বুধবার সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন ফিলিং স্টেশনগুলো ঘুরে দেখা গেছে- কোথাও গ্যাস সরবরাহ নেই। সিএনসি ও মাইক্রোবাসসহ গ্যাসে চালিত বিভিন্ন ধরনের যানবাহনগুলো ফিরে যাচ্ছে। স্টেশনগুলোতে শুধু ডিজেল বিক্রি করা হচ্ছে। পান্থপথ ও শাহবাগে গ্যাস শেষ হয়ে যাওয়া কয়েকটি যানবাহন রাস্তায় পড়ে ছিল। গ্যাস ফুরিয়ে যাওয়া কয়েকটি বাস অন্য গাড়ির সাহায্যে টেনে নিয়ে যেতেও দেখা গেছে।
দুপুরের দিকে রাজধানীর রূপসী বাংলা হোটেলের মোড়ের শাহজাহান এন্টারপ্রাইজেস লিমিটেডের ফিলিং স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, স্টেশনটির দুটো গেটই বন্ধ রয়েছে। দায়িত্বরত কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত রাত (মঙ্গলবার) ১২টা থেকে লাইনে গ্যাস বন্ধ রয়েছে। প্রথমে আমরা বিষয়টি জানতাম না। রাত সাড়ে ১০টার দিকে কয়েকজন সাংবাদিক গ্যাস নিতে আসলে তাদের কাছ থেকে বিষয়টি জানতে পারি। পরে আমাদের হেড অফিসে ফোন করলে তারা খবর নিয়ে দেখেন তিতাস কোম্পানির লাইনে কাজ করার কারণে আজ গ্যাস সংযোগ বন্ধ থাকবে।’
এই ব্যক্তি আরও জানান, বিষয়টি সিএনজিসহ অনেক গাড়ির চালক জানেন না। সকাল থেকে তারা গ্যাসের জন্য এসে দেখেন গ্যাস নেই। কয়েকজন নিয়মিত কাস্টমার (চালক) আমাদের ওপর ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন। কারণ, আগে থেকে আমরা বিষয়টি তাদের জানাতে পারিনি।
পান্থপথ মোড়ে গ্যাস শেষ হয়ে যাওয়ায় বসে আছেন সিএনজিচালক নজরুল। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ মঙ্গলবার রাত ১২টার কিছুক্ষণ আগে খবরটি পেয়েছি। সঙ্গে সঙ্গে গ্যারেজ থেকে সিএনজি নিয়ে ৩০০ টাকার গ্যাস নিয়েছি। আজ (বুধবার) দুপুর পর্যন্ত চালাতে পেরেছি। এখন গ্যাস নেই। গ্যারেজেও নিতে পারছি না।’
তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আরেক সিএনজিচালক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমি জানতাম না। রাতেও কিছু গ্যাস ছিল। সকালে বের হয়ে ১৫০ টাকা ভাড়া উঠিয়েছি। এখন বসে আছি। এক হাজার টাকা মালিককে সিএনজি ভাড়া দিতে হবে। কোথা থেকে দেবো। কাল যা আয় করেছি তা আজ দিয়ে দিতে হবে। গ্যাস থাকবে না এটা আগে জানলে, আজ বের হতাম না।’
শুধু নজরুল কিংবা রাজ্জাক নয়, তার মতো এমন হাজারো সিএনজিচালককে আজ বিপাকে পড়তে হয়েছে। গ্যাস না পেয়ে বেশিরভাগ চালক সড়কে বের হতে পারেননি। উপার্জন হয়নি কারও। যে কারণে আজ ধার-দেনা করে চলতে হয়েছে তাদেরকে।
এদিকে ঈদের টানা তিন দিন ছুটি শেষে বুধবার সকাল থেকে অফিস-আদালত শুরু হয়েছে। রাস্তায় সিএনজি চালিত অটোরিকশা কম থাকায় মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (২৭ জুন) দিবাগত রাত ১২টা থেকে বুধবার রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকার বিষয়ে কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। বাংলা ট্রিবিউনকে এ তথ্য জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খণিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা আসলাম উদ্দিন।
এই কর্মকর্তা বলেন, ‘বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রের সংস্কার কাজ প্রতি বছরই হয়। এবারের কার্যক্রমও পূর্বনির্ধারিত। ঈদের আগে জনগণকে এ বিষয়টি জানাতে ছয়টি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। আর এটি নতুন ঘটনা নয়। প্রতি বছরই বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রের সংস্কার কাজ হয়ে থাকে।’
সংস্কারের জন্য এ সময়কে বেছে নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ঈদের সময়টাতে দেশের কলকারখানা বন্ধ থাকে। বাসাবাড়ির লোকজন গ্রামেই অবস্থান করেন বেশি। ফলে গ্যাসের চাপ থাকে কম। তাই এ সময়ে সংস্কার কাজ করা হয়।’
/এসএস /এপিএইচ/