পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে গেল সন্দেহভাজন জঙ্গি!

সাভারে জঙ্গি আস্তানায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানসাভারের গেন্ডা এলাকার সন্দেহভাজন জঙ্গি সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্র্যান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, সন্দেহভাজন জঙ্গিদের প্রকৃত নাম-পরিচয় না জানার কারণে অভিযানে অংশ নেওয়া পুলিশের সামনে দিয়েই একজন জঙ্গি পালিয়ে যেতে পেরেছে।  শনিবার (২৭ মে) বিকালে অভিযান সংশ্লিষ্ট সিটিটিসির কর্মকর্তা এ তথ্য জানান।

ঢাকা জেলা পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, শুক্রবার (২৬ মে) রাত সাড়ে আটটার দিকে ব্যাগ হাতে আমার সামনে দিয়েই চলে গেছে একজন জঙ্গি সদস্য। দাঁড়িওয়ালা ওই ব্যক্তি খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই হেঁটে গেছে। তবে আমাদের দেখে রাস্তা ছেড়ে দিয়ে পাশের ঘাসের ওপর দিয়ে হেঁটে গেছে সে। আগে থেকে তার চেহারা না চেনার কারণে ওই জঙ্গি সদস্য সহজেই আমাদের ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে।

পরে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্র্যান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের কর্মকর্তা ও সোর্সের মাধ্যমে জঙ্গি সদস্যদের চেহারার বর্ণনা শুনে তিনি বোকা হয়ে যান। এরপরই তাদের মধ্যে আক্ষেপ শুরু হয়।

অভিযান পরিচালনাকারী কর্মকর্তারা জানান, কসমেটিকস তৈরির কারখানার কথা বলে তিন মাস আগে নামা গেণ্ডার আনোয়ার মোল্লার বাড়ি ও মধ্য গেণ্ডার আবদুল হালিমের বাড়ির আটটি রুম একই সময়ে  ভাড়া নিয়েছিল তারা।এরপর চলতি মে মাস থেকে সাকিব আহমেদ অলকের বাড়িও ভাড়া নিয়েছিল জঙ্গিরা।সেখানে দুজন থাকার কথা বলা হলেও অনেক ব্যক্তির যাতায়াত ছিল বলে সিটিটিসির কর্মকর্তারা ধারণা করছেন। কারণ অভিযান পরিচালনার সময় জলন্ত চুলার ওপরে একটি বড় ভাতের পাতিল দেখতে পেয়েছেন তারা। পাতিলে ৫-৬ জন লোকের রান্না হচ্ছিল বলে তারা ধারণা করেন।

সিটিটিসির কর্মকর্তারা জানান, সাভারের নামা ও মধ্য গেন্ডার অন্তত চারটি বাসা ভাড়া নিয়েছিল জঙ্গি সদস্যরা। তাদের ধারণা, প্রথমে নামা গেণ্ডার আনোয়ার মোল্লার বাড়িতে অভিযানের খবর পেয়ে সবাই যে যার মতো পালিয়ে গেছে। যে কারণে পরবর্তীতে আরও তিনটি বাসায় অভিযান চালিয়েও আর কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে মধ্য গেন্ডার সাকিব আহমেদ পলকের বাড়ির দ্বিতীয় তলায় সাতটি গ্রেনেড, তিনটি সুইসাইডাল ভেস্ট ও প্রচুর পরিমাণে বোমা তৈরির সরঞ্জামাদি খুঁজে পান পুলিশ কর্মকর্তারা।কাউন্টার টেরোরিজমের বোম্ব ডিজপোজাল ইউনিটের সদস্যরা সেগুলো সবই নিষ্ক্রিয় করেছেন।

সিটিটিসির একজন কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, আনোয়ার মোল্লার বাড়িতে অভিযান শেষে কাউকে পাওয়া যায়নি। এসময় সোর্স মারফত জানতে পারেন, ওই জঙ্গিদের কাছাকাছি আরও আস্তানা আছে। সেখানে গেলেই তাদের পাওয়া যাবে। এরপর সেখান থেকে প্রায় দেড়শ গজ পূর্ব দিকে মধ্য গেণ্ডার আবদুল হালিমের বাড়িতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালায়। সেখানেও তল্লাশি চালিয়ে কাউকে খুঁজে পায়নি ঢাকা জেলা পুলিশ ও কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের যৌথ টিম। এরপর সেখান থেকে পাশের সাকিব আহমেদ অলকের নির্মাণাধীন ছয় তলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় যাওয়ার সময় অভিযান পরিচালনাকারী সদস্যদের সামনে দিয়েই ব্যাগ হাতে এক ব্যক্তিকে যেতে দেখেন ঢাকা জেলা পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা।

এবিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘একজন ব্যক্তিকে কালো ব্যাগ নিয়ে একটি বাসায় ঢুকতে দেখেছিলেন অভিযান পরিচালনাকারী টিম। পরে তারা সেই বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে খুঁজে পায়নি। আসলে জঙ্গি বিষয় নিয়ে কাজ করে থাকে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্র্যান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট।এক্ষেত্রে ঢাকা জেলা পুলিশ কেবল তাদের সহযোগিতা করেছে।’

/এপিএইচ/

আরও পড়ুন:

সাভারে প্রসাধনী ব্যবসার আড়ালে বোমা তৈরির কারখানা