১০ অক্টোবর ‘নাইন স্টার বয়েজ উত্তরা’র পেজ থেকে স্ট্যাটাস দেওয়া হয়েছে, ‘হোয়াটস আপ পিপল? গেজ হোয়াট, নাইন স্টার (উই) আর ব্যাক অ্যাগেইন! অল উই ওয়ান্ট ইজ পিস, পিস অলওভার উত্তরা। সো, অলওয়েজ সাপোর্ট দ্যা ট্রুথ অ্যান্ড প্রটেস্ট অ্যাগেইনস্ট দ্যা রং। বি সেফ, স্টে ব্লেসড।’ নিজেদের উপস্থিতি জানান দেওয়া স্ট্যাটাসে শান্তির কথা বললেও এটার কমেন্টে ‘ভি’ চিহ্ন দিয়ে রবিন নামে একজন লিখেছে ‘খেলা হপ্পে’। এর উত্তরে ‘নাইন স্টার বয়েজ উত্তরা’ লিখেছে ‘পুরা দমেই চলবে’।
আবার ১০ অক্টোবর আদনান হত্যাকাণ্ডে আটকদের ছবি প্রকাশ করে ‘নাইন স্টার বয়েজ উত্তরা’। ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, ‘ইয়ে দোস্তি হাম নেহি তোড়েঙ্গে; ছোড়েঙ্গে দম মাগার তেরা সাথ না ছোড়েঙ্গে’। ১৬ অক্টোবর একই গ্রুপের পেজ থেকে ‘ডিসকো বয়েজ উত্তরা’ গ্রুপকে উদ্দেশ করে লেখা হয়েছে, ‘এলাকার গোলির কুত্তারা মিল্লা বানাইছে এক গ্যাং, তার নাম নাকি আবার Disco।’
১ সেপ্টেম্বর ‘ডিসকো বয়েজ উত্তরা’ তাদের ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাসে লিখেছে, ‘**** অ্যান্ড রিপ নাইনস্টার বস্তিবাসিনী। অনলি ডিসকো বয়েজ ইজ কিং।’ ২৪ সেপ্টেম্বর কয়েকটি জাতীয় দৈনিককে ট্যাগ করে একই পেজ থেকে তারা লিখেছে, ‘যেখানে প্রশাসন চুপ-টাকার বিনিময়ে কিনা যায় Police, অন্যায় এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে আসে না কেউ, সেখানে আমরা বাধ্য হয়ে আইন নিজের হাতে তুলে নিলে হয়ে যায় দোষ?’
আদনান হত্যা মামলার আসামি নাফিজ আলম ডন জামিনে রয়েছে। ২৩ সেপ্টেম্বর সে তার ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে লিখেছে, ‘আই ডোন্ট টক মাচ, আই জাস্ট পুল দ্যা ট্রিগার’।
একই কথা বলেন ডিএমপি উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার জয়দেব কৃষ্ণ ভদ্র। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘উত্তরায় ফের কোনও কিশোর গ্যাং সক্রিয় হচ্ছে কিনা তা আমার জানা নেই। ফেসবুকে এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক কিছু বলছে বা হুমকি দিচ্ছে বলে কেউ আমার কাছে অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো।’
জানা গেছে, মূলত কিশোরদের গ্রুপ হলেও এগুলোয় ১৬ থেকে ২৫ বছর বয়সীরাও যুক্ত রয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের র্যাগিং, ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, ছিনতাইসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িত এসব গ্রুপের সদস্যরা। আধিপত্য বজায় রাখতে প্রায়ই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া আর মারামারিতে জড়িয়ে পড়তো তারা।
গত ৬ জানুয়ারি প্রতিপক্ষ গ্রুপের সদস্যদের হামলায় মারা যায় আদনান কবির। এ হত্যা মামলায় গ্রেফতারদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, আদনান হত্যাকাণ্ডের আাগে উত্তরার গ্যাংগুলোর মধ্যে কিছু বিষয়ে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৩ জানুয়ারি ডিস্কো বয়েজ গ্রুপ ও বিগবস গ্রুপের সদস্যরা নাইনস্টার গ্রুপের গ্যাং লিডার রাজুকে মারধর করে। দু’দিন পর আজমপুর ফুটওভার ব্রিজের নীচে নাইনস্টার গ্রুপের সদস্যরা বিগবস গ্রুপের গ্যাং লিডার ছোটনকে আক্রমণ করে।
৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ১৩ নম্বর সেক্টরের ১৭ নম্বর রোডের ১৫ নম্বর বাড়ির সামনে ডিস্কো বয়েজ গ্রুপ ও বিগবস গ্রুপের সদস্যরা নাইনস্টারের আদনান কবিরকে ধারালো অস্ত্র ও হকিস্টিক দিয়ে আঘাত করলে তার মৃত্যু হয়। আসামিদের দাবি, তাদের মূল লক্ষ্য ছিল নাইনস্টার গ্রুপের রাজু।
২০০১ সালের দিকে উত্তরা ও আশেপাশের এলাকায় গড়ে ওঠে ৩০টির মতো ছোট-বড় গ্যাং। এগুলোর মধ্যে কাকরা গ্রুপ, জি ইউনিট গ্রুপ, ব্ল্যাক রোজ গ্রুপ, রনো গ্রুপ, কে নাইট গ্রুপ, ফিফটিন গ্রুপ, ডিসকো বয়েজ গ্রুপ, নাইনস্টার গ্রুপ, নাইন এম এম বয়েজ গ্রুপ, পোটলা বাবু গ্রুপ, সুজন গ্রুপ, আলতাফ গ্রুপ, ক্যাসল বয়েজ গ্রুপ ও ভাইপার গ্রুপ সক্রিয় ছিল। ২০১৫ সালে এই গ্যাংগুলো সংগঠিত হয়ে বৃহৎ আকারে ‘ফিফটিন গ্রুপ’ নামে আত্মপ্রকাশ করে।