যে কারণে রমজানে ফজরের নামাজ আগে হয়

ফজরের আযান

সাধারণ সময়ে পূর্ব আকাশে আলো সামান্য ছড়িয়ে পড়লেই বাংলাদেশের মসজিদগুলোয় ফজরের নামাজ আদায় করেন মুসলমান ধর্মাবলম্বীরা।হানাফী মাজহাবে এই সময়ে নামাজ আদায়কে ‘মুস্তাহাব’ হিসেবে বিবেচনা করা হলেও অন্যান্য তিন মাজহাবের ইমামগণ আওয়াল ওয়াক্ত বা প্রারম্ভকালীন সময়েই নামাজ আদায়ের পক্ষে জোর দিয়েছেন। তবে শুধুমাত্র পবিত্র রমজান মাসে ফজরের নামাজের সময় ‘আউয়াল ওয়াক্তকে’ই বেছে নেওয়া হয় বাংলাদেশে। সেক্ষেত্রে সুবহে সাদিকের সময় হলেই আজানের পর ফজরের নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা।

অভিজ্ঞ আলেমরা বলছেন, রমজান মাসে রোজা আদায় করতে গিয়ে স্বাভাবিকভাবেই সেহেরি খেতে হয়। এক্ষেত্রে রাতের ঘুম অনেকখানি কম হয়। এ কারণে সেহেরি খাওয়ার পর বিশ্রামের সুযোগ নিতেই সুবহে সাদিকের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আজান হয় এবং ফজরের নামাজ আদায় করা হয়। সামাজিকভাবে রমজান মাসে অন্যান্য মাসের রীতি থেকে খানিকটা পরিবর্তন হয়ে যায়। সারাদিন রোজা থাকা, তারাবিহ আদায় এবং সামান্য বিশ্রামের পর ফের সেহেরির সময়ে ঘুম থেকে উঠে খাওয়ার কারণে ফজরের নামাজ বিলম্বে না পড়ে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আদায় করা হয়।

মাদ্রাসা ফয়জুল উলুম -এর হাদিসের অধ্যাপক মুফতি মাওলানা লুৎফুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, রমজান মাসে ফজরের নামাজ আগে আদায় করার পেছনে শুধুমাত্র বিশ্রাম ও ঘুমের বিষয়টিকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়।

দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে ইফতা সম্পন্নকারী এই আলেম জানান, আমাদের দেশের ফজরের নামাজ আউয়াল ওয়াক্ত পড়া হয়না। মক্কা-মদীনা শরীফসহ মুসলিম বিশ্বের অনেকদেশে সুবহে সাদিকের পর আজান হলেই নামাজ আদায় করা হয়। তবে আমাদের দেশে ইমাম আবু হানিফার মাজহাব অনুযায়ী ফজরের নামাজ একটু বিলম্বে পড়া হয়।

উত্তরা ১ নাম্বার সেক্টর জামে মসজিদের এই খতিব হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, হানাফি মাজহাবে একটি মাসআলা আছে, যেটি হচ্ছে পূর্ব আকাশে মোটামুটি আলোর আভা ছড়িয়ে পড়ার পর ফজরের নামাজ মুস্তাহাব বা উত্তম। এ নিয়ে অন্যান্য দিন মাজহাবে মতভেদ রয়েছে। অন্যান্য ইমামরা বলছেন, আউয়াল ওয়াক্ত বা প্রারম্ভকালীন সময়ে নামাজ পড়া উত্তম।

উল্লেখ্য, ইসলামমতে, মুস্তাহাব হচ্ছে: মুস্তাহাব এমন আমল যা পালন না করলে কোনো শাস্তি পেতে হবে না। কিন্তু পালন করা ইসলামের দৃষ্টিতে উত্তম। মুস্তাহাব কাজ করলে সওয়াব ও আল্লাহর দরবারে পুরস্কার আছে। যেমন: প্রতি আরবি মাসের প্রথম ও শেষ বৃহস্পতিবার রোজা রাখা মুস্তাহাব।

এ ব্যাপারে যাত্রাবাড়ির একটি কওমি মাদ্রাসার পরিচালক মাওলানা আজিজুর রহমান বলেন, ফজরের নামাজের সময় হয় সুবহে সাদিকের পর। অন্যান্য দিনে একেবারে শেষ মুহূর্তে আদায় করা হলেও রমজানে নামাজ ওয়াক্ত শুরু হওয়ার সাথে-সাথে পড়া হয়। এর মধ্যে কোনও ধর্মীয় ব্যবধান বা রমজান বলে অন্য নিয়ম নেই।

এদিকে সেহেরির সময় শেষ হওয়ার পর কিছু সময় বিরতি দিয়ে ফজরের নামাজের আজান দেওয়ার রীতি রয়েছে দেশে। তবে এই সামান্য সময়ের ব্যবধানের কোনও ধর্মীয় পরিচয় নেই। মূলত সেহেরি খাওয়ার শেষ সময় চিহ্নিত করতেই সতর্কতা সরূপ এই বিরতি ব্যবহার হয়।

মুফতি লুৎফুর রহমান বলেন, সুবহে সাদিকের সময় পর্যন্ত সেহেরি খাওয়ার সময়। তবে সতর্কতার কারণে ফজরের আযানের একটু আগে সেহেরি শেষ করার আহ্বান জানানো হয়। আর এই বিরতি নিয়ে ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা নেই।

এসটিএস/এপিএইচ/

জাকাতের কাপড় মানেই সস্তা, ‘নিন্দনীয় অপরাধ’ বলছেন আলেমরা

বায়তুল মোকাররমের খতিব হতে আলেমদের দৌড়ঝাঁপ