চক্র সাপের বিষ বলে যা বিক্রি করছে, আসলে তা কোনও বিষই নয়।
চলতি বছরের ৮ মার্চ রাজধানীর ধানমণ্ডি থেকে ৪৫ কোটি টাকা মূল্যের বিষাক্ত সাপের বিষ আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। এছাড়া, ১৮ এপ্রিল রাজধানীর কুড়িল বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে মূল্যবান সাপের বিষের আরও একটি চোরাচালান চক্রকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকা মূল্যের সাপের বিষ উদ্ধার করা হয়।
একই অপরাধে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে গত ২৪ মে বিদেশি পিস্তল, সাপের বিষসহ চারজনকে আটক করে র্যাব-১০। তাদের কাছ থেকেও ৯টি ক্রিস্টাল জারে সাপের বিষ উদ্ধার করা হয়।
গোয়েন্দা পুলিশ ও র্যাব সূত্রে জানা গেছে, সাপের বিষের এসব প্রতারক চক্র বিষ বিক্রি করার জন্য কৌশল অবলম্বন করে থাকে। তারা দাবি করে, এই সাপের বিষ দেশের বাইরে থেকে এসেছে, এর মূল্য কোটি টাকা। ওষুধ কোম্পানিগুলো এসব সাপের বিষ কোটি কোটি টাকা দিয়ে কেনে। কারণ বৈধভাবে দেশের বাইরে থেকে এসব আনতে হলে আরও কয়েকগুণ বেশি টাকা গুণতে হয়। কম দামের কারণে ক্রেতারা সহজে প্রতারকদের ফাঁদে পা দেয়। কিন্তু প্রতারকরা যেসব সাপের বিষ মহামূল্যবান বলে বিক্রি করে, আসলে তা সাপের বিষই না।
র্যাব-১০ এর ডেপুটি কমান্ডিং অফিসার মেজর মহিউদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অনেক টাকা মূল্যের বিষ বলে তারা (প্রতারক চক্র) যেগুলো বিক্রি করে, সেগুলো বিষই না। আমরা পরীক্ষা করে সাপের বিষের কোনও অস্তিত্ব পাইনি। প্রকৃত অর্থে সাপের বিষের অনেক দাম। আর এটাকে কাজে লাগিয়ে প্রতারণা করে তারা। অধিক লাভের আশায় যারা প্রতারকদের কাছ থেকে সাপ বিষ কেনেন, তারা পরবর্তীতে ধরা খান। কারণ প্রথমত এগুলো সাপের বিষ না। আর দ্বিতীয়ত সাপের বিষ হলেও এগুলোর কোনও ক্রেতা নেই। তবে তারা যদি একইভাবে প্রতারণার আশ্রয় নেয়, তাহলেই হয়তো বিক্রি করতে পারবে।’
প্রতারকরা ক্রেতাদের কাছে সত্যিকারের সাপের বিষ প্রমাণের জন্য বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করেন বলে জানান মেজর মহিউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘ওরা বলে ফ্রান্সের তৈরি একটা পিস্তল আছে, যা দিয়ে সাপের বিষের কৌটায় ফায়ার করলে কৌটাটি ফাটবে না। বিষ নকল হলে ফেটে যাবে। আরও বলে, অরিজিনাল বিষ স্বচ্ছ কাঁচের জারে রাখার পর এর ওপর লেজার লাইট ধরলে একপাশ থেকে অন্য পাশে যাবে না। বিভিন্ন গাইড বইও দেখায়। যেগুলোতে বিষ কোথা থেকে নেওয়া হয়েছে, কিভাবে ব্যবহার করতে হবে, সেসব লেখা থাকে। আর এসবই প্রতারণার অংশ, সবকিছুই ভুয়া।’
একই কথা বলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার মহররম আলী। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রতারকরা আটকের পর জানিয়েছে, এসব বিষ ওষুধ তৈরির প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রয় করে। কিন্তু নির্দিষ্টভাবে কারা এসব অবৈধ বিষ কিনতে চায় বা কেনে, তা তারা জানাতে পারেনি। আসলে এসব কথা তারা বলে থাকে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে। অনেক বেশি লাভ করার লোভ দেখায়। ফলে অনেকে ভালোভাবে না জেনেই ফাঁদে পা দেন।’
দেশে ওষুধ তৈরিতে সাপের বিষ ব্যবহার প্রসঙ্গে কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আ ব ম ফারুক। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সাপের বিষ ভীষণ দামি। আমার জানা মতে, বাংলাদেশে সাপের বিষ ব্যবহার করে কোনও ওষুধ তৈরি হয় না। কারণ এর প্রযুক্তিও ভীষণ দামি, প্রচুর বিনিয়োগ দরকার। আর এটাও মনে রাখতে হবে সাপের বিষের তৈরি ওষুধ লাগে এমন রোগীর সংখ্যা যে অনেক বেশি তাও নয়। ফলে যারা বিনিয়োগ করবেন, তারা আসলে প্রস্তুত নন।’
/এমও/এপিএইচ/আপ-এসএনএইচ/