‘ওনারা সেদিন কোনও খোঁজ নেন নাই। এতো বড় ঘটনা ঘটছে, কিন্তু তাগো কাউরে আমরা সেদিন চোখে দেখি নাই, আর দুইদিন পর ওনারা আসছে আমলীগের নেতারে নিয়ে। ওনাদের টাকা আছে, নেতা আছে। সবই তো ওনাগো, আমরা গরীব মানুষ, আমগোর টাকা নাই, নেতা নাই। আমরা এমনেই মরমু, এইটা এহন বুইঝ্যা গেছি।’ প্রচণ্ড ক্ষোভের সঙ্গে বাংলা ট্রিবিউনকে কথাগুলো বলছিলেন সাভারের আশুলিয়ায় কালার ম্যাচ বিডি লিমিটেডে অগ্নিদগ্ধ হয়ে গুরুতর আহত এক রোগীর মা। তবে তিনি তার নাম গণমাধ্যমে প্রকাশ করতে চাননি।
প্রসঙ্গত, গত ২২ নভেম্বর সাভারের আশুলিয়ায় কালার ম্যাচ বিডি লিমিটেডে অগ্নিকাণ্ডের দুদিন পার হওয়ার পর ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় আহতদের দেখতে ঢাকা মেডিক্যালে এসেছিলেন কারখানার এক মালিক শামীমের স্ত্রী। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা ও ঢাকা-৭ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজী সেলিম। এসময় মালিক শামীমের স্ত্রী আহত প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা ও নিহত একজনের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা প্রদান করেন।
বার্ন ইউনিটের এসব রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে বোঝা যায়, শরীরের যন্ত্রণার সঙ্গে মালিক পক্ষের আচরণও তাদের কষ্ট দিয়েছে। আগুনই তাদের সেদিন কারাখনায় ডেকে নিয়ে গেছে বলেও আক্ষেপ করেন দগ্ধ আরেক শ্রমিকের মা। মেয়ের পুড়ে যাওয়া হাত ধরে ওই মা বলেন, ‘মেয়ের এ অবস্থা কী কোনও মা সহ্য করতে পারে। যাদের কিছু করার নেই, তারা এগিয়ে আসে। আর যাদের কারখানায় এতোদিন সবাই কাজ করছে, তাদের গাফিলতির কারণে এতোগুলো মানুষ পুড়ে গেল, জীবন ধ্বংস হয়ে গেল তাদের কোনও সহানুভূতি আমরা পাই না। ওনারা এসে ১০ হাজার টাকা দিয়ে যায় হাতে। এ কেমন জীবন আমাদের।’
এদিকে রেড ইউনিটে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে মাথার ওপর ঘুরছে বৈদ্যুতিক পাখা, তারপরও যন্ত্রণায় চিৎকার করছিলেন এক নারী। তার মুখ থেকে অস্পষ্টভাবে ভেসে আসছে, ‘আমি মরে যাচ্ছি, আমারে বাতাস দাও। আমার জানডা বাইর হইয়া যাইতেছে।’ নারী ওয়ার্ড ঘুরে দেখা মেলে রিনা, হালিমা, ফারজানা, হেলেনাসহ অন্যদের। তাদের অনেকেরই ড্রেসিং করা হয়েছে।
অগ্নিদগ্ধদের মধ্যে বর্তমানে বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) রয়েছেন ৪ জন, হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) রয়েছেন ৬ জন এবং বাকি ৮ জন রয়েছেন নারী ওয়ার্ডের রেড ইউনিটের বারান্দায়। চিকিৎসাধীন সবাই শতকরা ১২ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশ ইনজুরি নিয়ে চিকিৎসাধীন।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) সাভারের আশুলিয়ায় কালার ম্যাচ বিডি লিমিটেড নামে একটি কারখানায় লাগা আগুনে দগ্ধ হয়ে আহত হন ২৬ জন নারী শ্রমিক। তাদের মধ্যে সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৫ জন এবং ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ২১ নারী শ্রমিক ভর্তি হন। এখন পর্যন্ত দু’জন শ্রমিক চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এবং একজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
আরও পড়ুন: হাজী সেলিমকে নিয়ে ২ দিন পর অগ্নিদগ্ধদের পাশে মালিকপক্ষ
/এমও/