শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ নয়, অনশন চালিয়ে যাবেন নন-এমপিও শিক্ষকরা

অনশন করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ৪৪ জন শিক্ষক, এ সংখ্যা বাড়ছেদাবি আদায় না হলে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণার সঙ্গে দ্বিমত জানিয়েছেন আন্দোলনরত নন-এমপিও শিক্ষকরা। তাদের সংগঠন নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ নয়, দাবি আদায়ের জন্য তারা রাজপথেই অনশন চালিয়ে যাবেন। বুধবার (৩ জানুয়ারি) শিক্ষক সমিতির সাথে দ্বিমত পোষণ করে বিবৃতি দিয়েছে সংগঠনটি।
নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মাহমুদুন্নবী বাংলা ট্রিবিউনকে বিবৃতির তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে আমরা সরকারকে বিব্রত করতে চাই না। আমরা দাবি আদায়ে রাজপথে থেকেই অনশন করব।’
অনশনে অসুস্থ হয়ে পড়া শিক্ষকদের চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছেএদিকে, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম রনি বুধবার দুপুরে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তারা (নন-এমপিও শিক্ষক) তাদের কর্মসূচি পালন করুক। আমরা তাদের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়েছি। আজকের মধ্যে দাবি আদায় না হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে আমরা রাজপথে থাকব।’
রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে নন-এমপিও শিক্ষকদের চলমান আমরণ অনশনের চতুর্থ দিনে যোগ দিয়েছেন আরও শিক্ষক। গোলাম মাহমুদুন্নবী বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন আরও শিক্ষক। বিভিন্ন জেলা থেকে তারা এসেছেন। এর মধ্যে রাজশাহী ও ফরিদপুর জেলার শিক্ষকের সংখ্যা বেশি। তাদের তালিকা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৪৬ জনের কথা আমরা জানতে পেরেছি।’
অনশনে অসুস্থ হয়ে পড়া শিক্ষকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন একজন চিকিৎসকএখন পর্যন্ত এ আন্দোলনে আমরণ অনশন পালন করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন ৪৪ জন শিক্ষক। এর মধ্যে চার জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অসুস্থ হয়ে পড়া শিক্ষকদের সংখ্যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে। এই কর্মসূচিতে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে দু’জন চিকিৎসককে পাঠানো হয়েছে। তাদের একজন ডা. রায়হানা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আন্দোলনরত শিক্ষকদের সার্বিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতি দেখার জন্য আমাদের পাঠানো হয়েছে। দেখে আমরা অফিসকে জানাব। এই মুহূর্তে আর কিছু বলতে পারছি না।’
এর আগে, বুধবার সকালে আন্দোলনকারী শিক্ষকদের সঙ্গে সংহতি জানাতে উপস্থিত হয়েছিলেন লেখক, কলামিস্ট ও নাগরিক সমিতির প্রতিনিধি সৈয়দ আবুল মকসুদ। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুর্ভাগ্যের ব্যাপার, যাদের আজ শ্রেণিকক্ষে থাকার কথা ছিল, তারা আজ রাজপথে। তারা ন্যায্য দাবির জন্য আন্দোলন করছেন। সরকার বারবার আশ্বাস দিলেও এর কোনও বাস্তবায়ন চোখে পড়েনি।’
সংহতি জানাতে উপস্থিত হয়েছিলেন সৈয়দ আবুল মকসুদউল্লেখ্য, এমপিওভুক্তির দাবিতে দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলন করে আসছেন নন-এমপিও শিক্ষকরা। আমরণ অনশন, অবস্থান ধর্মঘট, শিক্ষামন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর বিভিন্ন সময়ে তারা স্মারকলিপি দিয়েছেন এই একই দাবিতে। তা সত্ত্বেও ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে নন-এমপিও শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি অথবা বাড়তি ভাতার ব্যবস্থা করতে কোনও বরাদ্দ রাখা হয়নি। তাই আবার রাজপথে নেমেছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। গত ২৬ ডিসেম্বর থেকে তারা অবস্থান নিয়েছেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে। এর মধ্যে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ তাদের ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানালেও সেই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে তারা আমরণ অনশন ধর্মঘট পালন করছেন।