শনিবার (৮ জুলাই) সাভারের সোবহানবাগে দুই তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনাস্থল ওই ভবনটিতে বসবাসকারী ও এর আশপাশের বাসিন্দা, সাভার থানা ও ঢাকা জেলা উত্তরের ডিবি কার্যালয় সরেজমিনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ধর্ষণের ঘটনায় মূল হোতা লিটন আলী ছাড়াও তার সঙ্গে আরও একটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য ছিলেন, তারা দুজন একসঙ্গে পালিয়ে গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাভার থানার ওসি মহসিনুল কাদির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তরুণীরা মামলার এজাহারে লিটন, মিজান ও মোকাররম ছাড়া আর কারও নাম বলেননি। তাই লিটনের ওই সহযোগীর বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না’
রুম ছাড়ার নির্দেশ দেওয়ার পরও তারা জোর করেই এই মেসে অবস্থান করছিল। এ কারণে সপ্তাহখানেক আগে বাড়ির মালিক লিটনকে বের করে দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে লিটন আলী মণ্ডল ভবনের মালিক কবির হোসেনকে হুমকি দিয়ে চলে যায়।
মালিকের একজন ঘনিষ্ঠ স্বজন নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মেস থেকে বের করে দেওয়ার কারণে ভবন মালিক ও ভবনে অবস্থিত কলেজের সুনাম ক্ষুণ্ন করতেই লিটন পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। তার হয়তো আরও বড় ধরনের কোনও পরিকল্পনা থাকতে পারে। কিন্তু তরুণীদের একজন কমন রুমের বারান্দায় গিয়ে চিৎকার করার কারণে আশেপাশের সবাই ঘুম থেকে জেগে ওঠে। যে কারণে বাড়ির মালিক কবির হোসেনকে ফাঁসাতে পারেনি।
সূত্রমতে, পরিকল্পিতভাবে ধর্ষণের ঘটনা ঘটানোর জন্য আগে থেকেই লিটন তার পূর্ব- পরিচিত মিজানকে হাত করে। মিজান কলেজ চলাকালীন কলেজের নিরাপত্তা-কর্মকাণ্ড ও আনুষঙ্গিক কাজ করতো। তবে কলেজ ছুটি হওয়ার পর বিকালের মধ্যেই কলেজ ভবন থেকে চলে যেতো।
সূত্র জানায়, প্রতিদিন কলেজ শেষ হওয়ার পর মিজান চলে গেলেও বৃহস্পতিবার রাতে আবারও সে আসে সেখানে। তার মাধ্যমেই ভবনের নিরাপত্তাকর্মী মোকাররমকে দিয়ে ভবনের গেট খোলার ব্যবস্থা করা হয়।
ষষ্ঠ তলার মেসে বসবাসকারী নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে একজন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে যখন মেস মিটিং চলছিল। তখন লিটন আলী সেখানে হাজির হয়ে ভবনের নিরাপত্তাকর্মী মোকাররমকে খুঁজতেছিল। ১৬-১৭ বছর বয়সী মোকাররমও ষষ্ঠ তলায় ঘুমাতো। কিন্তু তাকে খোঁজা-খুঁজি করে না পেয়ে লিটন নিচে চলে যায়। এরপর মধ্যরাতের পর মেসের বেশিরভাগ লোকজন ঘুমিয়ে পড়ে। রাত দুটার দিকে দুই তরুণীকে নিয়ে লিটন ও তার পরিচিত একজনকে নিয়ে ভবনে প্রবেশ করেন।
নাম-পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক ভবনের আরেক জন বাসিন্দা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, লিটন তার পুরুষ সঙ্গীকে পুলিশের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে দুই তরুণীকে নিয়ে ভবনে প্রবেশ করেছিল। এসময় মিজানও তাদের সঙ্গে ছিল। মিজানের কাছে কলেজের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত কমন রুমের চাবি থাকতো।
সেই চাবি দিয়ে কমন রুম খুলে দুই তরুণীকে নিয়ে লিটন , মিজান ও লিটনের সঙ্গী (পুলিশের লোক পরিচয়দানকারী) ঢোকে। ওইসময় ভবনের প্রধান ফটকের সামনে গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক সদস্যও ছিলেন। বেশ কিছুক্ষণ ফটকের তালাও খোলা ছিল।
পরে মোকাররম বিষয়টি বাড়ির মালিক কবির হোসেনকে জানালে, তিনি মোকাররমকে ফটকে তালা মেরে ঘুমিয়ে থাকতে বলেন। পুলিশের বিষয় ভেবে তিনি আর কাউকে কিছু জানাননি।
তবে ফজরের নামাজের আগে একজন তরুণীর চিৎকারে আশ-পাশের লোকজন জড়ো হতে থাকে। ওই সময় লিটন ও তার সহযোগী বিপদ বুঝতে পেরে দ্বিতীয় তলা থেকে দৌড়ে নিচে নেমে আসে। ফটকে তালা মারা দেখতে পেয়ে তা কৌশলে ভেঙে ফেলে এবং এই ফটক দিয়েই বের হয়ে যায় তারা। এরপর পাশের ডিবি অফিসের লোকজন ওই ভবনে ঢুকে দুই নারীকে উদ্ধার করেন। এসময় মিজান ও মোকাররমকে আটক করে পুলিশের হাতে হস্তান্তর করা হয়।
/এসএমএন/ এপিএইচ/