রাজধানীবাসীর শীতের রাত

শীত বাড়লে ভিড় বাড়ে রাজধানীর ভাপা পিঠার দোকানেশীতে কাঁপছে পুরো দেশ। কয়েকদিন ধরে শৈত্যপ্রবাহ চলতে থাকায় কনকনে শীতে জবুথবু মানুষজন। উত্তরাঞ্চল বা পাহাড়ি এলাকার জনপদে দুপুরেও সূর্যের দেখা ভার। সে তুলনায় রাজধানী ঢাকার অবস্থা কিছুটা ভালো। তবে শীত যে কম, তা কিন্তু নয়। সকাল, সন্ধ্যা বা রাতে রাজধানীর রাস্তায় দেখা মেলে প্রচণ্ড শীতে কম্পমান মানুষের। ফুটপাতে ঠাঁই নেওয়া ছিন্নমূল মানুষের কষ্টের কথা বলাই বাহুল্য; যারা দামি-ভারি গরম কাপড় পরে রাস্তায় নেমেছেন তাদেরও হাঁটাচলায় শীতের কামড়ের ছাপ স্পষ্ট।

ফার্মগেটের ফুটপাতে শীতের কাপড় কেনার ভিড়ঢাকার তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁই ছুঁই করছে। সোমবার (৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাতে ঢাকার তাপমাত্রা সর্বনিম্ন ৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামতে পারে। আকাশ আংশিক মেঘাচ্ছন্ন এবং আবহাওয়া শুষ্ক থাকবে। বাতাসের গতি ঘণ্টায় ৬-১২ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।

বেচাকেনার ফাঁকে আগুন পোহানোঢাকাসহ সারাদেশে বয়ে যাচ্ছে শৈত্যপ্রবাহ। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে তাকে শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়ে থাকে। শীতের এই কষ্টটা নিম্ন আয়ের মানুষের একটু বেশি। ফুটপাতে বা খালি জায়গায় কাগজ, কাঠ জড়ো করে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা যায় তাদের। ভিড় দেখা যায় ভাপা পিঠা ও চায়ের দোকানগুলোতে।

সোমবার রাত ৮টায় ঢাকার প্রধান সড়কগুলোতে যানজট থাকলেও অলিগলি ছিল মোটামুটি ফাঁকা। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্মজীবী মানুষের বাড়ি ফেরার তাড়া ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রত্যেকেই শীতবস্ত্রে পুরোপুরি আবৃত। শীত থেকে বাঁচতে যা যা দরকার তা-ই সঙ্গী করে নিয়েছে মানুষজন। নাক, কান, মুখ ঢেকেও ঠাণ্ডা থেকে নিজেদের রক্ষা করা মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়।

শীতে নাক মুখ ঢেকে চলছে আড্ডাঅন্যদিকে, শাহবাগ এলাকার রাস্তার পাশে দেখা যায় অন্যরকম দৃশ্য। ফুটপাত ঘেঁষেই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে আগুন পোহানোর। এ প্রতিবেদক কাছে যাওয়ার আগেই লাকড়িতে জ্বলে উঠলো আগুন। সেই আগুনে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন কয়েকজন নিম্ন আয়ের মানুষ। তাদের মধ্যে একজনের নাম শহীদ। পেশায় রিকশাচালক। পাশেই রিকশা মেরামতের দোকানে রিকশা রেখে এসে আগুনের তাপে শীত থেকে বাঁচার চেষ্টা করছেন। তার পাশেই বসেছেন একজন মাটির তৈরি জিনিস বিক্রেতা। তিনিও দোকান ছেড়ে এসে বসে আছেন আগুনের পাশে।

আগুন পোহানোকিছুদূর এগিয়ে টিএসসির মোড়ে দেখা গেল রাজু ভাস্কর্যের আশপাশে সব জায়গায় লোকে লোকারণ্য। বাম পাশের বটতলায় মানুষ লাইন দিয়ে গরম গরম ভাপা পিঠা কিনতে  দাঁড়িয়ে আছেন। ভাপা পিঠা বিক্রেতার নাম বাশার। নিয়মিত বসেন বটতলার সামনে। শীত বেশি পড়লে ভাপা পিঠার চাহিদা বাড়ে বলে জানান বাশার। এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার ফাঁকে ফাঁকেই তৈরি করছিলেন পিঠা। সন্ধ্যার পর থেকে পিঠা বানিয়ে কুলানো যাচ্ছে না বলে জানান তিনি। এছাড়া, টিএসসির আশপাশের চায়ের দোকানগুলোতেও ছিল উপচে পড়া ভিড়। মানুষের ফাঁক গলে চায়ের দোকান দেখতে পাওয়াই যেন দুষ্কর।

রাতে জমজমাট টিএসসির পাশের দোকানগুলোকয়েকদিন ধরে শীত জেঁকে বসায় অনেকেই কিনছেন শীতের কাপড়। রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় দেখা মেলে এমন চিত্রের। দোকানিরা ব্যস্ত ক্রেতা সামলাতে। দোকানিরা কেউ কেউ শীতের রাতে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরবেন বলে শেষ বেলার সুযোগ হিসেবে শীতের কাপড়ে দিচ্ছেন ছাড়। আবার কোনও কোনও পথ চলতি মানুষ দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে শীতের কাপড়ে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছেন। ফার্মগেটের ফুটপাতে শীতের পোশাক কিনতে আসা শরিফুজ্জামানের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখানে জ্যাকেটের দাম তুলনামূলকভাবে কম। শীত বেশি পড়েছে বলে জ্যাকেট কিনতে চাচ্ছেন তিনি।

শীতে রিকশায় চড়াগত কয়েকদিন ধরেই তীব্র শীতে কাঁপছে সারাদেশ। শৈত্যপ্রবাহের কারণে গত কয়েকদিন ধরে সারাদেশের তাপমাত্রা ক্রমশ কমছে। গত ৫০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় সোমবার (৮ জানুয়ারি) সকালে পঞ্চগড়ে। এদিন ২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয় পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায়। এর আগে ১৯৬৮ সালে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে। আরও দু-একদিন এই শৈত্যপ্রবাহ থাকবে বলে আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে।

ছবি- নাসিরুল ইসলাম