বিকাশের ২৮৮৭ এজেন্টের খোঁজে সিআইডি

বিকাশএজেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশ থেকে বাংলাদেশে টাকা আনার আভিযোগে বিকাশের দুই হাজার ৮৮৭ এজেন্টকে খুঁজছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। হুন্ডির মাধ্যমে দেশে টাকা আনার প্রমাণ পাওয়ায় ২০১৭ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর বিকাশ কর্তৃপক্ষ ও সিআইডির কাছে তালিকাসহ চিঠি দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। সিআইডি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএফআইইউ’র একজন যুগ্ম পরিচালক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা বিকাশের মাধ্যমে অস্বাভাবিক লেনদেনের প্রমাণ পেয়েছি। বিকাশ কর্তৃপক্ষকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সিআইডিকেও বলা হয়েছিল। তারা সেভাবেই কাজ করছে।’

অন্য কোনও প্রতিষ্ঠানে একই ধরনের অবৈধ লেনদেন হয় কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা এখন শুধুমাত্র বিকাশ নিয়ে কাজ করছি। তাদের অনিয়ম পাওয়া গেছে। তবে অন্যদের বিরুদ্ধেও তদন্ত করা হবে।’

অন্যদিকে, সিআইডির অরগানাইজড ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বিএফআইইউ থেকে পাওয়া বিকাশের দুই হাজার ৮৮৭ এজেন্টের তালিকা সম্বলিত চিঠি পেয়েছি। এর মধ্যে ২৫ এজেন্টের বিরুদ্ধে তদন্ত করেছে বিএফআইইউ। সেগুলোসহ বাকিদের বিষয়েও আমরা অনুসন্ধান করছি।’

জানা গেছে, দেশে বিকাশের চিহ্নিত এজেন্টের মধ্যে আট জনকে আটক করেছে সিআইডির অরগানাইজড ক্রাইম বিভাগ। বাকিদের আইনের আওতায় আনতে অভিযান অব্যাহত আছে। আটক এজেন্টরা হলেন- রাজশাহী গোদাগাড়ীর মান্নান (৩০), পাবনা আমিনপুরের মনোয়ার হোসেন মিন্টু (২৯), ভাঙ্গুরার সংগীত কুমার পাল (৪৫),  সাথিয়ার জামিনুল হক (৩৮), আমিনপুরের মোজাম্মেল মোল্লা (৩৩), বেড়া’র হোসেন আলী, চট্টগ্রাম লোহাগড়ার দিদারুল হক (৩১) এবং ময়মনসিংহ ফুলপুরের আবু বকর সিদ্দিক। তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। বাকিদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে সিআইডি।

বিকাশ এজেন্টদের মাধ্যমে যেভাবে লেনদেন হয়

বিকাশ এজেন্টদের মাধ্যমে লেনদেনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে সিআইডির কয়েকজন তদন্ত কর্মকর্তা জানান, বিকাশের মাধ্যমে মানি লন্ডারিংয়ের ঘটনা বেশি হয় মধ্যপ্রাচ্য থেকে। এছাড়া, উন্নত দেশসহ অন্যান্য দেশ থেকেও মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আসে। এক্ষেত্রে হুন্ডি ব্যবসায়ীরা একটি কৌশল ব্যবহার করেন। বিদেশে বাঙালিদের পরিচালিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সামনে সাধারণত বিকাশসহ অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সাইনবোর্ড টানানো থাকে। যা দেখে প্রবাসীরা বিভ্রান্ত হন। তারা মনে করেন, বিদেশ থেকে হয়তো বিকাশের মাধ্যমেই দেশে টাকা পাঠানো যায়। সরল বিশ্বাসে তারা ফাঁদে পা দেয়। এরপর বিকাশের আড়ালে সংঘবদ্ধ চক্র মূলত হুন্ডির মাধ্যমেই দেশে টাকা পাঠায়।

কর্মকর্তারা আরও জানান, হুন্ডি ব্যবসায়ী চক্রটি প্রবাসীদের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা নেয়। পরে সমপরিমাণ অর্থ বাংলাদেশে থাকা চক্রের সদস্যদের মাধ্যমে স্থানীয় মুদ্রায় (টাকা) পরিশোধ করে। দেশের ভেতরে এই টাকার লেনদেন হয়ে থাকে বিকাশের মাধ্যমে। ফলে প্রবাসীরা মনে করেন, বিদেশ থেকে বিকাশের মাধ্যমেই টাকা দেশে স্বজনদের কাছে পৌঁছাচ্ছে। বাস্তবে এই টাকা আসে হুন্ডির মাধ্যমে। ফলে রেমিটেন্স থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

এ বিষয়ে মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রবাসীরা মূলত সচেতন না হওয়ায় টাকা পাঠাতে হুন্ডির পথ বেছে নেন। ফলে দেশে রিজার্ভের পরিমাণ কমছে।’

আরও পড়ুন:
বিকাশের মাধ্যমে হুন্ডি ব্যবসায় জড়িত আট এজেন্ট আটক