বদলি হয়ে ক্লোজ মনিটরিংয়ে ফেনীর সেই চিকিৎসক

ডা. ফরহাদুল ইসলাম ভূঁইয়াসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে পূর্ণকালীন চাকরি করায় অভিযুক্ত ফেনী সদর হাসপাতালের ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল অফিসার ডা. ফরহাদুল ইসলাম ভূঁইয়াকে চট্টগ্রামের সর্বদক্ষিণে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করা হয়েছে। সেখানে তাকে ক্লোজ মনিটরিংয়ে রাখা হয়েছে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
অভিযুক্ত চিকিৎসককে লোহাগড়ায় বদলি করার জন্য সরকারি নির্দেশের কথা মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বাংলা ট্রিবিউনকে জানান ফেনীর সিভিল সার্জন ডা. শাহরিয়ার কবীর। তিনি বলেন, ‘আমাদের কারণ দর্শানোর নোটিশের উত্তরে ডা. ফরহাদের বক্তব্য খুব অগোছালো মনে হয়েছে। আমরা এতে সন্তুষ্ট নই। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করা যাবে না, এমন বিধির কথা তিনি জানতেন না বলে অজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।’
ফেনীর সিভিল সার্জন আরও জানান, নোটিশের জবাবে ডা. ফরহাদ স্কয়ার হাসপাতালে পার্টটাইম চাকরি করার কথা স্বীকার করেছেন। ডা. শাহরিয়ার কবীর বলেন, ‘যেহেতু আমরা পুরো বিষয়টি বাংলা ট্রিবিউনে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে জেনেছি, তাই তার জবাব নিয়ে আমাদের অসন্তোষের বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক এবং স্বাস্থ্য সচিবকে জানিয়েছি।’
জেলা হাসপাতাল থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলি করায় পদাবনতি হলো ডা. ফরহাদের। সেখানে তিনি যোগ দিয়ে কাজ শুরু করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন ডা. শাহরিয়ার কবীর। তিনি বলেন, ‘লোহাগড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট চিকিৎসকের সংখ্যা সাত জনের মতো। কাজেই পুনরায় তার এ ধরনের নিয়মলঙ্ঘনের সুযোগ নেই। ওখানকার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও তার ব্যাপারে অবগত। তাকে শুধরাতেই হবে।’
বদলি হওয়ার বিষয়ে জানতে চেয়ে ডা. ফরহাদুল ইসলাম ভূঁইয়ার মোবাইল ফোনে বাংলা ট্রিবিউনের পক্ষ থেকে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
প্রসঙ্গত, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ‘পোস্টিং ফেনী, ডিউটি করছেন স্কয়ার হাসপাতালে!’ শিরোনামে ডা. ফরহাদকে নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পরই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে তিন দিনের সময় দিয়ে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন ফেনীর সিভিল সার্জন।
প্রসঙ্গত, নিয়ম অনুযায়ী সরকারি হাসপাতালে চাকরি করে সেখান থেকে বেতনভাতা নিয়ে কোনোভাবেই একজন চিকিৎসক অন্য কোনও বেসরকারি হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করতে পারেন না। কিন্তু ডা. ফরহাদ সেই নিয়ম ভেঙে অবলীলায় তা চালিয়েছেন বলে প্রমাণ রয়েছে।
জানা গেছে, ডা. ফরহাদ ৩৩তম বিসিএস-এ উত্তীর্ণ হয়ে ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন ফেনীর ২৫০ শয্যার সদর হাসপাতালে। তবে একটি সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে জানায়, সরকারি চাকরিতে থাকা অবস্থায় তিনি গত কয়েক মাস ধরে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে আরএমও (রেসিডেন্সিয়াল মেডিক্যাল অফিসার) হিসেবে পূর্ণকালীন চাকরি করেছেন। ফেনী সদর হাসপাতালে কাগজে-কলমে ইমার্জেন্সি ডিউটি রোস্টারে নাম থাকলেও তিনি তা পালন করেননি। অভিযোগ রয়েছে, ফেনী সদর হাসপাতালের রেসিডেন্সিয়াল মেডিক্যাল অফিসারের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে ঢাকায় চাকরি করার বিশেষ সুবিধা ভোগ করে এসেছেন ডা. ফরহাদ।

/জেএ/জেএইচ/