ইসি’র অবস্থান পরিষ্কার হওয়া দরকার: নাগরিক সমাজ

সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচন কমিশনের অবস্থান পরিষ্কার হওয়া দরকার বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে তারা বলেন, ‘এদেশে কখনও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, তাই নির্বাচন কমিশন যদি সুষ্ঠু নির্বাচন চান তাহলে আগে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করা দরকার।’

সুজন আয়োজিত বৈঠকে বক্তারা সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত ‘নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা আরও বলেন, ‘পরামর্শের জন্য ৪০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে ডেকেছে ইসি। কিন্তু শুধু আওয়ামী লীগকে ডেকে তারা কিভাবে আগামী নির্বাচন করতে চান তা জানা দরকার আগে।’

নির্বাচন কমিশন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ঘনঘন বসলেও কোনও কাজ হবে না বলে মন্তব্য বিশিষ্ট লেখক ও কলামিষ্ট সৈয়দ আবুল মকছুদের। তার মতে, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে অন্য ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা ভালো পরামর্শ দিলেও লাভ নেই। এক্ষেত্রে তিনি ইসি’কে আগে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে বসার পরামর্শ দিয়েছেন।

এই বিশিষ্ট লেখক সভায় বলেছেন, “অন্যান্য রাজনৈতিক দল ভালো ভালো পরামর্শ দিতে পারে। তাদের প্রতিনিধিরা বলতে পারেন— ‘আমরা সুইজারল্যান্ডের মতো নির্বাচন চাই।’ কিন্তু প্রশ্ন হলো, রাজনৈতিক দল হিসেবে তারা নির্বাচন কমিশনকে কতটা সহায়তা করতে পারবেন?”

সৈয়দ আবুল মকছুদ আরও বলেন, “দেশ এখন আছে অস্থিতিশীল অবস্থায়। ইসি’রও অসহায়ত্ব রয়েছে। তারাও মানুষ এবং জানমালের নিশ্চয়তা চাইবেন। নির্বাচন করতে গিয়ে ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হবে। দায়িত্ব পালনের সময় ঝুঁকি নিতে তারা প্রস্তুত কিনা ভেবে দেখতে হবে। কারণ আগামী সংসদ নির্বাচনের ওপর জাতির ভাগ্য নির্ভর করছে। সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সরকারি দল, বিরোধী দল ও নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ হলে এ জাতির বিপর্যয় ঠেকানো সম্ভব নয়।”

একই সুরে কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। তার ভাষ্য, ‘আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু করতে না পারলে বাংলাদেশের ভবিষ্যত উত্তর কোরিয়ার মতো হবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন যেভাবে গঠিত হয়েছে তাদের নিয়ে জনমতে এমনিতেই সন্দেহ আছে। তারা জানিয়েছে— রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতৈক্য সৃষ্টিতে তারা কাজ করবে না। তারা যদি নির্বাচনকালীন মাঠে সেনাবাহিনী প্রয়োগ করেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভয়ভীতি আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি দূর করতে পারেন তাহলে মতৈক্যের প্রয়োজন নেই।’

সরকারের সমালোচনা করে এই অধ্যাপকের ভাষ্য, ‘সরকার তার নিজের অস্তিত্ব নিয়েই সবসময় ভীতসন্ত্রস্ত থাকে। বামমোর্চার ১৪ জনের একটি মিছিলে তারা লাঠিচার্জ করে। বিরোধী দলগুলো সভা-সমাবেশ করতে পারে না। তাদের প্রতিনিয়ত নিজেদের অস্তিত্ব সংকট নিয়ে ভাবতে হয়।’

অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের ইসি অনেক শক্তিশালী বলে মনে করেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন। তার ভাষ্য, ‘কমিশনের যথেষ্ট উপকরণের অভাব আছে। সেগুলো বাস্তবায়ন করতে না পারলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।’

গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সুজনের সভাপতি হাফিজউদ্দীন আহমেদ। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে করণীয় সুপারিশগুলো লিখিত বক্তব্যের মাধ্যমে তুলে ধরেন সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে হলে নির্বাচনী বিধি-বিধানে সংস্কারসহ কমিশনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ করণীয় রয়েছে। একই সঙ্গে করণীয় রয়েছে সরকার, রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সবার।’