পাইপে পড়ে নিহত শিশু জিহাদের মামলার রায় আজ

জিহাদরাজধানীর শাহজাহানপুরে রেলের পরিত্যক্ত নলকূপে পড়ে শিশু জিহাদের মৃত্যুর ঘটনায় প্রকৌশলী ও ঠিকাদারসহ ছয় আসামির বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আজ রবিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি)। উভয় পক্ষের যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে গত ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ মো. আখতারুজ্জামান এ মামলায় রায়ের দিন ধার্য করেন।

আসামিরা হলেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স এসআর হাউসের মালিক মো. শফিকুল ইসলাম ওরফে সালাম, রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী (নলকূপ পরিদর্শন) জাহাঙ্গীর আলম, কমলাপুর রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন, প্রকৌশলী আবু আহমেদ শাকি, দীপক কুমার ভৌমিক এবং সহকারী প্রকৌশলী-২ মো. সাইফুল ইসলাম।

২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর শাহজাহানপুর রেল কলোনিতে মুখ খোলা থাকা কয়েকশ’ ফুট গভীর এক পাইপে পড়ে যায় চার বছরের জিহাদ। প্রায় ২৩ ঘণ্টা উদ্ধার অভিযানের পর তার অস্তিত্ব না পাওয়ায় অভিযান স্থগিতের ঘোষণা দেয় ফায়ার সার্ভিস। এর কয়েক মিনিটের মধ্যে কয়েকজন তরুণের তৎপরতায় তৈরি করা যন্ত্রে পাইপের নিচ থেকে তুলে আনা হয় অচেতন জিহাদকে। ঘটনাস্থল থেকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন।

অবহেলাজনিত কারণে মৃত্যুর অভিযোগ এনে জিহাদের বাবা নাসির ফকির শাহজাহানপুর থানায় একটি মামলা করেন। গত বছরের ৪ অক্টোবর দণ্ডবিধির ৩০৪ (ক) ধারায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর দায়ে অভিযুক্ত হন আসামিরা। এ ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি পাঁচ বছরের কারাদণ্ড।

মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী শওকত আলম শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সাক্ষ্যপ্রমাণে অবহেলাজনিত কারণে মৃত্যু প্রমাণ করা সম্ভব হয়েছে। আমরা অপরাধীদের সাজা হবে বলে আশা করছি। এই ঘটনায় সাজার মধ্য দিয়ে আরেকবার প্রমাণিত হবে বাংলাদেশেও কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়।’

এদিকে রায়ের আগের প্রতিক্রিয়া হিসেবে দ্বিতীয় অভিযোগপত্রে সম্পৃক্ত দুই আসামীর পক্ষের আইনজীবী মো. আসিফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মামলায় অবহেলাজনিত কারণে মৃত্যুর অভিযোগ আনা হয়েছে। কিন্তু আমার মক্কেল দীপক কুমার ভৌমিক ও সাইফুল ইসলামের এ ধরনের সম্পৃক্ততা ছিল না।’

এ ঘটনায় প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা শাহজাহানপুর থানার পরিদর্শক আবু জাফর ২০১৫ সালের এপ্রিল যে অভিযোগপত্র দেন তাতে রেল কলোনিতে পানির পাম্প বসানোর প্রকল্প পরিচালক রেলওয়ের জ্যেষ্ঠ উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেএসআর-এর মালিক প্রকৌশলী আব্দুস সালামকে আসামি করা হয়। এই অভিযোগপত্রে বাদীর নারাজি আবেদনের কারণে গত বছরের ৩১ মার্চ আরও চারজনকে যুক্ত করে নতুনভাবে অভিযোগপত্র দেন গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, রেল কলোনির একটি পানির পাম্পে লোহার পাইপ দিয়ে কূপ খনন করে কোনও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই মুখ খোলা অবস্থায় ফেলে রাখা হয়। গত বছরের ৪ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচারকাজ শুরু করেন ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ মো. আখতারুজ্জামান। এ মামলায় বাদীপক্ষে মোট ১০ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আর আসামিপক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছেন তিন জন।

/ইউআই/জেএইচ/