পঙ্গু হাসাপাতালে এক রোগীকে দেখতে যাওয়াকে কেন্দ্র করে টেলিভিশনের ক্যামেরা পারসনদের আচরণ আবারও সমালোচনার মুখে পড়েছে। গণমাধ্যম বিশ্লেষকরা বলছেন,কোন ঘটনা কার আগে কে প্রকাশ করবে-এই অসুস্থ ইঁদুর দৌড়ে পড়ে সাংবাদিকতা নীতিমালার বাইরে চলে যাচ্ছে এবং সেটি খুবই বিপজ্জনক। আর সাংবাদিক নেতারা বলছেন,এসব বিষয়ে ক্যামেরা পারসনদের সতর্ক করে দিতে প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব নিতে হবে।
মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক ছাত্রীকে দেখতে যান সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সেসময় তার সঙ্গে কয়েকজন ক্যামেরা পারসনও সেই কক্ষে প্রবেশ করেন এবং ছবি নিতে থাকেন। মন্ত্রীর ছবি নেওয়ার জন্য তাদের কেউ কেউ জুতা-স্যাণ্ডেল পরা অবস্থায় পাশের বেডে উঠে পড়েন। ক্যামেরা পারসনদের এই দৃষ্টিকটু প্রতিযোগিতার ছবি দিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন চিকিৎসক ডা. এম সি পাল। তিনি সাংবাদিকদের এই দৃশ্য দেখে হতবাক হয়েছেন। ছবি শেয়ার দিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘নিটো (পঙ্গু হাসপাতাল)-এ এক ছাত্রীনেত্রী ভর্তি। তার অপারেশন হয়েছে। মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এসেছিলেন দেখতে। আমরা ওই সময় রাউন্ড দিচ্ছিলাম। রাউন্ডের ফাঁকে সাংবাদিকদের তামাশা দেখলাম। শ’খানেক সাংবাদিক পারলে রোগীদের ঘারের ওপর উঠে ছবি তুলে। এই ছবিই তার নমুনা। পোস্ট অপারেটিভ অর্থোপেডিক কেস!!! এই দেশে এই সাংঘাতিকদের কাছ থেকে আর কি আশা করেন...।’
রোবায়াৎ ফেরদৌস আগের এরকম একটি ঘটনার উল্লেখ করে বলেন, ‘সেইবার সিসিইউ-তে ঢুকে মশারির মধ্যে ছবি তোলা দেখেছি। কার আগে কে দেখাবে, এটি তো ক্রেডিট না। ছবি থাকলেও যে অনেক সময় দেখানো যাবে না, এই বোধই তৈরি হয়নি।’
কেন এই ইঁদুর দৌড় প্রশ্নে সিনিয়র ক্যামেরা পারসন শামসুল হুদা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রথমত ক্যামেরা পারসনরা নিজেদের কাজ সম্পর্কে না জানা, অশিক্ষিত হওয়ার কারণে, আর দ্বিতীয়ত অফিসের চাপও থাকে। এ দুয়ের কারণে স্পটে গিয়ে ক্যামেরা পারসনরা কী করবেন, সেটি নির্ধারণ করতে পারেন না এবং এধরনের আচরণগুলো প্রতিনিয়ত ঘটতে দেখি। আমাদের যথেষ্ট সতর্ক হওয়ার আছে।’
অসুবিধা সৃষ্টি না করেও অ্যাসাইনমেন্ট কাভার করা যায় উল্লেখ করে সাংবাদিক নেতা সোহেল হায়দার চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অসুস্থ মানুষমাত্র বেদনাহত। রোগীর সেবায় কেবল তার স্বজনরা নয়, আমাদের সবারই সহমর্মী হওয়া উচিত। আমরা যারা মাঠে-ঘাটে কাজ করি, তারা সংবাদ সংগ্রহে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো ঠিকই, কিন্তু সেটি কখনও অন্য কারও অসুবিধা সৃষ্টি করে নয়।’