মেন্ট প্রজেক্টের ব্যবস্থাপক টুওমো পোটিয়ানেন বলেন, আমাদের উচিত হবে, একটা বিমার ব্যবস্থা করে দেওয়া। যেন কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলেই তাকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টি সেখান থেকেই নির্ধারিত হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, আইন সংশোধন হওয়া যেমন জরুরি, আইনটি শ্রমিক মালিকসহ সংশ্লিষ্টরা যেন জানেন সে ব্যবস্থা করাও জরুরি।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের সহকারী নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, কেন জানি মনে হয় রাষ্ট্র যত কম দায়িত্ব নিয়ে এবং যত দ্রুত রানাপ্লাজার বিষয়টি ভুলিয়ে দেওয়া যায় সে চেষ্টায় আছে। ভুলে গেলে চলবে না, রাষ্ট্রের দায়িত্ব আছে এবং বেসরকারি হাজারও প্রচেষ্টা কাজে লাগবে না, যদি রাষ্ট্র তার দায়িত্বের জায়গায় না থাকে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রানাপ্লাজায় আহতদের মধ্যে যাদের ব্র্যাক সহায়তা করেছেন, তাদের অনেকেই। নিহত শ্রমিকের স্ত্রী পারভিন জানান, কিভাবে তিনি গত তিনবছরে তার দুই সন্তান ও শাশুড়ির সংসার পরিচালনা করছেন। তাকে বেসরকারিভাবে যেসব সহায়তা করা হয়েছে, সেগুলো কতটা কাজে লেগেছে। আহত শ্রমিক নাসিমা জানান, কোমরের কারণে এখনও তিনি দীর্ঘক্ষণ বসে থাকতে পারেন না। ফলে ব্র্যাকের সহায়তায় যে দোকান তিনি পেয়েছেন, সেটাও তিনি আরেকজনকে দিয়ে চালান।

আলোকচিত্র প্রদর্শনী

স্পেক্ট্রা কনভেনশন সেন্টারে ব্রাকের আয়োজনে ছিলো রানাপ্লাজা ধসের আলোকচিত্র প্রদর্শনী। আলোকচিত্রি আবীর আবদুল্লাহ, নাসিরুল ইসলাম ও খোরশেদ আলম রিঙ্কুসহ অন্য শিল্পীদের তোলা ছবির প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাট। 

আলোকচিত্র প্রদর্শনী

এ সময় তিনি ছবিগুলো দেখেন এবং রানাপ্লাজায় ধ্বংসস্তূপ থেকে বেঁচে আসা শ্রমিকদের খোঁজখবর নেন। ব্র্যাকের পক্ষ থেকে আয়োজনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়, দেশের শ্রমিকদের জন্য সঠিক ক্ষতিপূরণের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সাভার ট্র্যাজেডি থেকে শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতার আলোকে নগরজীবনের দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্ষমতা তৈরি তাদের লক্ষ্য।

 

আলোকচিত্র প্রদর্শনী ২

 

 

 আর এটা নিয়ে কাজ করতে গিয়ে তারা যে চ্যালেঞ্জগুলোর সম্মুখীন হয়েছেন, সেগুলো অন্যদের সঙ্গে যাচাই-বাছাইও করা হয় সেশনগুলোয়।

 

/ইউআই/এমএনএইচ/