নামে পুলিশ ফাঁড়ি, কাজ চলে থানার ভেতর!

কাকরাইল পুলিশ ফাঁড়ির নাম শুনলে মনে হবে কাকরাইলের কোথাও রয়েছে ফাঁড়িটি। তবে কাকরাইল এলাকায় তন্নতন্ন করে খুঁজেও এর অস্তিত্ব পাওয়া যাবে না। কারণ, কাকরাইল পুলিশ ফাঁড়িটি রয়েছে রমনা থানা ভবনের ভেতরেই।

খিলগাঁও পুলিশ ফাঁড়ি (ফাইল ছবি)এ বিষয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, জায়গা না পাওয়ায় এমনটা করতে হয়েছে। কাকরাইল পুলিশ ফাঁড়ির মতো ঢাকায় আরও কয়েকটি ফাঁড়ি রয়েছে, যেগুলোর অবস্থান সংশ্লিষ্ট থানা ভবনের ভেতরেই। ঢাকা মহানগরীতে ৫২টি পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে। থানা এলাকার পরিধি বৃদ্ধি এবং দ্রুত পুলিশি সেবা দেওয়ার জন্যই এসব ফাঁড়ি স্থাপন করা হয়েছে। প্রত্যেক পুলিশ ফাঁড়িতে একজনে এসআইয়ের নেতৃত্বে প্রয়োজনীয় সংখ্যক এএসআই ও কনস্টেবল দায়িত্ব পালন করেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তথ্য অনুযায়ী, রমনা থানায় তিনটি পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে। এগুলো হলো– সিদ্ধেশ্বরী, কাকরাইল ও নয়াটোলা পুলিশ ফাঁড়ি। এর মধ্যে সিদ্ধেশ্বরী ও কাকরাইল পুলিশ ফাঁড়ির অবস্থান রমনা থানা ভবনেই। দীর্ঘ সময় পার হলেও নিজস্ব কোনও ভবন পায়নি এই ফাঁড়ি দুটি। ফলে যে উদ্দেশ্যে ফাঁড়ি দেওয়া হয়েছিল, তা সফল হচ্ছে না। ওই এলাকার মানুষ দ্রুত পুলিশি সেবা পাওয়া থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

রমনা থানা (ফাইল ছবি)সিদ্ধেশ্বরীর ব্যবসায়ী জাফরুল্লাহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই এলাকা কত বড়, প্রতিদিন এলাকার জনসংখ্যা বাড়ছে। রয়েছে ব্যাংক, এটিএম বুথ, বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এখানে সবসময় পুলিশ থাকা দরকার, যাতে মানুষ নিরাপদে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারে। শুনেছি এই এলাকায় একটি পুলিশ ফাঁড়ি আছে। তবে আজ পর্যন্ত এটির দেখা পেলাম না। কারা যে এই ফাঁড়ির পুলিশ, তাও চিনি না।’

কাকরাইল পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা রমনা থানায় বসেই দায়িত্ব পালন করেন। অথচ কাকরাইলে প্রায়ই ছিনতাইসহ নানা অপরাধের ঘটনা ঘটছে।
ডিএমপির ওয়ারি বিভাগের থানা গেণ্ডারিয়া। এই থানা এলাকাতেও রয়েছে দুটি পুলিশ ফাঁড়ি। একটি গেন্ডারিয়া পুলিশ ফাঁড়ি, অন্যটি নারিন্দা পুলিশ ফাঁড়ি। গেন্ডারিয়া পুলিশ ফাঁড়িটি দীর্ঘদিন ধরেই গেন্ডারিয়া থানা ভবনেই। এটিরও নিজস্ব কোনও ভবন নেই, অফিসও নেই।

তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ভেতরেই রয়েছে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল পুলিশ ফাঁড়ি। দীর্ঘ সময়েও এই ফাঁড়িটি আলাদা অফিস নিয়ে কাজ শুরু করতে পারেনি। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার চতুর্থ তলাতেই বর্তমানে ফাঁড়িটির অফিস।

তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল ফাঁড়ির জন্য জমি চেয়ে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। এটি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয় বলে হয়তো দেরি হচ্ছে। আশা করছি শিগগিরই ফাঁড়ির জন্য জমি পাওয়া যাবে।’

মোহাম্মদপুর থানা এলাকার বেড়িবাঁধের দিকে পরিসর বেড়েছে। রায়েরবাজার, ঢাকা উদ্যান, নবীনগর, বসিলাসহ বড় এলাকা। এখানে দুটি পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে। মোহাম্মদপুর থানা হওয়ার আগেই সেখানে ছিল মোহাম্মদপুর পুলিশ ফাঁড়ি। থানা হওয়ার পরও ফাঁড়িটি রয়ে গেছে। মোহাম্মদপুর থানা ভবন থেকে অল্প দূরত্বে ফাঁড়ির অবস্থান।

স্থানীয়রা বলছেন, বেড়িবাঁধের দিকে একটি ফাঁড়ি থাকা খুবই প্রয়োজন। তাছাড়াও এই থানা এলাকায় রায়েরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি নামে আরও একটি পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে।

এ বিষয়ে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘মোহাম্মদপুর পুলিশ ফাঁড়ির আলাদা অফিস রয়েছে। ফাঁড়িতে কর্মরত পুলিশ সদস্যরা নির্দিষ্ট এলাকাতেই সবসময় দায়িত্ব পালন করেন। তবে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল পুলিশ ফাঁড়ির জন্য জমি চাওয়া হয়েছে।’

ডিএমপির গুলশান বিভাগের খিলক্ষেত থানা এলাকাটিও যথেষ্ট বড়। তাই এই এলাকার সবাইকে পুলিশি সেবার দেওয়ার জন্য করা হয়েছে খিলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ি। তবে এটিরও নিজস্ব কোনও ভবন নেই। খিলক্ষেত থানার ভেতরেই চলে ফাঁড়ির কার্যক্রম।

ডিএমপির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘শুধু জমির সংকটের জন্য নয়, পুলিশের জনবল সংকট ও নিরাপত্তার কারণে যেনতেন ফাঁড়ির অফিস করে লাভ নেই। কারণ এসব ফাঁড়িতে অস্ত্র-গুলি রাখা হবে। সেগুলোর নিরাপত্তাও দরকার। তাই সবকিছু যাচাই-বাছাই করে ফাঁড়ির জন্য জায়গা নির্ধারণ করা হবে।’