ট্যানারি সরলেও হাজারীবাগ থেকে সরছে না বর্জ্য

রাজধানীর ট্যানারিগুলোকে সাভারে প্রতিষ্ঠিত চামড়া শিল্পনগরে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হলেও দূষণ কমেনি হাজারীবাগে। হাইকোর্টের নির্দেশে হাজারীবাগ ট্যানারি কারখানাগুলো থেকে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় চলতি বছরের ৮ এপ্রিল। এরপর গত পাঁচ মাস হাজারীবাগের ট্যানারিগুলোতে কাঁচা চামড়ার প্রক্রিয়াকরণ ও উৎপাদন বন্ধ থাকলেও, সেখানকার পরিবেশ আগের মতোই আছে। পুরো এলাকায় রাস্তাঘাটের আশেপাশে, দোকানের পেছনে, নালা-ডোবা-নর্দমায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে পচে যাওয়া কাঁচা চামড়ার অবশিষ্টাংশসহ কারখানার বর্জ্য। বৃষ্টির পানিতে সেগুলো থেকে ছড়িয়ে পড়ছে দুর্গন্ধ। কারখানা তো সরলো, কিন্তু এই বর্জ্য সরাবে কে? এই প্রশ্নই এখন স্থানীয়দের মুখে মুখে।

হাজারীবাগে ট্যানারি বর্জ্যের স্তূপগত বুধ (১৬ আগস্ট) ও বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, হাজারীবাগ বাজার থেকে বেড়িবাঁধের দিকে যেতে, রাস্তার পাশে, বেশ কয়েকটি স্থানে চামড়ার স্তূপ পড়ে রয়েছে। বাজার থেকে একটু সামনে যেতে বেশ কিছু দোকান চোখে পড়েছে, যেসব দোকানে বিক্রির জন্য চামড়ার ছাট রাখা হয়েছে।

অন্যদিকে বেশ কয়েকটি কারখানা পাওয়া গেছে, যেখানে মেশিন চলছে। কারখানাগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এপ্রিলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার দুই মাস পর কিছু করাখানায় আবারও সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এ কারণে এখনও কিছু কারখানায় কাজ চলছে। তবে এখন শুকনা চামড়া দিয়ে ব্যাগ, জুতা ও অন্যান্য জিনিস তৈরি করা হয়।

হাজারীবাগে ট্যানারি বর্জ্যের স্তূপহাজারীবাগ বাজার থেকে বেড়িবাঁধের দিকে যেতে, রাস্তার পাশের একটি ছোট ঘরে একজন শ্রমিককে মেশিনে চামড়ার কাজ করতে দেখা গেছে। এ ব্যাপারে শ্রমিক আনোয়ার বলেন, ‘এখানে চামড়া সেটিং করা হয়, চামড়া ফিনিশিং করা হয়।’

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি শাহীন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত ৮ এপ্রিল সংযোগ (বিদ্যুৎ, গ্যাস) বিচ্ছিন্ন করে দিলেও পরের দিন (৯ এপ্রিল) হাইকোর্ট থেকে অনুমতি পেয়েছিলাম, পরিবেশ দূষিত করবে না, এ ধরনের কাজ করতে পারবে কারখানাগুলো। এরপরই পরিবেশ অধিদফতরের মাধ্যমে দূষণমুক্ত কাজের জন্য বিদ্যুৎ-সংযোগ পেয়েছি। এখন দূষণমুক্ত কাজগুলোই করা হয় এখানে।’

হাজারীবাগে ট্যানারি বর্জ্যের স্তূপপরিবেশ অধিদফতরে যোগাযোগ করা হলে অধিদফতরের সহকারী পরিচালক সাইফুল আশরাফ বলেন, ‘যেসব কারখানা দূষণমুক্ত কাজ করে, কেবল ওই কারখানাগুলোতেই বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে।’

এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, কারখানা তো ঠিকই বন্ধ করা হয়েছে কিন্তু ময়লা সরছে না। আগে যে ময়লা ছিল, তা এখনও সরানো হয়নি। বৃষ্টির পানিতে পঁচে ওই চামড়ার ময়লাগুলো দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এছাড়া এখনও কিছু কারখানা দূষণমুক্ত কাজের নামে চামড়া প্রক্রিয়াকরণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু শ্রমিকরা রাতের অন্ধকারে ওই চামড়ার অবশিষ্টাংশ ও কারখানার বর্জ্য রাস্তার ধারে ও ডোবায় ফেলছেন। ফলে এখানে দুর্গন্ধে টেকা যাচ্ছে না। ট্যানারি তো সরলো, কিন্তু এই বর্জ্য সরাবে কে?

হাজারীবাগে ট্যানারি বর্জ্যজানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বেলাল হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হাজারীবাগে যে ময়লা আছে, তা মূলত কারখানাবর্জ্য। এসব কারখানাবর্জ্য যেখানে-সেখানে ফেলার নিয়ম নেই। কারখানার মালিকরা নিজেরাই ওই বর্জ্য সরাবেন। সিটি করপোরেশন মূলত গৃহস্থালী বর্জ্য পরিষ্কার করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘তবু আমরা অনেক সময় বাধ্য হয়ে হাজারীবাগের কারখানাবর্জ্য স্থানান্তর করি। যখন দেখি রাস্তার পাশে কারখানাবর্জ্য ফেলে রাখা হয়েছে, সাধারণ মানুষের সমস্যা হচ্ছে, তখন তো বাধ্য হয়ে সরাতেই হয়।’

কিন্তু মালিকরাও যদি ওই ময়লা না সরান, তাহলে সরাবে কে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘যেহেতু এখন হাজারীবাগে কোনও কারখানা নেই, সেহেতু এলাকাটি আবর্জনামুক্ত করতে করণীয় ঠিক করতে আমরা কমকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করব।’

/আরএআর/এএইচ/এমএনএইচ/আপ-এমও/