গম্ভীর তৌফা, হাসিমুখ তহুরার

অপারেশনের পর হাসপাতালে তৌফা-তহুরা (ছবি: ডা. কৌশিক ভৌমিক)গত ১ আগস্ট জোড়া লাগানো শিশু তৌফা ও তহুরাকে আলাদা করেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসকদের সাড়া জাগানো এই অস্ত্রোপচারের পর থেকেই তৌফা ও তহুরা হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকদের মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিশু দুটি শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলেও তারা এখনও আশঙ্কামুক্ত নয়।

বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে প্রতিদিনের নিবিড় পর্যবেক্ষণ জানিয়ে চিকিৎসকরা বলেন, ‘তৌফা ও তহুরা একই কটে (বিছানায়) থাকলেও তাদের আচরণে রয়েছে বড় পার্থক্য। তোফা সবসময় গম্ভীর আর তহুরা সবসময় হাসিমুখে।’

অপারেশনের পর হাসপাতালের বেডে গম্ভীর তৌফা (ছবি: ডা. কৌশিক ভৌমিক)প্রসঙ্গত, ১০ মাস বয়সী তৌফা ও তহুরার জন্ম হয়েছিল পেছনের দিক থেকে সংযুক্ত অবস্থায়। গত বছরের ৮ অক্টোবর ঢামেকে অপারেশনের মাধ্যমে তাদের পায়ুপথ আলাদা করার পর গত ১ আগস্ট তাদের শরীর আলাদা করা হয়। ঢামেকের প্লাস্টিক সার্জন, নিউরোসার্জন ও শিশু বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডকে প্রায় ২০/২২ জনের একটি দল এ অপারেশন সহায়তা করেন। তারা যেভাবে জোড়া লেগে জন্মগ্রহণ করেছিল চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় সেটাকে ‘পাইগোপেগাস’ বলা হয়। এরকমের শিশু পৃথক করার ঘটনা বাংলাদেশে এই প্রথম বলেই জানান চিকিৎসকরা।

অপারেশনের পর থেকে এখন পর্যন্ত তৌফা-তহুরা কেমন আছে জানতে চাইলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আশরাফ উল হক কাজল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ওরা ভালো আছে, স্যালাইন বন্ধ আছে। মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি অপারেশনের আগে তারা যেসব স্বাভাবিক খাবার খেতো সেসব খাবার খাচ্ছে।’

তবে তারা এখনও আশঙ্কামুক্ত নয় বলেও জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, ‘আগামী ১০ দিন পর্যন্ত আমাদের এ শঙ্কা থাকবে, আমরা শিশুদুটির বিষয়ে সর্বাত্মক নজর রাখছি, যেন তাদের কোনও ধরণের সংক্রমণ না হয়।’

অপারেশনের পর হাসপাতালের বেডে হাসিমুখে তহুরা (ছবি: ডা. কৌশিক ভৌমিক)শিশু দুটি এখনও নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে রয়েছে জানিয়ে অধ্যাপক ডা. আশরাফ উল হক বলেন, ‘ওদেরকে আমরা এখনও আইসিইউ থেকে বের করছি না। কারণ বাইরের ভিজিটর কন্ট্রোল করা যায় না, সেখানে নানারকম ঝুঁকি থাকতে পারে। তবে বিষয়টা এমন না যে, ওদেরকে চিকিৎসার প্রয়োজনে আইসিইউতে রাখা হয়েছে বা তাদের আইসিইউ লাগছে। কিন্তু সংক্রমণ এবং অন্যান্য সবকিছু বিবেচনা করে তাদের আইসিইউতে রাখা হয়েছে।’

এদিকে, তৌফা ও তহুরার এবারের অস্ত্রোপচারই শেষ অস্ত্রোপচার নয় জানিয়ে শিশু সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. কানিজ হাসিনা শিউলি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শিশু দুটির আরও কয়েকটি অস্ত্রোপচার লাগবে, তবে সেটা এখনই নয়। আরেকটু সুস্থ হোক, সময় যাক। তারপর আমরা অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করবো।’

অপারেশনের আগে তৌফা-তহুরাঅপরদিকে, শিশুদুটির অস্ত্রোপচার টিমে থাকা ঢামেক হাসপাতালের রেসিডেন্ট চিকিৎসক ডা. কৌশিক ভৌমিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রতিদিনই ওরা একটু একটু করে উন্নতি করছে। ড্রেসিং করার সময়ে তহুরার ক্ষত থেকে পানি পড়া ছাড়া শারীরিকভাবে আর কোনও জটিলতা তাদের ছিল না। কিন্তু এখন সেটা কমে এসেছে, আর তৌফার ক্ষেত্রে সেটা কখনই ছিল না, ওর ক্ষতস্থান সবসময়ই শুষ্ক ছিল।’

কৌশিক ভৌমিক আরও বলেন, ‘২৪ ঘণ্টায় কয়েকবার ওদের দেখতে যাই। তবে তৌফা সবসময় গম্ভীর থাকে, হাসে না কখনই। সে সবসময় বা হাত মাথার ওপর দিয়ে রাখে- এটাই তার স্টাইল। অপরদিকে তহুরা একেবারেই তার বিপরীত, সে সবসময় হাসতে থাকে, ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালে সে তাকে হাসিমুখে স্বাগত জানায়।’

/এমও/এসএনএইচ/