সাহসী রুবিনার পাঁচ দিনের লড়াই: প্রতারকের ২ বছরের কারাদণ্ড

পাঁচ দিনের চেষ্টায় প্রতারক তাজুলকে ধরতে সক্ষম হন রুবিনাপাঁচ বছর ধরে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসা-যাওয়া করেছন রুবিনা আক্তার। এর মধ্যে গত ১৬ মার্চ সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে প্রতারকের খপ্পড়ে পড়ে সর্বস্বান্ত হন তিনি। তবে হাল ছাড়েননি রুবিনা। সেই প্রতারককে ধরতে পাঁচ দিন ধরে বিমানবন্দরে ছুটেছেন তিনি। অদম্য রুবিনা শেষ পর্যন্ত ২০ মার্চ ধরতে পারেন প্রতারককে। তাজুল ইসলাম নামের এই প্রতারকের কাছ থেকে রুবিনার টাকা উদ্ধার করে দেন বিমানবন্দরে ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। সেইসঙ্গে প্রতারণার অপরাধে তাজুল ইসলামকেও দেন দুই বছরের কারাদণ্ড। ম্যাজিস্ট্রেটস অল এয়ারপোর্টস অব বাংলাদেশের ফেসবুক পেজে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই প্রশংসা করছেন রুবিনার সাহসিকতার।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, সৌদি আরব প্রবাসী রুবিনা আক্তার দেশে আসেন ১৬ মার্চ সকালে। বিমানবন্দরের এক নম্বর আগমনী টার্মিনাল থেকে প্রতারক তাজুল ইসলামের ফাঁদে পড়েন। জয়পুরহাটের রুবিনাকে তাজুল জানায়, তার গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরের হিলিতে। একমাত্র বোনকে দুবাইয়ের ফ্লাইটে তুলে দিতে এসেছে বলে জানায় সে। একই এলাকার হওয়ায় একসঙ্গে গ্রামে ফেরার কথা বলে তাজুল। রুবিনাও সরল বিশ্বাসে তাজুলের সঙ্গে গাড়িতে চড়ে বসেন। ফার্মগেটে এসে রুবিনাকে অজ্ঞান করে তার কাছে থাকা টাকা হাতিয়ে সটকে পড়ে তাজুল।
ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে ম্যাজিস্ট্রেটস অল এয়ারপোর্টস অব বাংলাদেশের ফেসবুক পেজে। সেখানে উল্লেখ করা হয়, তাজুলকে কাছাকাছি এলাকার মানুষ ভেবে বিশ্বাস করেন রুবিনা। তাজুলের কথায় বাড়ি ফিরতে একসঙ্গে দুজন গাবতলীর উদ্দেশ্যে যাত্রা দেন। ফার্মগেটে বাস পরিবর্তনের পর রুবিনার জন্য পাউরুটি আর পানি কিনে নিয়ে আসে তাজুল। রুবিনা পানি আর পাউরুটির জন্য টাকা দিতে চাইলে তাজুল তা নেয়নি। পানি খাওয়ার সময় রুবিনার মুখ বেয়ে পানি পড়লে তাজুল নিজের রুমাল বের করে সযত্নে তা মুছে দেয়। এরপরই রুবিনা শরীর অবশ হয়ে আসতে থাকে। রুবিনার বুঝতে পারছিলেন, তার ভ্যানিটি ব্যাগ খুলে সব টাকা নিতে থাকে তাজুল। কিন্তু ততক্ষণে অচেতন হয়ে পড়ায় রুবিনা তাকে কিছুই বলতে পারেননি।
তবে প্রতারিত হয়েও দমে যাননি রুবিনা। ঢাকায় তার বান্ধবী শম্পার বাসার ওঠেন তিনি। বান্ধবীর বাসা থেকে প্রতিদিন বিমানবন্দরে ঘুরতে থাকেন প্রতারক তাজুলকে ধরতে। ২০ মার্চ তাজুলকে বিমানবন্দরে খুঁজে পান রুবিনা। ছুটে গিয়ে রুবিনা তার কলার ধরে উত্তম-মধ্যম দিতে শুরু করেন। পাশেই থাকা বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে হাজির হলে রুবিনাকে প্রতারক বলে চিৎকার করতে থাকে তাজুল। পরে আর্মড পুলিশ সদস্যদের জিঙ্গাসাবাদে ধরা পড়ে তাজুলের প্রতারণার ঘটনা। তাজুলকে বিমানবন্দরে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে হাজির করা হলে দু’বছরের জেল দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইউসুফ।
জানা গেছে, প্রবাসী রুবিনার পাঁচ বছরের ছেলে দশনি অসুস্থ বাংলাদেশে। ছেলের চিকিৎসা করাতে টাকা নিয়ে দেশে ফিরেছেন তিনি। তার সঙ্গে থাকা ১২ হাজার টাকা নিয়ে পালায় প্রতারক তাজুল। রাজধানীর মোহাম্মদপুরে একটি ফ্ল্যাটে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে থাকে তাজুল। রুবিনার কাছ থেকে নেওয়া টাকা স্ত্রীর কাছেই রাখে সে। পরে বিমানবন্দরে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের তৎপরতায় সে টাকা উদ্ধার করে রুবিনাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
বিমানবন্দরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইউসুফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সৌদি প্রবাসী রুবিনা সাহসী হয়ে অপরাধী শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন বলেই সাজা দেওয়া সম্ভব হয়েছে। শাহজালালে যাত্রীদের বিদায় দিতে কিংবা নিতে অনেক লোকজন আসেন। যাত্রীদের এসব স্বজনদের ভিড়ের সুযোগ নেয় প্রতারকরা। মানুষ সচেতন হলে এ ধরনের প্রতারণা থেকে বাঁচা সম্ভব হবে।’
/সিএ/টিআর/