‘মুক্তিপণ নিয়েও ওরা ছেলেকে ফিরিয়ে দেয়নি’

নিখোঁজ চিকিৎসক ইকবাল মাহমুদকুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক ডা. মুহাম্মদ ইকবাল মাহমুদ অপহরণের পর তিন দফায় পরিবারের কাছে টাকা দাবি করে অপহরণকারীরা। ঘটনার পরদিনই ডা. ইকবালকে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলে পরিবারের কাছ থেকে এক লাখ টাকা নেয় অপহরণকারীরা। পরবর্তীতে আবারও এক লাখ, পঞ্চাশ হাজার ও বিশ হাজার করে তিনবার টাকা চায় তারা। তবে প্রথম দফায় এক লাখ টাকা দেওয়ার পরও ছেলের কোনও সন্ধান না পাওয়ায় আর টাকা দেয়নি অপহৃতের পরিবার।

অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবির বিষয়ে ডা. ইকবাল মাহমুদের বাবা এ কে এম নুরুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অপহরণের পরদিনই আমার ছেলের নাম্বার থেকে আমার ফোনে কল আসে। অন্য আরেকজন কথা বলে জানায়, আমার সঙ্গে জরুরি কথা আছে। তবে এই ফোন বা কথার বিষয়ে পুলিশ বা বাইরের কাউকে জানানো যাবে না। আমি কথা মতো রাজি হই। ছেলের নাম্বার থেকে আসা কলটি কেটে দিয়ে অন্য আরেকটি নাম্বার থেকে কল দেয়। ওরা এক লাখ টাকা দিতে বলে। কথামতো এক লাখ টাকা বিকাশে পাঠাই। টাকা পাঠানোর পর বিকেল ৪টায় ওরা ছেলেকে আনতে উত্তরা যেতে বলে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ওদের কথা মতো ১৬ অক্টোবর বিকেল চারটার মধ্যে আমি উত্তরায় গিয়ে বসে থাকি। ফোনে তারা আমাকে বলছিল, আপনি ৪টার দিকে উত্তরা আসেন। আমরা আপনাকে ফোন দিয়ে বলবো কোথায় এসে ছেলেকে নিয়ে যাবেন। কিন্তু আর ফোন দেয়নি। আমি ফোন দিয়েও তাদের মোবাইল বন্ধ পেয়েছি।’

এ কে এম নুরুল আলম বলেন, ‘এ ঘটনার পর আরও তিন দফা টাকা দাবি করে অপহরণকারীরা ফোন করেছিল। গত ১৭ অক্টোবর অন্য একটি নম্বর থেকে ফোন করে অপহরণকারীরা বলেছিল, আমরা আগেরদিন কথা রাখতে পারিনি। আজকে আপনি আরও এক লাখ টাকা পাঠান, আমরা আজকে কথা রাখবো। আপনার ছেলেকে ফিরিয়ে দেব। কিন্তু আমি ছেলের সঙ্গে কথা বলা ছাড়া কোনও টাকা দেব না বলে তাদের জানিয়ে দেয়। এরপরদিন আবারো ফোন দিয়ে পঞ্চাশ হাজার টাকা ও পরে বিশ হাজার টাকা চেয়েছিল। তবে আর কোনও টাকা আমি তাদের পাঠায়নি।’

পরবর্তীতে টাকা চাওয়ার ব্যাপারে নুরুল আলম বলেন, ‘আমি ওদের বলেছিলাম, আগে আমার ছেলের সঙ্গে কথা বলিয়ে দাও পরে আমি টাকা দেব। কিন্তু তারা ছেলের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেবে বললেও আর যোগাযোগ করেনি। তারা অযথাই আমার কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে বুঝতে পেরে বিষয়টা পুলিশকে জানায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘অপহরণের এক মাস পরেও ছেলেকে ফিরে পেতে উল্লেখযোগ্য কোনও তৎপরতা না দেখে থানা পুলিশের কার্যক্রমে আমরা খুবই অসন্তুষ্ট। গত ১৫ নভেম্বর ছেলের সন্ধান পেতে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছি। এরই প্রেক্ষিতে নিখোঁজ চিকিৎসক ইকবাল মাহমুদকে উদ্ধারে কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা আগামী ১০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।’

এ বিষয়ে ধানমণ্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল লতিফ বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, ‘ভিকটিম উদ্ধার হয়নি। পুলিশের গাড়ি কোনও থানার সেটাও জানা যায়নি। তবে যে নম্বরে বিকাশ করা হয়েছিল, সেটা চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। নম্বরে যে ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে সেখানে ওই নামের কেউ থাকে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া সিসি টিভির ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণের জন্য ক্রিমিনাল ইনভেসটিগেশন ডিপার্টমেন্টে (সিআইডি) পাঠানো হবে। এ ঘটনায় ছায়া তদন্ত করছে ডিবি।’

গত ১৫ অক্টোবর মধ্যরাতে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরির মোড় থেকে অপহৃত হন ডা. ইকবাল মাহমুদ। অপহরণস্থলে পাশের একটি ভবনের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, রাত ৩টা ১০ মিনিটে রয়েল কোচ নামে একটি বাস সায়েন্স ল্যাবরেটরির মোড়ে ধানমণ্ডি ১ নম্বর সড়কের কাছে এসে থামে। বাস থেকে নেমে দাঁড়ানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই বেশ কয়েকজন ড. ইকবালকে ঘিরে ধরে ও পেছন থেকে আসা একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। ফুটেজে দেখা গেছে মাইক্রোবাসের পিছন পিছন একটি পুলিশের গাড়ি ও একটি মোটরসাইকেল অনুসরণ করে। অপহরণের ঘটনায় পরদিনই ধানমণ্ডি থানায় মামলা করতে গেলেও মামলা নেয়নি পুলিশ। অবশ্য পরদিন রাত ১২টায় মামলা নেয় পুলিশ।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মুহাম্মদ ইকবাল মাহমুদ ২৮তম বিসিএস পাস করে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে জয়েন করেন। লক্ষ্মীপুর থেকে বদলি হয়ে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজে আসেন তিনি। গত ১০ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) অ্যানেসথেশিয়ায় দুই মাসের প্রশিক্ষণ নিতে ঢাকায় আসেন। ছুটি কাটিয়ে ঢাকা ফেরার সময় ধানমণ্ডি থেকে অপহৃত হন ডা. ইকবাল।

পুলিশের তদন্তে অসন্তুষ্ট হয়ে গত ১৫ নভেম্বর হাইকোর্টে রিট করেন ড. ইকবাল মাহমুদের বাবা এ কে এম নুরুল আলম। রবিবার আগামী ১০ দিনের মধ্যে ড. ইকবাল উদ্ধারে কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা জানিয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. ফারুকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

/আরজে/এসএনএইচ/