ছাত্রলীগ নামধারীদের সামলাতে আকুতি এক বাবার

মারধর-১‘ওরা আমাকে চড়-ঘুষি মেরে বলছিল, আমাদের চিনিস? আমরা ছাত্রলীগ করি। তোকে মারলে আমাদের কিছুই হবে না’-এই কথাগুলো ঘটনার শিকার হওয়া অমিয় নামের ছেলেটি। তার বাবা আহমেদ স্বপন মাহমুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলছিলেন, ‘২০-২৫ জনের একটি দল ছাত্রলীগের নাম করে রাস্তার মধ্যে একটি ছেলেকে এভাবে পেটাল! ভাবতে পারছি না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে এর বিচার চাই।’

একটি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আহমেদ স্বপন মাহমুদের অভিযোগ, মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) সন্ধ্যার দিকে অমিয় পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে জাপান গার্ডেন সিটিতে রিকশায় চড়ে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে ২০-২৫ জনের একটি দল তাকে আটকায়। তারপর তাকে মারতে মারতে ঈদগাহের মাঠে নিয়ে যায়। সেখানে ব্যাট, স্ট্যাম্প এবং লাঠি দিয়ে তাকে মারতে থাকে। মেরে তাকে আরেকটি গেট দিয়ে বের করে মূল সড়কে নিয়ে আসে। ঠিক তখনই একটি বাস এসে থামলে কয়েকজন যাত্রী অমিয়কে প্রাণে বাঁচান। তারপর চাচাকে ফোন করে অমিয়। সেখান থেকে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে। তবে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে মঙ্গলবার রাতেই সে বাসায় ফিরেছে।

অমিয়র বাবা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, পাঁচ-ছয় বছর ধরে জাপান গার্ডেন সিটিতে থাকার পর তারা চলে আসেন মোহাম্মদপুরের বাবর রোডে। তিনি বলেছেন, ‘অমিয়র স্পাইনাল কর্ডে সমস্যা হয়েছে, পা ভাঁজ করতে পারে না। এ কারণে বিছানা ছাড়তে পারছে না সে। হাঁটতেও পারে না। কারও সাহায্য ছাড়া টয়লেটেও যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে তার জন্য। ওর পিঠে শুধুই পেটানোর দাগ। কোনোরকমে আমার ছেলেটা মাথা বাঁচিয়ে রেখেছিল বলে হয়তো তাকে লাশ হয়ে ফিরতে হয়নি। জন্ডিসের কারণে সপ্তম শ্রেণিতে বার্ষিক পরীক্ষা দিতে পারেনি অমিয়। কয়েকদিন আগেই জন্ডিস থেকে সেরে ওঠা ছেলেটা বিছানায় পড়ে আছে। ওর দিকে তাকানোর শক্তি নেই আমার।’

মারধরকেন এবং কারা অমিয়কে পেটাল? এই প্রশ্ন ছেলেকেও করেছেন বাবা। অমিয় তাকে জানিয়েছে, জাপান গার্ডেন সিটিতে যেসব বন্ধুর সঙ্গে সে আড্ডা দেয় তাদের কারও সঙ্গে হয়তো ওই ছেলেদের কোনও ঝামেলা থাকতে পারে। হয়তো ওই ছেলেদের বন্ধু হিসেবে তাকে একা পেয়ে পিটিয়েছে তারা।

ছাত্রলীগ কর্মী পরিচয় দেওয়া ছেলেগুলোর কাউকে অমিয় চিনতে পেরেছে কিনা জানতে চাইলে আহমেদ স্বপন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ওদের অনেক বড় গ্রুপ ছিল। তার মধ্যে জোবায়ের, মুন্না, রিংকু, রবিন, ফাহিম, আবিদ নামের চারজনকে সে চেনে বলে জানিয়েছে। গতকাল (মঙ্গলবার) রাত ১১টার দিকে মোহাম্মদপুর থানায় গিয়ে এই ছয় জনের বিরুদ্ধে এজাহার করেছি। গতকাল রাত ১২টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে এলেও কাউকে পায়নি। আজ (বুধবার) দুপুরের দিকে তারা আবারও সেখানে এসেছিলেন। স্থানীয় লোকজন এবং ঈদগাহের সামনের একটি চা দোকানির সঙ্গে কথা বলেছেন। চা বিক্রেতা পুলিশকে ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। তবে কারও নাম ঠিকানা না থাকায় এখনও এ ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি।’

এ প্রসঙ্গ মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জামাল উদ্দীন মীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা এখনও এফআইআরকে মামলা হিসেবে গ্রহণ করিনি। তবে প্রাথমিক তদন্ত চলছে। আজ (বুধবার) দুপুরের দিকেও তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোফাজ্জল হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেছেন। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলতে পারছি না।’

/জেএ/জেএইচ/