নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের কারণে নির্যাতনের শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে আলোচিত শিক্ষার্থী অ্যাঞ্জেল ডিন ঘটনার পর থেকে দেশের বাইরে। শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে গিয়ে এখনও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পার পেয়ে যায়।’ সেই বিষয়টি ভীত করে তুলে উল্লেখ করে এই শিক্ষার্থী টেলিফোনে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আটকের পর আমার গন্তব্য আমি বুঝতেও পারিনি। তিনটা দিন কিভাবে এলো-গেলো বুঝিনি। কারণ, চোখ বাঁধা ছিল।’
শিক্ষার্থীদের এসব অভিযোগ আর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জেল জরিমানার পেছনে তৎকালীন ফখরুদ্দিন ও মইনউদ্দিন সরকারের দায় উঠে এসেছিল সংসদীয় কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনেও। কিন্তু সেই প্রতিবেদনের সুপারিশগুলোর বেশিরভাগই বাস্তবায়ন হয়নি। তবে কমিটির প্রধান রাশেদ খান মেনন মনে করেন, ‘বাস্তবায়ন সম্ভব ছিল, হয়নি।’
২০০৭ সালের ওই হামলার ঘটনায় ২০১২ সালে সংসদীয় কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনে ১৩টি সুপারিশ দেওয়া হয়। যদিও দেশব্যাপী সেই সহিংসতায় পুলিশের গুলিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নিহত রিকশাচালক আনোয়ার হত্যার কোনও বিচার হয়নি। সেই হামলার সঙ্গে জড়িত মূল কুশীলবরা এখন দেশের বাইরে অবস্থান করছেন।
সংসদীয় কমিটির তদন্তে ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দিন আহমেদ, তৎকালীন সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমেদ, সেনা গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআইয়ের সাবেক কর্মকর্তা এটিএম আমিন, ফজলুল বারী, শামসুল আলম খান ও সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদকে বিচারের মুখোমুখি করার সুপারিশ থাকলেও তাদের কিছুই করা হয়নি।
আগস্ট বিদ্রোহ নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি যে রিপোর্ট দিয়েছিল,তার বাস্তবায়ন কতটুকু হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে রাশেদ খান মেনন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তদন্ত কমিটির রিপোর্টের তেমন বাস্তবায়ন তো হয়নি। কয়েকজনের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা ও ওয়ারেন্ট প্রত্যাহার হয়েছে বড় জোর,এর বেশি কিছু না।’ কেন সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা যায়নি, সে প্রসঙ্গে না গিয়ে বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘ওই বিদ্রোহের মূল দাবি ছিল ডাকসু নির্বাচন, সেটি হয়নি৷ ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে আগস্ট বিদ্রোহকে সার্থক করা সম্ভব। আগস্ট আন্দোলনের পর সংসদীয় কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশে মুখ্য সুপারিশ ছিল- ডাকসুসহ সব ছাত্র সংসদ নির্বাচন৷ সেটি আজও হয়নি।’
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের ২০ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে ফুটবল খেলা দেখাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষক ও আট শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আটক হন আট শিক্ষক ও এক কর্মকর্তা। ২০ ও ২১ আগস্ট দু’দিনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে অন্তত কয়েকশ লোক আহত হন। পরে ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে দণ্ড পাওয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আট শিক্ষককে ২০০৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় তৎকালীন সরকার। ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে আটক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকদের ছেড়ে দেয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। এ ঘটনা তদন্তে সংসদীয় উপকমিটি গঠন করে দেওয়া হয়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে কমিটি ১৩ দফা সুপারিশ প্রদান করলেও সেগুলো বাস্তবায়নে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি আজও।