সবমিলিয়ে অংকের হিসাব মিলছে না পরিবেশবাদী ও সাংবাদিকদের। প্রজননকেন্দ্র ও এর আশেপাশের কেউ মুখ খুলতে রাজি না হলেও বৃহস্পতিবার করমজল এলাকা ঘুরে এসেছেন প্রাণ-প্রকৃতি বিষয়ক সাংবাদিক হোসেন সোহেল। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘২০০২ সাল থেকে চিতাবিড়াল, বনবিড়াল এলো না। হঠাৎ এখন চিতাবিড়াল এলো আর কুমির ছানা খেয়ে ফেলল! এটি অবিশ্বাস্য।’ তিনি বলেন, ‘তারা এখন যে নিরাপত্তার কথা সাংবাদিকদের বলছেন, সেটি আসলে কিছুই না। আগে থেকে যে নেট ছিল, সেটি দিয়ে বিড়াল প্রবেশের সুযোগ নেই। এখন সেই নেটের ওপর জাল বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে কেবল দেখানোর জন্য। আমার কাছে প্রাথমিক কিছু তথ্য আছে, এগুলোর খোঁজ নিলেই মূল ঘটনা বেরিয়ে আসবে।’
হঠাৎ চিতাবাঘ আক্রমণের বিষয়ে উত্তর দিয়েছেন বন কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘চিতাবিড়াল এই এলাকায় ছিল না, এটা সত্য। হয়তো দুর্বল হয়ে ঘুরতে ঘুরতে এই এলাকায় চলে এসে খাদ্যের সন্ধান পেয়েছে।’ বিড়ালটিকে মেরে ফেলার পর তাকে দুর্বল মনে হয়েছে কিনা—এমন প্রশ্নে তিনি কোনও উত্তর করেননি। তিনি বলেন, ‘আপনারা বিড়াল কুমির খেয়ে ফেলেছে বলে অবাক হচ্ছেন। কিন্তু কুমিরের বাচ্চাগুলো আট থেকে দশ ইঞ্চি। এগুলোতো চাইলে একসঙ্গে ১৫/২০টা খাওয়া সম্ভব। পরপর তিনদিন খেলেই তো ৪৫টা হয়ে যায়।’
এই ঐকিক নিয়মে তিনি হিসাব মিলিয়ে দিলেও ভিন্ন কথা বলছেন করমজল ফরেস্ট অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তহিদুল ইসলাম। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তৃতীয় দফায় হারানো কুমিরছানাগুলোর ছিন্নভিন্ন শরীর পাওয়া গেলেও প্রথম দফায় কোনও কিছু পাওয়া যায়নি বলেই আমি মামলা করেছিলোম। সেটি পুলিশ তদন্ত করছে। প্রথম দফায় উধাও হয় ৩৬টি। যার মধ্যে দু’টির মৃতদেহ পাওয়া গেছে।’ বাকিদের একেবারেই কোনও অস্বীত্ব না পাওয়ায় পাচার বা বিক্রির কোনও সন্দেহ তার মনে এসেছে কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সেই সন্দেহ থেকেই মামলা করা। পরের ১৯টির শরীরের নানা অংশ ছড়ানো ছিটানো পাওয়া গিয়েছে। এতে ৩৪টিরও একই পরিণতি প্রমাণ করে না। পুলিশ যথাযথ তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা তুলে আনবে এই প্রত্যাশায় রয়েছি। কুমিরছানা কী পরিমাণ থাকছে বা না থাকছে, এ বিষয়ে কোনও নথিভুক্তির নিয়ম আছে কিনা—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এখানে ছয় মাস হলো এসেছি। ২০১৪সালের আগের কোনও হিসাব নেই।’
গত ২৯ ও ৩০ জানুয়ারি করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্র থেকে দু’দফায় ৩৭টি কুমিরছানা রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে যায়। আরও ছয়টি মৃত উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গত ৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টার দিকে নতুন করে আরও ১৯টির খণ্ডিত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
দাকোপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের কাছে প্রথমদফার ৩৪টি কুমিরছানা নিখোঁজ হওয়ার মামলা রয়েছে। আমরা তদন্ত করছি। পরবর্তী সময়ে ১৯ছানার শরীরের অংশ পাওয়া গেছে এবং সেটি চিতাবিড়াল খেয়ে ফেলার কিছু প্রমাণও মিলেছে। এরপর বিড়ালটিকে গুলি করে মেরে ফেলা হয়। ময়নাতদন্তে বিড়ালের পাকস্থলীতে কুমিরছানার উপস্থিতি মিলেছে। ’
বিভিন্ন জায়গায় কুমির ছাড়া হয় বলে যে খবর পাওয়া যায় সেগুলোতো আকাশ থেকে পড়ে না উল্লেখ করে প্রাণ-প্রকৃতি বিষয়ক সাংবাদিক হোসেন সোহেল বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে অনেকে কুমির লালনপালন করেন, ইকোপার্কে কুমির আসে, পাহাড়ের কিছু জায়গায় বাঙালিরা কুমির ছেড়েছেন, এমন খবর আছে। এগুলোর কোনও কাগজপত্র আছে কিনা, সেই খোঁজ নেওয়ার সময় এসেছে। যদি ৪৩টি কুমিরছানার খোঁজই না পাওয়া যায়, তাহলে একটি ঘটনা ঢাকতে চিতাবিড়ালটিকে হত্যা করাসহ আরও কত ঘটনা ঘটানো হয়েছে, এর যথাযথ তদন্ত হওয়া জরুরি।’
ছবি: হোসেন সোহেল
আরও পড়ুন: চিতা বিড়ালের শিকার ৬২ কুমির ছানা!
/এমএনএইচ/