পাসপোর্ট ইস্যুতে পুলিশ ভেরিফিকেশন বাতিলের সুপারিশ টিআইবি’র

টিআইবির সংবাদ সম্মেলনহয়রানি ও দুর্নীতি বন্ধ করতে পাসপোর্ট ইস্যুর ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশনের নিয়ম বাতিলের সুপারিশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সোমবার (২১ আগস্ট) বেলা ১১টায় টিআইবি’র মেঘমালা সম্মেলন কক্ষে ‘পাসপোর্ট সেবায় সুশাসন: চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণে করণীয়’ শীর্ষক গবেষণায় এ সুপারিশ করা হয়।

ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের সেবার মান উন্নয়ন, টেকসইকরণ এবং দুর্নীতি-অনিয়মরোধে স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি মোট ১২টি সুপারিশ দিয়েছে টিআইবি। দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশে পাসপোর্ট ইস্যুর ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন বাতিলের কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, পাসপোর্ট ইস্যুর ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন বিধান বাতিল করতে হবে। এক্ষেত্রে সব নাগরিকের জন্য ‘বায়োমেট্রিক ডাটা ব্যাংক’ তৈরির পাশপাশি স্মার্ট কার্ড প্রস্তুত ও বিতরণ অবিলম্বে সম্পন্ন করতে হবে এবং অপরাধীদের তথ্য সংক্রান্ত ‘অপরাধী তথ্যভান্ডার’ আধুনিক ও যুগোপযোগী করার পাশাপাশি এই তথ্য ভাণ্ডারের সঙ্গে পাসপোর্ট অফিস ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের সংযোগ স্থাপন করতে হবে।

টিআইবি’র গবেষণায় উঠে এসেছে, নতুন পাসপোর্ট আবেদনে পুলিশ প্রতিবেদন ব্যবস্থা সাধারণ আবেদনকারীদের হয়রানি ও দুর্নীতির অন্যতম মাধ্যম। সেবাগ্রহীতা জরিপ অনুযায়ী, নতুন পাসপোর্ট আবেদনে সেবাগ্রহীতাদের ৭৬ দশমিক ২ শতাংশ পুলিশি তদন্তে অনিয়ম ও দুর্নীতির শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ৭৫ দশমিক ৩ শতাংশকে ঘুষ বা নিয়মবহির্ভূতভাবে অর্থ দিতে হয়েছে।

অন্যদিকে, পুলিশ প্রতিবেদন তৈরিতে এসবি পুলিশ দ্বারা আবেদনকারীদের হয়রানি করার অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, আবেদনপত্রে অযথা ত্রুটি খুঁজে বের করা, আবেদনকারীকে জঙ্গি কার্যক্রম বা অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততার ভয় দেখানো, বাড়িতে না এসে চায়ের দোকান বা থানায় ডেকে পাঠানো, নিয়মবহির্ভূতভাবে অর্থ বা ঘুষ দাবি করা এবং ক্ষেত্র বিশেষে তা বিকাশে পাঠাতে বলা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

পাসপোর্ট অফিস ও এসবি অফিসের মধ্যে পুলিশ প্রতিবেদন সংক্রান্ত তথ্য আদান-প্রদানে সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে বলেও উঠে এসেছে টিআইবি’র গবেষণা প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, পাসপোর্ট অফিস থেকে অনলাইনে আবেদনকারীর তথ্য পাঠানো হলে এসবি অফিসগুলোর একাংশ থেকে প্রতিবেদন অনলাইনে পাঠানোর ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে। আবার কিছু এসবি অফিস থেকে অনলাইনে তথ্য পাঠানো হলেও তা দেরিতে পাঠানো হয়। এতে পাসপোর্ট প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়।

এদিকে, এসবি পুলিশ কর্মকর্তাদের মতে, প্রতিবেদন অনলাইনে পাঠানোর ক্ষেত্রে তারা কিছু কারিগরি সমস্যার সম্মুখীন হন। এর মধ্যে রয়েছে, অনলাইনের লিংক সবসময় কাজ না করা, অনলাইনে পাঠানোর জন্য এমআরপি প্রকল্পের আওতায় সরবরাহ করা যন্ত্রাংশ বিকল থাকা ও কারিগরি সমস্যা সমাধানে পাসপোর্ট অফিসের সময়মতো সাড়াদানে ঘাটতি রয়েছে।

পাসপোর্ট ইস্যুর ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন বাতিলের ব্যাপারে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘হয়রানি ও দুর্নীতি বন্ধে পুলিশ ভেরিফিকেশন বিধান বাতিল করতে হবে। আমরা এর আগের প্রতিবেদনেও তা-ই বলেছিলাম। সরকার ও পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে একমত। কিন্তু পুলিশের একটি অংশ তা বাতিল করতে চান না। পুলিশের রাখার ইচ্ছে না থাকলে তারা স্বপ্রণোদিত হয়ে এটা বাতিল করতে পারে।’

‘পাসপোর্ট সেবায় সুশাসন: চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণে করণীয়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি ও উপস্থাপন করেন টিআইবি’র প্রোগ্রাম ম্যানেজার (রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি) মো. শাহনূর রহমান। গবেষণা প্রতিবেদন নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, সদস্য এম হাফিজউদ্দিন খানসহ টিআইবি’র অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আরজে/এএম