সাগর-রুনির সেই বাড়িটি এখন যেমন

 

‘শাহজালাল রশিদ লজ’, এই বাড়ির পঞ্চম তলার ফ্ল্যাটে খুন হয়েছিলেন সাগর-রুনিরাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ৫৮/এ/২ নম্বর বাড়িটির নাম ‘শাহজালাল রশিদ লজ’। এই বাড়ির পঞ্চম তলার ফ্ল্যাটে খুন হয়েছিলেন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি। খুন হওয়ার সাড়ে তিন বছর পর ফ্ল্যাটটি মালিককে বুঝিয়ে দেয় র‌্যাব (র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাব)। ফ্ল্যাটের মালিক সাজ্জাদ রশিদ জানান, আড়াই বছর ধরে ওই বাসায় একটি পরিবার ভাড়ায় আছে।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি খুন হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনি। ওই সময় সাজ্জাদ রশিদ দেশের বাইরে ছিলেন। এ কারণে সেই রাতের ঘটনার বিষয়েও বিস্তারিত কিছু বলতে পারছেন না তিনি।

শনিবার (১০ ফেব্রয়ারি) সন্ধ্যায় শাহজালাল রশিদ লজে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়ির ফটকে নিরাপত্তার দায়িত্বে  আছেন সুনীল দাস ও সাইদুল ইসলাম। নড়াইলের বাসিন্দা সুনীলের চাকরির বয়স মাত্র আড়াই মাস। আর সাইদুল এ বাড়িতে আছেন তিন বছরেরও বেশি হলো।

সাগর-রুনি খুন হয়েছেন ছয় বছর আগে। সে কারণে ওই ঘটনা সম্পর্কে এই দুই নিরাপত্তাকর্মী তেমন কিছু জানেন না। তবে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি নেওয়ার পর তারা শুনেছেন, এই বাড়িতে সাংবাদিক স্বামী-স্ত্রীকে হত্যা করা হয়েছিল। সুনীল ও সাইদুলের ভাষ্য— এর বেশি কিছু জানা নেই তাদের।
ফ্ল্যাটের বর্তমান ভাড়াটিয়া বাসায় না থাকায় ভেতরে প্রবেশ করা সম্ভব হয়নি এই প্রতিবেদকের। তবে কথা হয় ফ্ল্যাটের মালিক সাজ্জাদ রশিদের সঙ্গে।

বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘সাংবাদিক দম্পতি খুন হওয়ার পর র‌্যাব ওই ফ্ল্যাটটি বন্ধ করে রেখেছিল। সাড়ে তিন বছর পর তারা ফ্ল্যাটটি আমাকে হস্তান্তর করে।’  তারপর ছয় মাস কোনও ভাড়াটিয়া পাইনি। হয়তো ঘটনা শোনার পর ভয় পেয়ে কেউ ভাড়া নেননি।’

সাজ্জাদ রশিদ বলেন, এরপর আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে একটি পরিবার ওই ফ্ল্যাটটিতে বসবাস করছে। তারা সবকিছু জেনেই সেখানে আছেন।’

শাহজালাল রশিদ লজ

তিনি বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের কয়েকদিন আগে আমি দেশের বাইরে যাই। তখন বাড়ির দায়িত্বে যারা ছিলেন, সেদিন কী হয়েছিল বা কী দেখেছেন, তারা হয়তো বলতে পারবেন।’

এই ভবনের ফ্ল্যাট মালিকদের একজন মো. তমাল। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের রাতে তমাল নিজের ফ্ল্যাটেই ছিলেন। ফোনে যোগাযোগ করা হলে তার স্ত্রী বলেন, ‘তমাল গাড়ি ড্রাইভ করছে। আমরা ঢাকার বাইরে রয়েছি। এখন কথা বলা যাবে না।’

ঘটনার পরপরই বাসায় গিয়েছিলেন নিহত মেহেরুন রুনির ভাই নওশের আলম রোমান। কী দেখেছিলেন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আপু বিছানার পাশে, আর সাগর ভাইয়ের বডিটা কোনাকুনি পড়ে ছিল। হাত বাঁধা ছিল। কম্বল দিয়ে অর্ধেক শরীর ঢাকা। পা ছিল দরজার দিকে। পা দরজার পাশে থাকায় পুরো দরজা খোলা যাচ্ছিল না। কক্ষের ভেতরে রক্তের ওপরে জুতার ছাপ ছিল। মেঘের কক্ষের কাপড়চোপড় এলোমেলো ছিল। বাকি সব কক্ষ ছিল নরমাল। রান্নাঘর একটু  এলোমেলো ছিল।’

সাগর-রুনি হত্যার ছয় বছর পেরিয়ে গেলেও খুনিদের শনাক্ত করতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাব। খুনিদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনা হবে— এতদিন সেই আশায় ছিলেন নিহতদের স্বজনরা। মামলার কোনও অগ্রগতি না হওয়ায় এখন অনেকটাই আশা ছেড়ে দিয়েছেন তারা।

মামলার বাদী নওশের আলম রোমান বলেন, ‘এই হত্যা মামলার কোনও সুরাহা না হওয়ার পেছনে অন্য কোনও ইন্টেনশন থাকতে পারে। তা না হলে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেক সাফল্য থাকলেও কেন তারা এই মামলায় কোনও অগ্রগতি দেখাতে পারছেন না।’