অবশেষে পুলিশের হস্তক্ষেপে মাকে ফিরে পেলেন জয়নাল

উদ্ধার হওয়ার পর জহুরা বেগম
বাড়ি থেকে রাগ করে বেরিয়ে এসেছিলেন জহুরা বেগম (৫০)। দিনাজপুরের বীরগঞ্জ থেকে ঢাকায় এসে উত্তরার হাউজবিল্ডিং এলাকায় নামেন বাস থেকে। ছেলে থাকে টঙ্গীতে। কিন্তু ছেলের কাছে যাননি। উদ্দেশ্যহীন ঘোরাফেরা করতে গিয়ে এক দারোয়ানের সঙ্গে কথা হয় তার। সেই দারোয়ান তাকে ৯ নম্বর সেক্টরের ৭/বি সড়কের ৪/সি নম্বর বাসায় নিয়ে যায়। ওই ভবনের পাঁচ তলায় সাবেক সচিব এটিএম আবুল কালামের বাসায় কাজের বুয়া হিসেবে যোগ দেন জহুরা বেগম। এই ঘটনা বছর তিনেক আগের। এর মাঝে সন্তানের প্রতি রাগ কমে যায়। বাড়ি ফিরতে চান তিনি কিন্তু গৃহকর্তা আবুল কালাম ও তার পরিবারের সদস্যরা জহুরাকে বাড়ি ফিরতে দিতে রাজি হননি। একরকম জোর করেই তাকে আটকে রাখেন বাড়িতে। তিন বছর পর আরেক বুয়ার সাহায্যে ছেলের কাছে ফোন করে নিজের অবস্থানের কথা জানান। ছেলে জয়নাল স্বজনদের নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে ওই বাসায় যান। কিন্তু প্রথমে আবুল কালামের স্বজনরা তাদের বাসার ভেতরে ঢুকতে দিতে চাননি। পরে উত্তরা থানায় গিয়ে পুলিশকে ঘটনা জানালে পুলিশ গিয়ে ওই বাসা থেকে জহুরা বেগমকে উদ্ধার করে ছেলের হাতে তুলে দেন। দিনভর নাটকীয়তার পর চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার সমাধান হয় রাত ৯টার দিকে। পুলিশ ও স্বজনদের কাছ থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

পরিবার সদস্যদের সঙ্গে ফিরে যাচ্ছেন জহুরা বেগম
জয়নাল জানান, দিনাজপুরের বীরগঞ্জ থানাধীন মরিচা ইউনিয়নে তাদের বাড়ি। তিনি টঙ্গীতে একটি গার্মেন্ট কারখানায় কাজ করেন। তিন বছর আগে তার মা রাগ করে বাসা থেকে বেরিয়ে আসেন। গ্রামের বাড়ির লোকজন প্রথমে ভেবেছিল মা (জহুরা) টঙ্গীতে তার কাছে আছেন। আর জয়নাল ভেবেছিলেন মা গ্রামের বাড়িতেই আছেন। কয়েকদিন পর মায়ের নিখোঁজ হওয়ার খবর জানতে পারেন তিনি। এরপর থেকেই মায়ের খোঁজ করে আসছিলেন।
জয়নাল জানান, কয়েকদিন আগে এক নারী তাকে ফোন করে তার মায়ের খবর দেন। পরে মায়ের সঙ্গে ফোনে তিনি নিজেও কথা বলেন। ওই নারী (ছুটা বুয়া) বাসার ঠিকানা দিলে জয়নাল পরিবারের ৮-১০ জন সদস্যকে নিয়ে ওই বাসায় যান। সকালে তার বোন জামাই বাচ্চু মিয়া ওই বাসায় গেলে গৃহকর্তা আবুল কালামের স্ত্রী খারাপ ব্যবহার করে তাড়িয়ে দেন। এরপর তারা সবাই ওই বাসার সামনে অপেক্ষা করছিলেন। পরিচিত এক সাংবাদিককে তিনি বিষয়টি জানান। এর মধ্যে দুপুরে একবার তাদের সঙ্গে জহুরা বেগমের দেখা হয়। এসময় জহুরা বেগম কান্নায় ভেঙে পড়েন। কিন্তু গৃহকর্তা জোর করে তাকে বাসায় আটকিয়ে রাখেন। পরিচিত ওই সাংবাদিক ঘটনাস্থলে গেলে তার মাধ্যমে তারা বিকেলে উত্তরা পশ্চিম থানায় গিয়ে মৌখিক অভিযোগ করেন।

ছেলে ও স্বজনদের সঙ্গে ফিরে যাচ্ছেন জহুরা বেগম
জয়নালের প্রতিবেশী ওই সাংবাদিক ইউসুফ আলী শিমুল জানান, থানায় গিয়ে পুরো ঘটনা খুলে বললে থানা থেকে এসআই মশিউর তাদের সঙ্গে ওই বাসায় যান। তারপর এসআই মশিউর রহমান গৃহকর্তার সঙ্গে আলোচনা করেন। এসময় ওই ভবনের মালিক ব্যারিস্টার পাপন নামে এক ব্যক্তিও উপস্থিত ছিলেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের জানানো হলে উত্তরা পশ্চিম থানার পরিদর্শক (অপারেশন) শাহ আলমকে ওই বাসায় পাঠানো হয়। তিনি গিয়ে জহুরা বেগমকে ছেলের হাতে তুলে দেন।
ছেলের কাছে ফিরে আসার পর মা জহুরা বেগম মাঝে মধ্যেই গৃহকর্তা ও তার পরিবারের সদস্যরা নির্যাতন করতো বলে অভিযোগ করেছেন। তবে পুলিশ কর্মকর্তারা তাদের থানায় লিখিত অভিযোগ করতে বললেও হয়রানির ভয়ে তারা অভিযোগ করতে রাজি হননি। জহুরা বেগমের আরেক স্বজন বাচ্চু মিয়া ও লাল মিয়া জানিয়েছেন, তিন বছর কাজ করলেও গৃহকর্তা তাদের কোনও মজুরি দেননি। মজুরির কথা বললে তাদের এক সপ্তাহ পরে আসতে বলা হয়। একইসঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করতেও নিষেধ করা হয়। নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভেবে জহুরা সন্তানসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রাতে বাড়ি ফিরে যান।
ঘটনাটি সম্পর্কে জানতে চাইলে পুলিশের উত্তরা বিভাগের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা পুরো ঘটনার কথা স্বীকার করে বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের থানায় অভিযোগ করতে বলা হয়েছিল। তারা লিখিত কোনও অভিযোগ দেয়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যেত।

/টিএন/