গত ৮ জুলাই জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে গেলে চোখে পড়ে তৃতীয় তলার ডান পাশের সিঁড়ির নিচে বিছানা পেতেছেন নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ থেকে আসা রইসুল হক। তিনি বুকের ব্যথা নিয়ে গত ৬ জুলাই থেকে এই হাসপাতালে আছেন। চিকিৎসকরা প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করছেন, তাকে হাসপাতালে থাকতে হবে আরও কিছুদিন, কিন্তু এখানে বেড না পাওয়ায় মাদুরের ওপরে চাদর বিছিয়ে থাকার ব্যবস্থা করেছেন তিনি।
তৃতীয় তলার প্রশাসনিক ভবনের ফটকের বাইরে বিছানা পেতেছেন নুর মোহাম্মদ। তিনি বলেন, বারান্দায় বিছানা সাজিয়েছি ওয়ার্ডে সিট না পেয়ে। মাঝে-মাঝেই বৃষ্টি হচ্ছে আর তাতে ভিজে যাচ্ছে সব। পড়িমরি করে বিছানা তুলে কোনও রকমে সবাই মিলে কোথাও গিয়ে দাঁড়াই, আবার বৃষ্টি কমলে জায়গাটা মুছে বিছানা পাতি।
হৃদরোগ হাসপাতাল থেকে জানা যায়, তিনটি ভবনের কেবিন, ওয়ার্ড মিলিয়ে এখানের অনুমোদিত বিছানা সংখ্যা ৪১৪টি। রোগীদের ভিড়ের কারণে হাসপাতালটির সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. এসটিএম আবু আজম নিজ উদ্যোগে ২০টি বিছানার একটি ওয়ার্ডের মতো করেছেন। কিছু মিলিয়ে বিছানা সংখ্যা ৪৩৪টি হলেও হাসপাতালে প্রতিদিন ভর্তি থাকেন প্রায় ৯০০ থেকে ১ হাজার রোগী। ৫০ থেকে ৫৩ বিছানার একেকটি ওয়ার্ডে রোগী থাকছে প্রায় ২০০-এর ওপরে।
হাসপাতালের রোগীদের বারান্দায়, ফ্লোরে কেন রাখা হয়েছে জানতে চাইলে পরিচালক অধ্যাপক আফজালুর রহমান বলেন, ‘এই হাসপাতাল থেকে কাউকে ফেরানো হয় না। সিট নেই, এমন কথা কাউকে বলতে পারি না। এছাড়া, আমাদের অনেক হাসপাতাল রয়েছে, যারা নির্ধারিত সিটের বাইরে কোনও রোগী ভর্তি নেয় না। সেক্ষেত্রে ঢাকা মেডিক্যাল ও আমরা ব্যতিক্রম। কাউকে না কাউকে তো রোগীদের নিতেই হবে। তাই অনেক রোগীই যখন অন্য হাসপাতালগুলোতে বিছানা পান না, তখন তারা এ হাসপাতালে চলে আসেন। এভাবেই বেড়েছে রোগীর ভিড়।’
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে শতকরা প্রায় ৫৩ ভাগ মৃত্যুর কারণ হলো অসংক্রামক ব্যধি, যার অন্যতম হচ্ছে করোনারি হৃদরোগ। এটি শতকরা প্রায় ২৭ ভাগ মৃত্যুর কারণ। এদিকে, দেশে বর্তমানে প্রতি ১ হাজার শিশুর মধ্যে ১০ থেকে ১২টি শিশু জন্মগ্রহণ করছে হৃদরোগ নিয়ে। সে হিসাবে গড়ে প্রতিবছর ২ লাখের বেশি শিশু জন্মগ্রহণ করছে জন্মগত হৃদরোগী হয়েই। আবার এই শিশুদের মধ্যে যথাযথ চিকিৎসাসেবা না পেয়ে জন্মের ৬ থেকে ৭ মাস বয়সের মধ্যেই তারা মারা যাচ্ছে।
কিছু কিছু এলাকার মানুষ হৃদরোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে হাওর এলাকা, দক্ষিণাঞ্চল। পরিবেশগত ভারসম্যহীনতা, ব্যাড ফুড হেভিট চর্বি, হৃদরোগীদের ক্ষেত্রে বড় প্রভাব ফেলছে বলে জানান জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আব্দুল্লাহ শাহরিয়ার। তিনি বলেন, ‘মানুষ এখন সচেতন বেশি। তারা বুকে একটু ব্যথা হলেও হাসপাতালে চলে আসছেন। অনেক রোগীই আসেন, যাদের এক থেকে দুই দিনে রিলিজ দেওয়া হয়। কিন্তু যত ছোট চিকিৎসাই হোক না কেন, তাদের তো আর ফেরানো যায় না। তাই হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।’
এদিকে, হাসপাতালটির সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. এসটিএম আবু আজম জানান, ‘যখন দায়িত্বে ছিলাম রোগীদের ভোগান্তি কমাতে হাসপাতালের বর্ধিত ভবনের জন্য আবেদন করেছিলাম। বর্তমান হাসপাতাল ভবনটির দু’পাশে ৭ তলা ও পেছনের আরেকটি ভবনকে ১৫ তলা করার জন্য আবেদন করা হয়েছে। এগুলো হয়ে গেলে রোগীদের আর বেড সংকট থাকবে না বলেই আশা করি।’
/এমএনএইচ/
আরও পড়ুন: গোখরা কেন লোকালয়ে