শনিবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের আয়োজনে মিরপুর ও তেজগাঁও শিশু পরিবারের সুবিধা বঞ্চিত ৩০ জন শিশু-কিশোরের উড়োজাহাজে ভ্রমণ ও ঈদ উপহার বিতরণ করা হয়। উড়োজাহাজে ভ্রমণ শিশুদের বিনোদন হলেও শেষ পর্যন্ত শুধু বিনোদন থাকেনি। এই ভ্রমণ তাদের স্বপ্ন বদলে দিয়েছে, বদলে দিয়েছে জীবনের লক্ষ্যও।
সিলেট যাওয়ার সময় বিমানে চড়ে পুলকিত হয়ে উঠে শিশু-কিশোররা। মিরপুর শিশু পরিবারের আট ধরে থাকা ষষ্ঠ শ্রেণির এই ছাত্র মো. সোহেল রানা জানায়, ‘আমি কোনও দিন ভাবতে পারিনি, বিমানে চড়বো। যেদিন থেকে আমি শুনেছি বিমান চড়বো, সেদিন থেকে অপেক্ষা করেছি। আমার কাছে স্বপ্নের মতো হয়েছে।’
বোয়িং ৭৩৭ উড়োজাহাজের জানালা দিয়ে মেঘের দিকে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে মেহেদী হাসান। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া এই ছাত্র জানায়,‘উড়োজাহাজের উপরেও মেঘ, নিচেও মেঘ, আর আমি এর মধ্যে উড়োজাহাজে রয়েছি। বড় হয়ে কী করবে জানতে চাইলে মেহেদী হাসান জানায়,আমি পাইলট হবো।’ মেহেদীর আগেও পাইলট হওয়ার স্বপ্ন ছিলো না। লেখা পড়া শেষ করে চাকরি করার স্বপ্ন ছিল তার।
সিলেটে ওসামানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইটটি অবতরণের পর পাইলট নওশাদ আতাউল কাইউম ককপিট থেকে এসে শিশুদের সঙ্গে কথা বলেন, ছবি তুলেন। পাইলট নওশাদ আতাউল কাইউমকে কাছে পেয়ে পাইলট হওয়ার স্বপ্ন আরও জেগে বসে শিশুদের মনে। পাইলট নওশাদ আতাউল কাইউমের সঙ্গে ককপিটে ফার্স্ট অফিসার মুনজারিন। তিনিও শিশুদের সঙ্গে কথা বলেন। তাকে দেখেও কিশোরীদের মনেও পাইলট হওয়ার স্বপ্ন দানাবাঁধে।
নওশাদ আতাউল কাইউম বলেন, ‘সব শিশুর মধ্যে প্রতিভা রয়েছে, এটি জাগিয়ে তুলতে হয়। আজকে আমার জন্য একটি বিশেষ দিন। একসঙ্গে ত্রিশজন শিশুকে নিয়ে ফ্লাই করেছি। এমন সুযোগ আগে কখনও হয়নি।’
অভাব অনটনের কারণে পরিবারকে ছেড়ে ছয় বছর ধরে মিরপুরের শিশু পরিবারের রয়েছেন মো. ইসমাইল। শিশু পরিবারে বেড়ে উঠা ইসমাইল উড়োজাহাজে চড়ে উচ্ছ্বাসিত। ইসমাইল বলেন, ‘জীবনে কোনও দিন উড়োজাহাজে ওঠার সুযোগ হতো কিনা আমি জানি না। তবে আজকে আমার স্বপ্ন সত্য হয়েছে।’
তেজগাঁও শিশু পরিবারের উপ-তত্ত্ববধায়ক ঝর্ণা জাহিন বলেন, ‘আমাদের শিশু পরিবারের উপর দিয়ে উড়োজাহাজ উড়ে যায়। ছোট শিশুরা রুম থেকে ছুটে উড়োজাহাজ দেখে। আমি কোনও দিন ভাবতে পারিনি, আমার বাচ্চাদের বিমানে চড়াতে পারবো। আজ এ ভ্রমণে তাদের স্বপ্ন বদলে গেছে। অনেক মেয়ে আমার কাছে এসে বলছে তারা পাইলট, কেবিন ক্রু হতে চায়। আমি তাদের স্বপ্ন বদলে যেতে দেখে আনন্দিত।’
নবম শ্রেণির ছাত্রী তাহমিনা রচনা বলেন, ‘আজকের দিনটি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ দিন।’
এ আয়োজন প্রসঙ্গে বিমানের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ বলেন, ‘সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে বিমান বাংলাদেশ সুবিধাবঞ্চিত ৩০জন শিশু-কিশোরদের জন্য ব্যতিক্রম এই আয়োজন করেছে। বিমানের রয়েছে মজবুত ও স্থায়ী সামাজিক দায়বদ্ধতা বোধ। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি বিমান সামাজিক উন্নয়নে অংশিদারিত্ব রেখেছে প্রতিষ্ঠান শুরুর পর থেকেই।’
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এ এম মোসাদ্দিক আহমেদ বলেন, ‘শিশুদের নিয়ে আয়োজন নিছক বিমান ভ্রমণ নয়, এটা তাদের জন্য অনুপ্রেরণা। জীবনের সফল ও সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য আমরা তাদের অনুপ্রাণিত করছি। রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স শুধুমাত্র একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান নয়, বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের সেতুবন্ধনেরও প্রতীক।
/এসএমএ/