রেডিয়েশনের ক্যান্সার ঝুঁকিতে দেশের বেশিরভাগ মানুষ!

সিটিস্ক্যান মেশিন

ক্যান্সার, হৃদরোগ, চোখে ছানি, প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পাওয়াসহ নানা অসংক্রামক রোগে এখন মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। সারা বিশ্বে এখন অসংক্রামক রোগে মৃত্যুর হার অনেক বেশি। আর এসবের অন্যতম একটি কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা রেডিয়েশনকে (তেজস্ক্রিয়তা) দায়ী করছেন।

এক্স-রে, এমআরআইসহ নানা ধরনের মেডিক্যাল চেকআপ করাতে গিয়ে মানুষজন নিজের অজান্তেই শরীরে বয়ে নিয়ে আসছেন ঘাতক ব্যাধি বিশেষ। বিশেষ পোশাক আর প্রশিক্ষণ থাকা সত্ত্বেও বছরের পর বছর ধরে যারা এ বিষয় নিয়ে কাজ করছেন তারাই রয়েছেন সবচেয়ে মারাত্মক ঝুঁকিতে।

বাংলাদেশ পারমাণবিক গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে এক্সরে ও সিটিস্ক্যান কক্ষের নির্মাণে নির্দেশনা থাকলেও সেটি কোথাও মানা হয় না যথাযথভাবে। রেডিয়েশন নির্গমনে কক্ষের দেওয়াল ১০ ইঞ্চি ও দরজায় লোহা বা তামার পাতের ব্যবস্থা রাখারও নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু মানা হয় না সেই নির্দেশনাও।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রোগ নির্ণয়ে এক্স-রে, এমআরআই, সিটিস্ক্যানসহ নানা পরীক্ষা এখন নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। আর উচ্চমানের হাসপাতালগুলো ছাড়া দেশের বেশিরভাগ হাসপাতাল ক্লিনিকে এক্স-রে, সিটিস্ক্যানের সময় নির্গত হওয়া রেডিয়েশন প্রতিরোধ করার কোনও ব্যবস্থাই নেই। আর এই রেডিয়েশন মানুষকে ক্ষতি করছে নানাভাবে।

আধুনিক এমআরআই মেশিন

বিশেষজ্ঞরা বলেন, চোখে দেখা না-যাওয়া এই রেডিয়েশন এক্স-রে বা সিটিস্ক্যান কক্ষের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তার শরীরে প্রবেশ করলে ভবিষ্যতে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আবার কোনও কারণে যদি কেউ নিয়মিত বা ঘন ঘন এক্সরে করেন, তার শরীরে রেডিয়েশন প্রবেশ করে চোখে ছানিপড়া, ক্যান্সার, গর্ভপাত, বন্ধ্যাত্ব, মাথার চুল পড়ে যাওয়াসহ নানান জটিল রোগের সৃষ্টি হয়। এমনকি গর্ভাবস্থায় এটি হলে গর্ভস্থ শিশু বিকলাঙ্গ কিংবা প্রতিবন্ধী হওয়ার সম্ভাবনা নিয়েও জন্মগ্রহণ করার ঝুঁকিতে থাকে।

নাম প্রকাশে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের একজন রেডিওগ্রাফার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা ক্যান্সারের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করি। প্রয়োজনের তাগিদে কাজ করতে হয় কিন্তু মনের মধ্যে ভয় কাজ করে।

তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী একজন টেকনোলজিস্টের দিনে ১৫ থেকে ২০ বার এক্স-রে এক্সপোজ দেওয়ার কথা থাকলেও সরকারি হাসপাতালগুলোতে দিনে তাদের ৮০ থেকে একশবারের ওপরে এক্সপোজ দিতে হয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৩০ জন রেডিওগ্রাফার শত শত মানুষকে নিয়ে কাজ করছেন। রেডিওগ্রাফারদের নিষেধ সত্ত্বেও রোগীর সঙ্গে আসা স্বজনরা ঢোকেন এক্স-রে কক্ষে। তারা নিজেরাও জানেন না যে, নিজেদের অজান্তেই তারা শরীরে বহন করে নিয়ে যাচ্ছেন ঘাতক ব্যাধির লক্ষণ।

তিনি বলেন, অপরদিকে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনে একজন রেডিওগ্রাফারকে দুইশবারেরও বেশি এক্স-রে এক্সপোজ দিতে হয়।   

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের রেডিওলজি বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক এএসকিউএম সাদেক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মিতে রেডিয়েশন থাকে এগুলো আমাদের জানতে হবে এবং মানতে হবে।

তিনি বলেন, লন্ডনে এমনও রয়েছে এক্স-রে কক্ষে ঢোকার আগেই রেডিয়েশন লেভেল চেক করে দেখা হয়। আবার বের হওয়ার সময়ও চেক করা হয়। আমাদের দেশে তো সে রকম সম্ভব না। কিন্তু যতটুকু পারা যায়, সেটুকুই মানা উচিত।

এক্সরে মেশিন

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বাংলাদেশে যত ধরনের ক্যান্সার হয়, তার মধ্যে শতকরা এক ভাগ ক্যান্সার হয় এই ক্ষতিকারক রেডিয়েশনের কারণে। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কয়েকজন চিকিৎসক এবং কর্মচারী মারাও গেছেন যারা রেডিওলজির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন।

এ ঘটনার যোগসূত্র থাকতে পারে বলে মন্তব্য করে অধ্যাপক মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, আমরা এ শঙ্কাকে উড়িয়ে দিতে পারি না।

রেডিওলজি বিভাগে যারা কাজ করছি, তারা শতভাগ ঝুঁকিতে রয়েছি জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা হাই অ্যানার্জি রেডিয়েশনের মধ্যে কাজ করি এবং রেডিয়েশনের এখানে ভিন্ন ভিন্ন ফর্ম রয়েছে।

দেশের সবগুলো মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রেডিওথেরাপি অ্যান্ড রেডিওলজি বিভাগে কর্মরত চতুর্থ শ্রেণি থেকে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তারা এ জন্য একটি ঝুঁকি ভাতাও পেতেন বলে জানান অধ্যাপক মহিউদ্দিন ফারুক।

তিনি বলেন, একটি আইনি ও প্রশাসনিক জটিলতায় পড়ে সেটিও গত দুই বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। এই ঝুঁকি ভাতা শিগগিরই ফের চালু করা উচিত।

/জেএ/এবি/

আরও পড়ুন:

বিএনপির নতুন কমিটি: প্রত্যাশার সঙ্গে হতাশা, লঙ্ঘন গঠনতন্ত্রের

স্থলসীমান্ত চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন আটকে আছে মুহুরির চরে