অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রাজধানীর উত্তরা, ধানমন্ডি, গুলশানের বেশ কয়েকটি স্কুল ও কলেজগামী গ্রুপ রয়েছে। এদের নাম বিভিন্ন হরর ফিল্ম, ডব্লিউডব্লিউএফ ও ভিডিও গেমস থেকে নেওয়া। এদের ফেসবুক প্রোফাইলগুলো রেসট্রিক্টেড। কেবল ঢাকা নয়, সম্প্রতি চট্টগ্রাম মহানগরীতেও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বেশকিছু কিশোর গ্যাং। তারা জড়িয়ে পড়েছে দখলবাজি, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। শুরুতে খেয়াল না করলেও ছুরিকাঘাতে কলেজিয়েট স্কুলের মেধাবী ছাত্র আদনান ইসফারকে (১৫) হত্যার পর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে অভিভাবকদের মধ্যে।
এদিকে, খুলনায় নিহত হওয়া স্কুলছাত্র ফাওমিদ তানভীর রাজিমের (১২) মায়ের অভিযোগ, দুই সহপাঠীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় তার ছেলেকে খুন করা হয়েছে। খুলনা পাবলিক কলেজে কনসার্ট চলাকালে শনিবার (২০ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাকে খুন করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগের শিক্ষক হাফিসুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গ্যাং কালচার সবসময় ছিল, আছে, থাকবে। মূল কারণ মানুষের ভেতরের বিভিন্ন ধরনের দ্বন্দ্ব। জমি বিরোধ থেকে শুরু করে কেন সালাম দিলো না— এমন যেকোনও কারণেই এই পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।’
ঢাবির এই অধ্যাপক আরও বলেন, ‘সমাজে অপরাধের কিছু বিষয় মানুষের সহজাত। কিছু অপরাধ সমাজ ও রাষ্ট্রের ভেতরকার বৈষম্য ও দারিদ্র্য থেকে উঠে আসা। তাই এসব অপরাধের পেছনের কারণ নির্মূল করা গেলে এই পরিস্থিতি থেকে বের হওয়া যাবে।’ কারণগুলো উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘সহনশীলতার শিক্ষা না দেওয়া একটি বড় কারণ। এই শিক্ষা না দিলে পারিবারিক-সামজিক নিয়ন্ত্রণ ভেঙে পড়ে। তখন সমস্যাগুলো প্রকট আকার ধারণ করে। কার্টুন সিনেমায় যে হিরোইজম দেখায়, সেটাও তাকে প্রভাবিত করে। কারণগুলো না থাকলে এমন সহিংসতা থাকবে না, কিংবা থাকলেও সেটা সহনশীল মাত্রায় থাকবে।’
অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট আরিফ জেবতিক মনে করেন, শিশুদের বেড়ে ওঠার যথাযথ পরিবেশ তৈরি করতে না পারা এবং অভিভাবকদের দায়িত্বশীলতার অভাবে কারণে পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গ্যাং কালচার আগেও ছিল, এখনও আছে। তবে এখন দুর্ঘটনা বেশি, সহিংসতাও বেশি। বাচ্চারা প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে বেড়ে উঠছে। তাকে সবকিছুতে সেরা হতে হবে— এই তাগাদা অভিভাবকদের দিক থেকে দেওয়া হয়।’
এই প্রতিযোগিতা শিশু-কিশোরদের আগ্রাসী করে তুলছে উল্লেখ করে এই অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট বলেন, ‘এতে তার মধ্যে দেখিয়ে দেওয়ার প্রবণতা তৈরি হচ্ছে। কিন্তু যখন সে কিছু দেখিয়ে দিতে পারছে না, তখন তার সেই হতাশা মাস্তানি আকারে বের হচ্ছে। এই বয়সে আমাদের সময়ে খেলাধুলা, রাজনীতি নিয়ে গ্রুপে গ্রুপে মারামারি হতো না, তা নয়। কিন্তু এখন সেটি ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। এ সমাজ ও প্রতিবেশ তাকে যেভাবে বিকৃত করে তুলছে, তার প্রতিক্রিয়ায় এটা হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়।’
দেশের কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে কিশোর সংশোধন নিয়ে কাজ হয় না। এ ধরনের কিছু কেন্দ্র আছে, তবে সেগুলো কেবল নামেই কিশোরদের উন্নয়ন করে, কাজে নয়। সেখানে পরিবেশ এমনই যে, ছুরিকাঘাত করার অপরাধে এসব কেন্দ্রে কারও স্থান হলে সে বন্দুক চালানো শিখে বের হবে। এগুলোকে প্রকৃত অর্থে সংশোধনী কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।’
আরও পড়ুন:
উত্তরায় ফের সক্রিয় ‘কিশোর গ্যাং’