খন্দকার আবু তালহা গত ৮ অক্টোবর ছিনতাইকারীদের হাত থেকে প্রতিবেশীকে বাঁচাতে গিয়ে ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারান। ওইদিন ভোর সাড়ে ৬টার দিকে ক্যাম্পাসের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন তিনি। কাছেই একটি রিকশার গতিরোধ করে ছিনতাইকারীরা। অনেকে এ দৃশ্য দেখলেও কেউ এগিয়ে যায়নি। ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন শিক্ষার্থী তালহা। তিনি বাধা দেন ছিনতাইকারীদের। কিন্তু পেছন থেকে তাকে ছুরিকাঘাত করে ছিনতাইকারীরা।
আহত অবস্থায় তালহাকে প্রথমে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখান থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিজের জীবনের মায়া ছেড়ে অন্যের সহায়তায় এগিয়ে আসার সাহসিকতা দেখানো ও অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় এবারের ফারাজ হোসেন সাহসিকতা পুরস্কার পেয়েছেন তালহা। এর স্বীকৃতি হিসেবে তার পরিবারের সদস্যদের হাতে সনদ ও ১০ হাজার মার্কিন ডলারের (৮ লাখ টাকারও বেশি) চেক তুলে দেওয়া হয়।
প্রতি বছর এই পুরস্কারে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে পেপসিকো গ্লোবাল। টানা ২০ বছর এ সহায়তা দেবে তারা। অনুষ্ঠানে এ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ছিলেন ইন্ডিয়া রিজিওনের সিইও শিবকুমার। তিনি বলেন, ‘ফারাজ শুধু বাংলাদেশের নয়, সে সারাবিশ্বের রোল মডেল। সে দেখিয়ে গেছে বন্ধুত্ব কী, সাহস কী।’
এ পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের একটি তালিকা করেছিল আট সদস্যের জুরি বোর্ড। সেখান থেকে বাছাই করে নির্বাচিত করা হয় খন্দকার আবু তালহাকে।
জুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদ। তার কথায়, ‘আমরা মনোনীত অনেকের মধ্য থেকে বাছাই করে প্রথম ২০ জনকে নির্বাচিত করি। এরপর সেখান থেকে বেছে নেওয়া হয় চারজন। তাদের মধ্যে খন্দকার আবু তালহা বিজয়ী হয়েছেন। ফারাজের মতো এই ছেলেটাও নিজের নিরাপত্তার কথা না ভেবে অন্যের সহায়তায় এগিয়ে এসেছিল। এমন উদাহরণ বর্তমান সমাজে খুব জরুরি।’
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ফারাজের নানা ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান বলেন, ‘আমি ফারাজের কাজের জন্য গর্বিত। সে ২০ বছরেই যে সাহস ও বন্ধুত্ব দেখিয়েছে আমি এই বয়সেও তা ভাবতে পারি না।’
২০১৬ সালের ১ জুলাই ঢাকার হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় নিহত হন যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টার ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফারাজ আইয়াজ হোসেন। জঙ্গিরা তাকে ছেড়ে দিতে চাইলেও দুই বন্ধুকে ছেড়ে আসেননি তিনি। ফলে দুই বিদেশি বন্ধুর সঙ্গে তাকেও জীবন দিতে হয় ওইদিনের হামলায়।
ফারাজের এ সাহসিকতার জন্য গত বছর ‘ফারাজ হোসেন সাহসিকতা পুরস্কার’ চালুর সিদ্ধান্ত নেয় পেপসিকো গ্লোবাল। প্রথমবার এটি পেয়েছিলেন মাদারীপুর কলেজের কর্মচারী মিরাজ সরদার। তিনি ওই কলেজের শিক্ষক রিপন চক্রবর্তীর ওপর হামলাকারী জঙ্গিকে হাতেনাতে ধরে পুলিশে সোপর্দ করেছিলেন।