খুনিদের ব্যাগে ‘অপরিচিত’ আগ্নেয়াস্ত্র!

জুলহাজ ও তনয়রাজধানীর কলাবাগানে ৩৫ নম্বর বাসার ভেতরে দুইজনকে কুপিয়ে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের সঙ্গে দুর্বৃত্তদের ধস্তাধস্তির সময় কলাবাগান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শামীম আহমেদ যে ব্যাগ উদ্ধার করেছেন, তার ভেতরে একটি ‘অপরিচিত’ আগ্নেয়াস্ত্র মিলেছে। আগ্নেয়াস্ত্রের নাম পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেনি।
সোমবার সন্ধ্যার আগে কলাবাগান থানার উত্তর ধানমন্ডির তেতুলতলা গলির ৩৫ নম্বর বাসায় জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব তনয়কে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এরপর তারা লেক সার্কাসের ডলফিন গলি হয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় টহল পুলিশের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তি ও গুলিবিনিময় হয়। এ সময় দুর্বৃত্তদের চাপাতির আঘাতে আহত হন কলাবাগান থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মমতাজ হোসেন। দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের এসআই শামীম আহমেদ একজনের কাছ থেকে একটি ব্যাগ ছিনিয়ে রাখেন। এ ঘটনায় অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করেছে পুলিশ। ওই মামলায় ব্যাগের ভেতরে থাকা আলামতের বিষয়ে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে ব্যাগের ভেতরে নয় ধরনের আলামত পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন: অবিশ্বাস্য কল্পকাহিনী রচনা করা আওয়ামী লীগের স্বভাবধর্ম
মামলার বাদী কলাবাগান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শামীম আহমেদ। যিনি নিজেই ওই ব্যাগটি ছিনিয়ে নিয়েছিলেন। মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ব্যাগের ভেতর থেকে একটি লোহার তৈরি পিস্তল, যার ফায়ারিং পিন হতে ব্যারেলের মাথা পর্যন্ত লম্বা আনুমানিক সাত ইঞ্চি। একটি লোহার তৈরি ম্যাগজিন, যার গায়ে ইংরেজিতে অস্পষ্ট লেখা রয়েছে। ম্যাগজিনের ভেতরে তিন রাউন্ড গুলি।

এরপর এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, একটি গণনাকৃত আগ্নেয়াস্ত্র যা দুটি অংশে বিভক্ত বা সম্মুখ অংশে ব্যারেলের মত দুটি ছিদ্র এবং পেছনে হাতলের অংশে দুটি পিনের সঙ্গে চাবির রিংয়ের মতো, চাবির রিং স্প্রিংয়ের মতো ওঠানামা করে। ব্যারেলের ছিদ্র দুটি দুই রাউন্ড গুলিভর্তি, আগ্নেয়াস্ত্রটি লম্বা আনুমানিক সোয়া ছয় ইঞ্চি, দুই রাউন্ড গুলির প্রতিটির পেছনে কেএফ ৭.৬৫ ইংরেজিতে লেখা রয়েছে। তবে এই অস্ত্রের কোনও নাম জানাতে পারেনি পুলিশ।

এছাড়া ব্যাগের ভেতর থেকে একটি লোহার তৈরি চাপাতি, যার দৈর্ঘ্য তের ইঞ্চি, চাপাতির বাটে চিকন সুতলি দ্বারা মোড়ানো। একটি পুরনো লাল গামছা, যা লম্বায় পাঁচফুট। একটি সাদা নীল ও অ্যাস রংয়ের পুরনো লুঙ্গি। একটি ঘিয়া রঙ্গের পি-ক্যাপ। একটি কালো প্রেসিডেন্ট ব্র্যান্ডের ব্যাগ এবং একটি সাদা কাগজে আরবি ও বাংলা লেখা রয়েছে।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ডলফিন গলির ৬০ নম্বর বাসার সামনে জনৈক রাশেদ মোশারফের বাসার সামনে আনুমানিক পৌনে ৬টার দিকে পাঁচ-ছয়জন ব্যক্তি দ্রুত গতিতে আসতেছিল। যাদের প্রত্যেকের কাঁধে ছিল ব্যাগ। তাদের বয়স ২০ থেকে ২৫ বছর। প্রত্যেকের একই রঙ্গের টি-শার্ট পড়া ছিল। তাদের দেখে সন্দেহ হলে দ্রুত গাড়ি থামাই। গাড়ি থেকে নেমেই দুষ্কৃতকারীদের থামতে বলে সঙ্গীয় অফিসার ও ফোর্সদের ধরতে বলি। সঙ্গীয় অফিসার এএসআই মমতাজ উদ্দিন দ্রুত দুষ্কৃতকারী একজনকে জাপটে ধরেন। তখন অপর একজন দুষ্কৃতকারী আটক দুষ্কৃতকারীকে উদ্ধার করতে ব্যাগ থেকে চাপাতি বের করে মমতাজকে কোপ মারে। চাপাতির কোপটি তার কপালে লাগে। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

দুষ্কৃতকারীরা তাকে পুনরায় কোপাতে গেলে আমি তাদের আমার পিস্তল দিয়ে গুলি করি। কনস্টেবল নুরুল ইসলামও এক রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছোড়েন। আমরা গুলি করার পর দুষ্কৃতকারীদের মধ্যে একজন আমাকে গুলি করে পালানোর চেষ্টা করে। আমি তাকে পেছন দিক থেকে ধরার চেষ্টা করি। এ সময় তার ব্যাগটি আমি কেড়ে নিতে সক্ষম হই। তারা দৌড়ে জনগণের মধ্যে মিশে যায়।

এসএম তানভীর ও মো. আমিনুল ইসলাম নামে দুই ব্যক্তির উপস্থিতিতে ব্যাগটি হেফাজতে নিই। সাক্ষীদের সামনেই ব্যাগটি তল্লাশি করে জব্দ তালিকায় সাক্ষীদের স্বাক্ষর গ্রহণ করি।

আরও পড়ুন: জুলহাজ-তনয় হত্যার দায় স্বীকার আল কায়েদার

/এআরআর/এজে/