গত বুধবার (৫ জুলাই) ভোরে রাজধানীর গেণ্ডারিয়ার ঢালকানগরে একটি বাসার গ্যাসের লাইন লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে একই পরিবারের ৭ জন দগ্ধ হয়। তারা হলেন- আলেয়া বেগম (৫০), তার মেয়ে শাহিদা বেগম (৩৫),শাহিদার স্বামী শরীফুল ইসলাম (৪২), তাদের দুই শিশুসন্তান শরীফা ও শুভ, শাহানাজ আক্তার (২৮) এবং শাহনাজের স্বামী আলী আকবর (৪০)। শরীফের শরীরের ৪৫ শতাংশ, শাহিদা, আলেয়া বেগম ও আলী আকবরের ২৫ শতাংশ, শাহনাজ বেগমের ৯ শতাংশ, শরীফার ২ শতাংশ ও শুভর ৯ শরীরের শতাংশ পুড়ে গেছে। তবে শরীফ, শাহিদা, আলেয়া বেগম ও আলী আকবরের শ্বাসনালী পুড়ে যাওয়ায় তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানান বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন ডা. পার্থ শংকর পাল।
এক পরিবারের সাত সদস্য একইসঙ্গে অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়াতে ইউনিটের সবার দৃষ্টি এখন তাদের দিকে। বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) দুপুরে ঢামেক বার্ন ইউনিটের চারতলায় গিয়ে শুভ আর শরীফার খোঁজ নিতেই দেখা গেল, ওয়ার্ডের সবাই তাদের চেনে। এগিয়ে গিয়ে কথা বলতেই শরীফা শূন্য দৃষ্টি নিয়ে উঠে বেডে বসে। কোথায় পুড়েছে জানতে চাইলে হাত আর মুখটা দেখিয়ে দেয়। স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া শরীফা ক্ষীণ কন্ঠে বলে, ‘আমার আব্বার অবস্থা বেশি খারাপ, সে যেন বাইচে উঠে। তার জন্য আপনারা দোয়া কইরেন।’
নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন শরীফের ভাইয়ের ছেলে সালাউদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, খবর শুনে তিনি হাতিয়া থেকে বুধবারই ঢাকায় চলে এসেছেন। পরিবারের আর কেউ ঢাকায় আসার মতো নেই জানিয়ে সালাউদ্দিন বলেন, ‘আমরা খুব গরিব। কে এসে কতদিন থাকবে এখানে, সবাই কাজ করে খায়। এখানে আসলে খাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘চাচার অবস্থা অনেক বেশি খারাপ। তার বেশিরভাগ ওষুধই বাইরে থেকে আনতে হচ্ছে, এভাবে কতদিন চলবে তা নিয়ে চিন্তায় আছি। আমরা গরিব মানুষ, চাচাই এই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। উনি সুস্থ না হলে তো এই সংসারই চলবে না। এই মানুষগুলোর চিকিৎসা ফ্রি করে দেওয়ার জন্য আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানাই।’
ঘটনা সম্পর্কে বলতে গিয়ে শাহিদার বড় ছেলে রাকিব জানান, ঘটনার সময় তিনি টয়লেটে গিয়েছিল, এ সময় বিকট শব্দে বাসা কেঁপে ওঠে। তিনি তাড়াতাড়ি টয়লেট থেকে বেরিয়ে দেখেন, বাসার সবার গায়ে আগুন জ্বলছে। এসময় সবাই চিৎকার করতে থাকলে প্রতিবেশীরা দরজা ভেঙে ভেতরে ঢোকে। তারপর সবার গায়ের আগুন নেভানো হলে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।
রাকিব বলেন, ‘গত তিনমাস ধরে গ্যাসলাইন থেকে গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। বাড়িওয়ালাকে বললেও তারা গুরুত্ব দেয়নি। এ কারণে একটি পরিবারের সবাইকে একসঙ্গে মরতে হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘এতগুলো মানুষের চিকিৎসা কীভাবে চলবে ভাবতে পারছি না, চোখে অন্ধকার দেখছি আমি।’ বার্নিশ মিস্ত্রি রাকিব বলেন, ‘এতগুলো মানুষ হাসপাতালে ছটফট করছে, আমি একা কী করবো। কাজে না গেলে টাকা পাব কোথায়, আর আমি গেলে এই মানুষগুলোর পাশে থাকবে কে।’
/এএম/আপ-এআর/