রায় শুনে বিমর্ষ তারেক সাঈদ, চুপচাপ নূর হোসেন

 

তারেক সাঈদ ও নূর হোসেননারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলায় হাইকোর্টের রায় শোনার পর বিমর্ষ হয়ে পড়েন মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল থাকা আসামি তারেক সাঈদ। এ সময় নূর হোসেন চুপচাপ ছিলেন। রায় ঘোষণার পর তাদের কনডেম সেলের বাইরে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কারা কর্মকর্তারা। 

সাত খুন মামলার আসামি নারায়ণগঞ্জের সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (বরখাস্ত) তারেক সাঈদ আছেন কাশিমপুর কারাগার-২-এ। কাশিমপুর কারাগার-১-এ আছেন মেজর (বরখাস্ত) আরিফ হোসেন ও লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (বরখাস্ত) মাসুদ রানা।

গত ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক সৈয়দ এনায়েত হোসেন ৩৫ আসামির মধ্যে কাউন্সিলর নূর হোসেন ও সাবেক র‌্যাব কর্মকর্তা তারেক সাঈদসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছিলেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ আপিল করলে দীর্ঘ শুনানি শেষে মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) হাই কোর্ট ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বহাল রাখেন বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

কাশিমপুর কারাগার-২-এর সিনিয়র জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বনিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কাশিমপুর কারাগারে আছেন নূর হোসেন, তারেক সাঈদ ও বেলাল হোসেন। তিন জনই ওয়ান ব্যান্ড রেডিওর মাধ্যমে বিকালেই রায়ের খবর শুনেছেন। কিছুক্ষণ পর লোকও পাঠিয়েছিলাম। রায় শোনার পর থেকেই তাদের অনেকটা বিমর্ষ দেখা গেছে। তাই আমরা খোঁজ খবর রাখছি। তাদের কনডেম সেলের বাইরে নিরাপত্তাও বাড়ানো হয়েছে। খাওয়া-দাওয়া করছেন আগের মতোই।’

অন্যদিকে কাশিমপুর কারাগার-১-এর কনডেম সেলে রয়েছেন র‌্যাবের সাবেক কর্মকর্তা আরিফ হোসেন ও মাসুদ রানা। এ কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মিজানুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বন্দিদের কাছে যে ওয়ান ব্যান্ড রেডিও থাকে, তার মাধ্যমেই তারা রায়ের খবর জেনেছেন। স্বাভাবিকভাবেই এমন খবর পেলে মন খারাপ হবেই। তেমনই দেখা গেছে তাদের। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের রায়ের খবর জানানো হয়নি। উচ্চ আদালত থেকে কাগজপত্র পাওয়ার পরই আনুষ্ঠানিকভাবে পড়ে শোনানো হবে। বিচারিক আদালতে ফাঁসির রায় হওয়ার পর থেকেই আরিফ হোসেন ও মাসুদ রানা এই কারাগারের কনডেম সেলে আছেন।’ তারা নিয়মিত খাবার খাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

এর আগে মঙ্গলবার বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিংহ ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চের দেওয়া রায়ে  নূর হোসেন ও র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ, মেজর আরিফ হোসেন ও মাসুদ রানাসহ ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখা হয়। 

হাইকোর্টের রায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখা অন্য আসামিরা হলেন,  হাবিলদার মো. এমদাদুল হক, এবি মো. আরিফ হোসেন, ল্যান্স নায়েক হিরা মিয়া, সিপাহী আবু তৈয়ব আলী, কনস্টেবল মো. শিহাব উদ্দিন, এসআই পূর্ণেন্দু বালা, সৈনিক আবদুল আলিম, সৈনিক মহিউদ্দিন মুনশি, সৈনিক আল আমিন ও সৈনিক তাজুল ইসলাম। তারা কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন বলে কারা সূত্র জানিয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন। তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীতে একে একে ভেসে ওঠে ছয় জনের লাশ, পরদিন আরেক জনের লাশ। নিহত বাকিরা হলেন নজরুলের বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম ও চন্দন সরকারের গাড়িচালক মো. ইব্রাহীম। এ ঘটনার একদিন পর কাউন্সিলর নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বাদী হয়ে নূর হোসেনসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করেন। আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহিম হত্যার ঘটনায় ১১ মে একই থানায় আরেকটি মামলা করেন চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল। 

দুই মামলায় চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের দায়রা জজ আদালত ১৬ কর্মকর্তা-সদস্য ও নারায়ণগঞ্জের সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেন ও নয় সহযোগীসহ মোট ২৬ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। এ ছাড়া র‍্যাবের আরও ৯জন সাবেক সদস্যকে বিভিন্ন মেয়াদে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

 আরও পড়ুন: নূর হোসেন, তারেক সাঈদ, আরিফ হোসেন ও রানাসহ ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল