মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারে ৩০ সেকেন্ড সিগন্যাল পর্যাপ্ত নয়



ফ্লাইওভারের সিগন্যালের সময় পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরারাজধানীতে সদ্য চালু হওয়া মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের মৌচাক ও মালিবাগ ট্রাফিক সিগন্যালের নির্ধারিত ৩০ সেকেন্ড সময় পর্যাপ্ত নয়। প্রয়োজনের তুলনায় কম সময় নির্ধারণ করায় ফ্লাইওভারে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে বলে দাবি করছেন দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ ও যানবাহন বিশেষজ্ঞরা। তবে প্রকল্প পরিচালক বলছেন, বিষয়টি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। পর্যবেক্ষণ করে সমাধানের পথ খোঁজা হবে।
সড়ক পরিবহন ও সড়ক নিরাপত্তা বিষেজ্ঞরা বলছেন, যানজটের অন্যতম কারণ ‘রাইট টার্ন’। সাধারণত যানজট নিরসন করতে রাইট টার্নের সুবিধার জন্যই বসানো হয় ফ্লাইওভার। কিন্তু সেই ফ্লাইওভারে যদি বিরতিহীন ‘রাইট টার্ন’ এড়ানোর ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে ট্রাফিক সিগন্যালের প্রয়োজন হয়। মূলত সে জন্যই এই ফ্লাইওভারের মৌচাক ও মগবাজার অংশে দু’টি সিগন্যাল পয়েন্ট বসানো হয়েছে। কিন্তু তাতে যে সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, তা পর্যাপ্ত নয়। ফলে সিগন্যাল বাতির নির্দেশ অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এতে বাড়ছে যানজট।
ট্রাফিক পুলিশকেই নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে যানচলাচলফ্লাইওভারের মৌচাক মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্য আবুল কাশেম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সিগন্যাল বাতিতে ৩০ সেকেন্ড সময় দেওয়া হয়েছে। আসলে এটা পর্যাপ্ত না। অন্তত এক মিনিট সময় দেওয়া হলে ভালো হতো। কারণ, এ সময়ের মধ্যে সিগন্যাল মোড়ে যে পরিমাণ যানবাহন জড়ো হয়, পরবর্তী ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে সে পরিমাণ যানবাহন সিগন্যাল অতিক্রম করতে পারে না। ফ্লাইওভারে যানচলাচল শুরুর পর থেকেই এই সমস্যা দেখা যাচ্ছে। শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) সরকারি ছুটির দিন থাকায় তেমন সমস্যা দেখা না গেলেও যানবাহনের চাপ বাড়লে এ ব্যবস্থা পুরোপুরি অচল হয়ে পড়ে। গতরাতে (বৃহস্পতিবার) যেমনটা  দেখা গেছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক, পরিবহন ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ড. সামছুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ফ্লাইওভার হচ্ছে সিগন্যাল দূর করে দ্রুত যাতায়াত নিশ্চিত করার একটা মাধ্যম। আমরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করলাম ফ্লাইওভারের ওপর ট্রাফিক সিগন্যাল স্থাপন করে। এটা ভুল পরিকল্পনারই অংশ।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই ফ্লাইওভারের নকশা তৈরি করেছে বিদেশি প্রতিষ্ঠান। তারা বিদেশের বাস্তবতার ওপর ভিত্তি করেই নকশা তৈরি করেছে। বিদেশিদের তৈরি করা নকশা আমরা দেশীয়রা বুঝে নেইনি। আর বিদেশিরা সিগন্যাল মানে, কিন্তু আমাদের দেশে সিগন্যাল মানার প্রবণতা নেই। সিগন্যাল যেমন কেউ মানে না, তেমনি ৩০ সেকেন্ড সিগন্যালও পর্যাপ্ত না। ফ্লাইওভারে যানজটের এটিও বড় একটি কারণ।’
সিগন্যাল বাতি থাকলেও যানচলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশদেরইএই যানবাহন বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ‘অবাক করার বিষয় হলো, এই ট্রাফিক সিগন্যাল স্থাপনের কারণে সেখানে পুলিশ রাখতে হবে। যারা হাতের ইশারায় সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু রাত ১০টার পর তো আর পুলিশ থাকবে না। তখন দ্রুত গতির যানবাহনগুলো সিগন্যাল না মানলে দুর্ঘটনা ঘটবে। আমরা যানজটকে পুঁজি করে, জনগণের বিনিয়োগের সুযোগ নিয়ে লুটপাটের পথ বের করে নিই।’
শুক্রবার দুপুরে ফ্লাইওভারটিতে যানবাহনের চাপ ছিল হাতেগোনা। ট্রাফিক সিগন্যাল দুটিতে অটো মেশিনে সিগন্যাল বাতির ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতি ৩০ সেকেন্ড পরপর লাল ও হলুদ বাতি জ্বলে ওঠার মাধ্যমে যানবাহন নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ দিচ্ছে। কিন্তু তা কাজে আসছে না। আগের মতোই পুলিশ হাতের ইশারা দিয়ে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করছে।
এদিকে, ফ্লাইওভারে উঠে অনেক যানবাহনকে পথ হারিয়ে ফেলতে দেখা গেছে। ফ্লাইওভারের মৌচাক পয়েন্টে ইউ টার্ন করার পথ থাকলেও পুলিশ বাধা দিচ্ছে । বলা হচ্ছে- ফ্লাইওভারে কোনও ইউটার্ন নেই। এতে বিভ্রান্ত হচ্ছেন অনেক চালক।
এবিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্পের পরিচালক সুশান্ত কুমার পাল বলেন, ‘মালিবাগ-মৌচাকের মতো জায়গায় ফ্লাইওভার নির্মাণ করাই অনেক কঠিন কাজ ছিল। ফ্লাইওভারের এ দুটি স্থানে একাধিক সংযোগ মিলিত হয়েছে। এ কারণে ট্রাফিক সিগন্যাল বাতির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া, উপায়ও ছিল না। এজন্য দুটি স্থানে গাড়ি কিছুটা দাঁড়াতে হতে পারে।’
সিগন্যাল বাতির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি। এটা আমাদের বিবেচনায় রয়েছে।’