নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন আতিয়া মহলের আশপাশের মানুষ

আতিয়া মহলসিলেটের দক্ষিণ সুরমায় শিববাড়িতে ‘আতিয়া মহলে’ সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডো ইউনিটের নেতৃত্বে চলছে অভিযান। ওই বাড়ির মধ্যে অবস্থানরত জঙ্গি ও প্যারা-কমান্ডো ইউনিটের মধ্যে তিন দিন ধরে চলছে গুলি বর্ষণ আর গ্রেনেড বিস্ফোরণের ঘটনা। এর মধ্যে সোমবার (২৭ মার্চ) দুপুর পৌঁনে ২টার পর থেকে আবারও শুরু হয়েছে টানা গোলাগুলি। এদিকে, শিববাড়ি এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নেই। আতিয়া মহলের আশপাশের বাড়ি থেকে প্রতিবার ঢোকার ও বের হওয়ার সময়ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জেরার মুখে পড়তে হচ্ছে স্থানীয়দের। এসব সমস্যা ও জঙ্গি অভিযানের আতঙ্কে অনেকেই শিববাড়ি এলাকা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে ছুটছেন।
সোমবার (২৭ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যেই শিববাড়ি, পাঠানপাড়া, জৈনপুর, বান্দরঘাট, গোটাটিকর, খানবাড়ি, ফকিরপাড়া, চান্দাইয়ের অন্তত ১৫-২০টি পরিবারকে বাসা ছেড়ে পুলিশি পাহারায় বের হয়ে যেতে দেখা যায়। এরপরও বিচ্ছিন্নভাবে আতিয়া মহলের আশপাশের অনেক পরিবারই ছাড়ছেন বাসা। এদিন দুপুর পৌনে ২টার পর থেকে ফের টানা গোলাগুলি শুরু হলে বেশকিছু পরিবারকে চলে যেতে দেখা গেছে এলাকা ছেড়ে।
আতিয়া মহল থেকে খানিকটা দূরেই সফুরা কমপ্লেক্সের পঞ্চম তলায় থাকতেন অসিত আচার্য। স্থানীয় একটি পেট্রোল পাম্পে চাকরি করেন তিনি। দুপুর আড়াইটার দিকে ছেলে অপূর্ব আচার্য ও ছেলের স্ত্রীসহ সবাইকে নিয়ে সুবিদ বাজারে এক আত্মীয়ের বাসার উদ্দেশ্যে এলাকা ছাড়েন তিনি।
অসিত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তিন দিন ধরেই বিদ্যুৎ নেই। সবসময় গ্যাস থাকছে না, পানিও থাকছে না ঠিকমতো। রান্না করতে পারছি না। শুকনো খাবার খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে। আর দিন-রাত গোলাগুলির শব্দ তো আছেই। এত আতঙ্কের মধ্যে আর থাকতে পারছি না।’
আতিয়া মহলের কাছাকাছি একটি বাড়িতে থাকেন আতাউর রহমান নামের এক ব্যবসায়ী। তিনিও এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। জাফলংয়ে শ্বশুর বাড়িতে থাকবেন জানিয়ে আতাউর বলেন, ‘চার দিন ধরে বাসায় রান্না করার উপায় নেই। খাবারের কষ্ট ছাড়াও আতঙ্ক তো আছেই। বাসা থেকে বের হলেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চেক করেন। বাসায় ঢুকতেও চেক করেন। এমন পরিস্থিতিতে আর পরিবার নিয়ে এখানে থাকা সম্ভব না। তাই শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছি। পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত সেখানেই থাকব।’
এদিকে চার দিনেও অভিযান সম্পন্ন না হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। স্থানীয় পাঠানপাড়া নূরপুরের বাসিন্দা মুক্তাদির আলম অ্যাপোলো বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সেনাবাহিনী তাদের এত এত সদস্য নিয়ে এসেছে, চার দিন সময়ও কেটেছে। তবুও অভিযান কেন শেষ করতে পারছে না, এটা আমরা বুঝতে পারছি না। এলাকায় আমাদের সবাইকে আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে। মনে হচ্ছে, এখানে কোনও যুদ্ধ হচ্ছে আর আমরা যুদ্ধের মধ্যে আটকা পড়েছি।’
অ্যাপোলো আরও বলেন, ‘আমাদের বাসায় গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ কিছুই নেই। শুধু তাই নয়, আজ (সোমবার) সকাল থেকে ইন্টারনেট সংযোগও নেই। সবকিছু থেকে যেন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি আমরা।’
sylhetএদিকে, শিববাড়িসহ আশপাশের এলাকার স্কুল-কলেজ নিরাপত্তাজনিত কারণে বন্ধ রয়েছে। নিরাপত্তার কারণে কাউকেই বাসা থেকে বের না হওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন সিলেট মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার জেদান আল মুসা (গণমাধ্যম)।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) দিবাগত মধ্যরাতে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানাধীন শিববাড়ি এলাকায় ‘আতিয়া মহল’ নামে পাঁচতলা বাড়ির নিচতলায় জঙ্গিরা অবস্থান করছে বলে জানতে পারে ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। শুক্রবার (২৪ মার্চ) সকাল ৮টার দিকে ওই বাড়ির ভেতর থেকে গ্রেনেড ছোঁড়া হয়। পরে ঢাকা থেকে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াতকে পাঠানো হয় ঘটনাস্থলে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সন্ধ্যা থেকে পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণে নেয় সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডো দল। পরদিন তারা ওই ভবনের অন্যান্য বাসিন্দাকে নিরাপদে সরিয়ে আনে।
২৫ মার্চ সন্ধ্যায় আতিয়া মহলের পাশে দুই দফা কাউন্টার অ্যাটাকে দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ছয় জন নিহত হন। আহত হয়েছেন র্যা বের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধানসহ অন্তত ৫০ জন। রবিবার (২৭ মার্চ) সন্ধ্যায় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, অভিযানে তাদের হাতে অন্তত দুই জঙ্গি নিহত হয়েছেন।
/টিআর/