উল্টোপথে গাড়ি চলার অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা: জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব

ড. মোজাম্মেল হক খানসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গাড়ি ট্রাফিক আইন অমান্য করে উল্টোপথে চলার বিষয়ে কেউ অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান। মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ তথ্য জানান।

সচিব বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অসাধারণ কেউ নন। তারা সাধারণ নাগরিকদের মতোই রাষ্ট্রের সব আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবেন– এমনটাই প্রত্যাশা করেন সবাই। আইনের ব্যত্যয় কেউ প্রত্যাশা করেন না। এটাই স্বাভাবিক। তাই সরকারি কর্মকর্তাকে বহনকারী গাড়ির চালক যখন আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে উল্টোপথে গেছেন সেটি অপরাধ। তাই তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছে ট্রাফিক বিভাগ। এছাড়া, উনি যে দফতরে কাজ করেন, সে দফতর থেকেও তাকে শোকজ করা হয়েছে। দায়িত্ব থেকেও তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। শোকজের জবাব সন্তোষজনক না হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে।’

পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মাফরুহা সুলতানাকে বহনকারী গাড়ি ট্রাফিক আইন অমান্য করে এক মাসের মধ্যে দু’বার উল্টোপথে চলার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে। এতে তার বিরদ্ধে সরকারি চাকুরি আচরণ বিধিমালা -১৯৭৯ লঙ্ঘনের দায়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে মোজ্জাম্মেল হক খান বলেন, ‘আমার কাছে বিষয়টি নিয়ে কেউ কোনও অভিযোগ করেনি। কেউ অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সে সময়ে গাড়িতে সমবায় সচিব ছিলেন কিনা বা চালককে তিনি উল্টোপথে যেতে বলেছেন কিনা অথবা চালক নিজের ইচ্ছায় উল্টোপথে গেছেন কিনা এগুলো তো তদন্তেরও বিষয়।’ 

উল্টোপথে গাড়ি চালানোর অভিযোগে চব্বিশ ঘণ্টায় দু’বার ট্রাফিক পুলিশের হাতে ধরা পড়ে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মাফরুহা সুলতানাকে বহনকারী গাড়ি। এই সচিবের গাড়ির বিরুদ্ধে প্রথম রবিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) উল্টোপথে যাওয়ার দায়ে মামলা হয়। পরদিন সোমবার আবারও উল্টোপথে গিয়ে ট্রাফিক পুলিশের হাতে ধরা পড়ে গাড়িটি। ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের দায়ে সোমবার এই ভারপ্রাপ্ত সচিব ও কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার গাড়িসহ বেশ কিছু যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা করে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ।

এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। উল্টোপথে গাড়ি না চালাতে আমি সবাইকে বারবার অনুরোধ করেছি। এতে ট্রাফিক জটের সৃষ্টি হয়। আমি আবারও অনুরোধ করছি, উল্টোপথে গাড়ি চালাবেন না। আমাদের রাস্তা কম, গাড়ি বেশি। উল্টোপথে গাড়ি চালালে বেশ সমস্যা হয়। এতে জনদুর্ভোগ বাড়ে। এই জনদুর্ভোগ রোধ করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স জরুরি কাজ করে, জরুরি সার্ভিস দেয়। তাই তাদের বিষয়টি একটু আলাদা করে দেখতে হবে।’

উল্টোপথে গাড়ি চলাচলের বিরুদ্ধে অভিযান প্রসঙ্গে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গাড়ির ভেতরে কে আছেন, সেটা আমরা দেখব না। দেখিও না। আইন ভাঙলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা গাড়ি দাঁড় করিয়েছি, মামলা করেছি। ভেতরে থাকা ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলিনি।’ যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ট্রাফিক আইন মেনে চলতে তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেন। সোমবার পুলিশের এসপি পদমর্যাদার কয়েকজন কর্মকর্তার গাড়ির বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে বলে জানান তিনি।

ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, আইন লঙ্ঘনের কারণে তারা বিভিন্ন যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। কিন্তু যখন পুলিশ ও সিভিল প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের গাড়ি উল্টোপথে চলে, তখন তারা অনেকটা নিরুপায় হয়ে পড়েন। উল্টোপথে গাড়ি চলার কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। এছাড়া সাধারণ মানুষ এ নিয়ে নানা বিরূপ মন্তব্য করেন। কিন্তু এখন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাই এ অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ফলে তাদের জন্য সুবিধা হয়েছে। এভাবে অভিযান অব্যাহত থাকলে উল্টোপথে গাড়ি চলা বন্ধ হয়ে যাবে বলে মনে করছেন তারা।

ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারি থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আট লাখ ২৪ হাজার ১৩টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এরমধ্যে হাইড্রোলিক হর্নের জন্য ২৫ হাজার ৭৪৯টি, হুটার ও বিকন লাইটের জন্য দুই হাজার ১৯৯টি, উল্টোপথে চলাচলের অভিযোগে ৬৯ হাজার ৬৫৫টি, স্টিকারের জন্য ২৫৩টি, কালো গ্লাসের জন্য এক হাজার ৫৮০টি, মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে দুই লাখ ৯ হাজার ৩৫১টি মামলা করা হয়। বাকি মামলাগুলো অন্যান্য অভিযোগে করা হয়েছে। এসব মামলায় জরিমানা আদায় হয় ৩৯ কোটি ৮৩ লাখ ৭৫ হাজার ২৩৫ টাকা।