প্রসঙ্গত, গত ২ জানুয়ারি বিকালে কর্মস্থল দারিয়াপুর হাসপাতাল থেকে মাগুরা শহরের কলেজপাড়ায় নিজের বাসায় ফিরে আসেন ডা. সুমন। তার কিছুক্ষণ পরই নিজের মোবাইল ফোন রেখে বাসা থেকে বের হয়ে যান তিনি। পরদিন ৩ জানুয়ারি রাজধানীর শাহবাগ আজিজ সুপার মার্কেটের চতুর্থ তলা থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিখোঁজ হওয়ার ৭ দিন পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে সুমনের ক্ষতবিক্ষত, হাত-পা ভাঙা মৃতদেহ শনাক্ত করেন তার বাবা।
বাংলা ট্রিবিউনের মাগুরা প্রতিনিধি জানান, ঘটনার পরপরই সুমনের বোন সন্ধ্যারানী তাকে বলেছিলেন, সুমন নিখোঁজ হওয়ার পর তার মোবাইল ফোনে একটি কল আসে। তাকে জানানো হয়, দুই লাখ টাকা দিলে সুমনকে ছেড়ে দেওয়া হবে। সুমনের পরিবারের সদস্যরা টাকা সংগ্রহ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু তার মধ্যেই দুঃসংবাদটা শুনতে পান তারা।
নিহত ডা. সুমন ২০১৩ সালে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এফসিপিএস করেন। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত ৩৩তম বিসিএস পরীক্ষায় পাস করে তিনি মাগুরার শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিক্যাল অফিসার হিসাবে কর্মরত ছিলেন।
সুমনের বন্ধু এবং সতীর্থদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দরিদ্র পরিবারের সন্তান সুমন ছিলেন সংসারের একমাত্র অবলম্বন। তার বাবা সুকুমার সিকদার একজন কৃষক। সুমনের বন্ধু ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আজিজ সুপার মার্কেটের সপ্তম তলার একটি ঝুড়িতে তার চশমা, কেডস ও সোয়েটার পাওয়া যায়। অথচ তার মৃতদেহ পাওয়া যায় ভবনটির চতুর্থ তলায়। ওই ভবনে বিএসএমএমইউর অনেক চিকিৎসক থাকেন। তাদেরই কারও কাছে তিনি এসেছিলেন বলে আমরা জানতে পেরেছি।’
সুমন আজিজ সুপার মার্কেটে কার কাছে এসেছিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তার এক বন্ধু সেখানে থাকেন। তিনি আমাদের বলেছেন, সুমনের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা ছিল। বন্ধুদের কাছে জেনেছি, পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে সুমন হতাশায় ভুগছিলেন। কিন্তু যে বন্ধু এখানে থাকেন, তাকে সহ অন্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং মোবাইল কললিস্ট চেক করে সুমন যে এই বন্ধুর কাছেই এসেছিলেন, সে বিষয়ে কোনও প্রমাণ আমরা পাইনি। তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে প্রয়োজন হলে আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
এদিকে সুমনের মৃত্যু নিয়ে চিকিৎসকদের পেশাজীবী সংগঠন বিএমএ-র ভূমিকায় ক্ষুব্ধ সাধারণ চিকিৎসকরা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘একজন সরকারি চিকিৎসক এভাবে মারা গেল, অথচ বিএমএ কিছুই করছে না। আমরা এখন পর্যন্ত বিএমএ-র ভূমিকা নিয়ে কিছু শুনিনি। তাদের তো নিজ উদ্যোগে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা। একজন সাধারণ চিকিৎসকের পক্ষে বিএমএকে তেমন কথা বলতে দেখিনি। একজন চিকিৎসক রহস্যজনকভাবে মারা গেছেন, অথচ তারা একেবারেই চুপচাপ।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন চিকিৎসক বলেন, ‘বিএমএ আর আমাদের সংগঠন নয়, এটি এখন সরকারি সংগঠন হয়ে গিয়েছে। আমাদের সাধারণ চিকিৎসকদের জন্য বিএমএ-র কাছ থেকে এখন আর কিছু আশা করি না। সুমনের মৃত্যুর ঘটনায় তারা চুপচাপ। আমার অপমৃত্যু হলেও বিএমএ যে কোনও ব্যবস্থা নেবে না, সেটা বুঝে গিয়েছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএমএ-র সাবেক মহাসচিব অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিএমএ এ বিষয়ে নজর রাখছে, সুমনের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছে।’ চিকিৎসক সুমন হত্যা বিষয়ে এখনও কোন মামলা হয়নি উল্লেখ করে অধ্যাপক ইকবাল আর্সলান জানান, তারা মামলা করবেন।
এএআর/
আরও পড়ুন: