অভিবাসীরা ব্রিটিশ ট্যাক্স-পেয়ারদের ওপর বোঝা স্বরূপ, এমন সস্তা আর মেধাহীন ধারণাকে নাকচ করে দিয়ে তাদের বক্তব্য; বরং অভিবাসীরাই ব্রিটিশ অর্থনীতিতে ইতিবাচক অবদান রাখছে, এরাই হলো বৃহৎ জনগোষ্ঠীর ক্ষুদ্র স্বপ্রণোদিত অংশ।
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ড. রমী রাঙ্গুন সিবিই মনে করেন, ব্রিটেনের শক্তির মূল অংশটিই লুকিয়ে আছে ইইউ’র মাঝে। সংকীর্ণ মানসিকতা নিয়ে যারা ব্রিটেনের বেরিয়ে আসাকে সমর্থন করছেন, তাদের চিন্তা কেন্দ্রীভূত হয়ে আছে কেবল একটিমাত্র বিষয়ে- সেটি হলো ইমিগ্রেশন।
তাদের উদ্দেশ্যে রাঙ্গুন বলেন, এদেশের আজকের যে সমৃদ্ধি তা সম্ভব হয়েছে শুধু অভিবাসীদের কল্যাণে। মনে রাখতে হবে, ক্রম-হ্রাসমান জন্মহার আর জনসংখ্যার বড় একটা অংশের বয়ঃবৃদ্ধি অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে এক প্রতিবন্ধকতা ব্রিটেনের জন্য।
আরেক অর্থ-লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী মিহির কাবাডিয়া বলেন যে, নিজস্ব আর্থ-সামাজিক অবস্থান বিচার করে ব্রিটেনের পক্ষে বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে সমানতালে পা ফেলা খুব কঠিন হয়ে যাবে। আর তাই তিনি ব্রিটেনের ইইউতে থাকার বিষয়ে মত দেন। তিনি আরও বলেন, বেনিফিট ব্যবস্থার অপব্যবহার বন্ধের জন্য সমস্যা মেনে নিয়ে তা’ সমাধানের চেষ্টা করতে হবে, ইমিগ্রেশন বা ইইউ সদস্যপদকে দোষ দিয়ে লাভ নেই।
বাণিজ্য প্রধান দেশ হওয়ায় সারা পৃথিবীর সঙ্গেই ব্রিটেনের রয়েছে ভলো বাণিজ্য সম্পর্ক। অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজনেই তাকে সবার সঙ্গে এ সম্পর্ক বজায় রাখতেও হবে। ইইউ প্রদত্ত সুযোগ ব্যবহার করে দেশটি গোটা ইউরোপের সমৃদ্ধশালী বাজারে সহজে প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছে। ভবিষ্যত পরিকল্পনায় এ বাণিজ্যবান্ধব পরিস্থিতি ব্রিটেনের অন্য অনেক বিচার্য বিষয়ের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অপর বিচারে, অর্থনৈতিকভাবে গোটা বিশ্ব এখন একক রাষ্ট্র ব্যবস্থার গণ্ডি পেরিয়ে বৃহত্তর একক বাজার ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে গেছে। এমন অবস্থায় ইইউ থেকে হঠাৎ বেরিয়ে এসে ব্রিটেন একা একা যুক্তরাষ্ট্র, চীন আর ভারতের মতো শক্তিশালী দেশগুলোর সাথে ইঁদুর দৌড়ে কতটা টিকে থাকবে তাও ভাবার বিষয়। আবার নিজের কলোনি রাষ্ট্রগুলোর কাছে দেশটির ভূমিকা ইউরোপ বাজারে প্রবেশের গেটওয়ে হিসেবে। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই দেশগুলো যে তাদের তরি অন্য ঘাটে ভিড়াবে না, তারও কোনও নিশ্চয়তা নেই।
ব্রিক্সিট একটি অনুমান নির্ভর ধারণা মাত্র, কোনও নিরীক্ষালব্ধ বিষয় নয়। এমন অপরীক্ষিত বিষয়ের অনাকাঙ্ক্ষিত, অথচ অনিবার্য ধারাবাহিকতা নিয়ে তেমন কোনও যৌক্তিক কিংবা বাস্তবিক উপলব্ধি কারোর-ই নাই। এমনও হতে পারে যে, এটি অস্থিতিশীল পরিবেশকে আরও অনিশ্চয়তার মুখে ফেলে দেবে, নয়তো বিপরীত কিছু ঘটবে।
ব্রিটেনবাসীকে তাই এখন বেশ বুঝে-শুনেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আবেগ বা একরোখা বিচারে অবশ্যই তা’ নয়। আজ তারা ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ যে মতই প্রকাশ করুক না কেন, মাস ছয়েক পর তাদের বড় একটা অংশ হয়ত সেটাকে ভুল সিদ্ধান্ত ছিল বলে মনে করবেন!
লেখক: যুক্তরাজ্য প্রবাসী, ব্যাংকিং পেশাজীবী
morshed.akhtar@yahoo.co.uk