একটি শিশুকে বাঁচানোর জন্য

 

ডাস্টবিন থেকে উদ্ধার হওয়া শিশুডাস্টবিন থেকে পলিথিনে মোড়ানো পাওয়া শিশুটিকে বাঁচানোর জন্য চিকিৎসকরা আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। এ বিষয়ে তারা বলছেন, শিশুটি এখনও আশঙ্কামুক্ত নয়। শিশুটি নির্ধারিত সময়ের আগেই পৃথিবীতে এসেছে। তাই এই অপরিণত শিশুটির ওজনও কম। তাকে এনআইসিইউতে (নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) রাখা হয়েছে, শনিবার (১১ মার্চ) থেকে তার স্যালাইন চলছে। রবিবার থেকে তাকে যেকোনও একজন মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর চেষ্টা করবেন বলে জানালেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিওন্যাটলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মনীষা ব্যানার্জী।

সাধারণত ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরই শিশুদের ওজন আড়াই কেজি থেকে চার কেজি ওজনের হয় বলে জানান অধ্যাপক মনীষা। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই কন্যা শিশুটির ওজন মাত্র ১ হাজার ৭০০ গ্রাম। তার শারীরিক অবস্থা দেখে বুঝতে পারছি, বয়স তিন থেকে চারদিন।’ তিনি বলেন, গতকাল বিকেলে পুলিশ শিশুটিকে নিয়ে আসে হাসপাতালে। এরপর থেকেই শিশুটি আইসিইউতে রয়েছে। তার জন্ডিস ও শ্বাসকষ্ট রয়েছে। জন্মের পর থেকেই শিশুটি খাবার পায়নি।’ মুখে ঘায়ের মতো রয়েছে বলেও জানান তিনি।

শিশুটিকে উদ্ধারকারী শাহআলী থানার উপ-পরিদর্শক জহিরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দুপুর দু’টার দিকে শিশুটিকে আমরা মিরপুর নবাবেরবাগ বেড়িবাঁধ এলাকার ডাস্টবিনের ভেতরে পলিথিনে মোড়ানো অবস্থা উদ্ধার করি।’ তিনি বলেন, ‘শিশুটিকে প্রথম একজন নারী ডাস্টবিনের ভেতরে দেখে তার স্বামীকে জানায়, তার পরে থানায় খবর দিলে থানা থেকে আমাকে জানানো হয়।পরে আমি গিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করি। তবে শিশুটিকে দেখেই অসুস্থ মনে হয়েছে, তৎক্ষণিক আমরা তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে যাই। তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে।’

হাসপাতালের খাতায় শিশুটিকে অজ্ঞাতনামা হিসেবে ভর্তি করানো হলেও নবজাতক বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চিকিৎসক বলেন, অজ্ঞাতনামা হিসেবে কোনও শিশুকে ডাকা হলে খুব খারাপ লাগে। আমরা এর আগেও ডাস্টবিন থেকে কুড়িয়ে পাওয়া আরেক শিশুর চিকিৎসা করেছিলাম। তাকে অজ্ঞাতনামা হিসেবে ডাকতে খারাপ লাগতো। তাই সবাই মিলে তার নাম দিয়েছিলাম আয়ান আফরাজ। তাকে পরে শিশুনিবাস কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়েছিল।একজন মানুষের কোনও নাম থাকবে না, এটা হতে পারে না। এই শিশুটি একটু সুস্থ হলেই তার একটি নাম দেব আমরা।’

অধ্যাপক ডা. মনীষা ব্যানার্জী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রতিটি শিশুকেই এখানে সমান চোখে দেখা হয়।’ তাদের চিকিৎসার  কোনও ব্যত্যয় হয় না জানিয়ে তিনি বলেন,  ‘তবে এই শিশুটির প্রতি একটু অন্যরকম দৃষ্টি আমাদের। এখানে সবার বাবা-মা-স্বজন রয়েছে, কিন্তু ডাস্টবিনে কুড়িয়ে পাওয়া এই শিশুটির কেউ নেই। তাই আমরাই তার সব। শিশুটিকে সুস্থ করে তুলতে আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করব।’

এদিকে রবিবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় নবজাতক আইসিইউ কক্ষের সামনে যেতেই দেখা যায় শিশুটিকে দত্তক নিতে এসেছেন নুজহাত (ছদ্মনাম)। আর জন্য তিনি অধ্যাপক মনীষা ব্যানার্জীর সঙ্গে দেখা করতে চান। কিন্তু  হাসপাতাল থেকে কোনও শিশুকে এভাবে নেওয়া যায় না বলে তাকে জানান অধ্যাপক মনীষা। তিনি বলেন, ‘শিশুটিকে পুলিশ নিয়ে এসেছে। এটি এখন পুলিশ কেস, একইসঙ্গে শিশুটি সুস্থ হলে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী তাকে সমাজসেবা অধিদফতরের অধীনে শিশুনিবাস কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হবে।’ জবাবে তিনি বলেন, ‘কার কাছে গেলে, সরকারের কার কাছে আবেদন করলে শিশুটিকে দত্তক নেওয়া যাবে, সেটা যদি জানতে পারতেন তাহলে তিনি তাই করতেন।’

পরে এই প্রতিবেদককে নুজহাত বলেন, ‘বিয়ের কয়েক বছর পার হয়েছে, কিন্তু এখনও সন্তান ধারণ করতে পারছি না। এই শিশুটির কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জেনে এখানে এসেছি। শিশুটিকে যদি দত্তক নিতে পারতাম, তাহলে মা হতে পারতাম। আর বাচ্চাটিকেও শিশুনিবাসে থাকতে হতো না।

উল্লেখ্য, গতকাল ১১ মার্চ মিরপুরের নবাবেরবাগ বেড়িবাঁধ এলাকার ডাস্টবিন থেকে পলিথিনে মোড়ানো শিশুটিকে উদ্ধার করে শাহআলী থানা পুলিশ। পরে শিশুটিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তাকে নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র রাখা হয়। সেখানেই তার চিকিৎসা চলছে।

আরও পড়ুন: ডাস্টবিন থেকে পলিথিনে মোড়ানো নবজাতক উদ্ধার


/এমএনএইচ/