উচ্চপর্যায়ের বৈঠক: প্রশ্নব্যাংক তৈরি ও পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তনে ঐকমত্য

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন জানিয়েছেন, প্রশ্নপত্র ছাপানো ও বিতরণের প্রয়োজন হবে না–এমন পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে, তাহলেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার সুযোগ থাকবে না। তিনি বলেন, ‘প্রশ্নব্যাংক তৈরির পরিকল্পনা ও আগামী বছর থেকে নতুন পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে সভায় একমত হয়েছি।’  

মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের বৈঠক শেষে তিনি এ কথা জানান।

সচিব বলেন, ‘আগামী বছর থেকে কোনও প্রশ্নপত্র ছাপানো হবে কিনা তা নিয়ে ভাবতে হবে। কোনও ডিভাইস দিয়ে সরাসরি পরীক্ষার হলে শিক্ষার্থীদের কাছে প্রশ্নপত্র পৌঁছানো যায় কিনা ভাবা হচ্ছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, প্রশ্নপত্র ছাপিয়ে কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়ার যে প্রক্রিয়া এখন আছে, এ পদ্ধতিতে কোনোভাবেই প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকানো সম্ভব হবে না।’

বৈঠকের আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘আমরা আজ সর্বোচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বসেছিলাম। যেসব মন্ত্রণালয় পরীক্ষা গ্রহণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, সেসব মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বৈঠকে ছিলেন। চলমান এসএসসি পরীক্ষার যেগুলো বাকি আছে এবং যেগুলো শেষ হয়েছে সেগুলোর বিষয়ে একটি পর্যালোচনা হয়েছে। আজকের সভার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বাকি পরীক্ষাগুলো ভালোভাবে শেষ করা এবং নিয়ন্ত্রণে রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া। একইসঙ্গে আগামী এইচএসসি পরীক্ষায় নতুন কী ধরনের পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায় তা নিয়েও কথা হয়েছে। যাতে আগামী পরীক্ষাগুলো সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা যায়। যেহেতু এইচএসসি পরীক্ষার মাত্র দেড় মাস বাকি রয়েছে, তাই এ বিষয়ে আগাম প্রস্তুতিস্বরূপ কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায় তা নিয়ে কথা হয় সভায়।’

এর আগে সচিব সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, আগামী এসএসসি পরীক্ষা হবে ভিন্ন পদ্ধতিতে। এমসিকিউ তুলে দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছিলেন তিনি।

আগামী পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকানোর উদ্যোগের বিষয়ে বৈঠকের পর মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, ‘আগামীতে যেসব পরীক্ষা হবে, সেখানে কোনও কর্মকর্তা, শিক্ষক বা কর্মচারী হাতে মোবাইল ফোন নিয়ে পরীক্ষা হলের ত্রি-সীমানার মধ্যে থাকেন, তাহলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র যেকোনও ব্যক্তির মোবাইল ফোনে পাওয়া গেলে তাকে আইসিটি আইনের আওতায় বিচারের ব্যবস্থা করা হবে। সুষ্ঠু পরীক্ষা নিশ্চিত করার জন্য যেকোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

সাংবাদিকদের উদ্দেশে সচিব বলেন, ‘আপনাদের (সাংবাদিক) ও অভিভাবকসহ সবার সহযোগিতা চাই। কারণ, এ পরীক্ষায় যারা অংশ নিচ্ছে তারাই আগামীতে এ দেশের নেতৃত্ব দেবে। তারা যেন আদর্শবান হিসেবে গড়ে ওঠে।’

আগামীতে পরীক্ষা পদ্ধতিতে কী ধরনের পরিবর্তন আনা হবে এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ‘যে পরিবর্তন আনা হবে তা আগামী বছরের এসএসসি পরীক্ষায় অ্যাপ্লাই করা হবে। সেই পরীক্ষায় একটি প্রশ্নব্যাংক বানানো হবে। আর তা করতে তিন থেকে চার মাস সময় লাগবে। সুতরাং তা করতে গেলে আগামী বছরের এসএসসি পরীক্ষার আগে সম্ভব নয়।’

প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘দেখুন, এ পর্যন্ত ৫২টি মামলা হয়েছে, ১৫২ জনকে আটক করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। আমরা বলেছি এ পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলেও এ প্রক্রিয়া চলতেই থাকবে।’

আগামীতে এমসিকিউ বাতিলের বিষয়ে সচিব বলেন, ‘এমসিকিউ বাতিলের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী যেটা বলেছেন তা আমাদের জন্য নির্দেশ। যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বন্ধ করতে হয়, সেই প্রক্রিয়ায় আমাদের আসতে হবে। এটা আমি হঠাৎ করে কিছু বলতে পারবো না।’

যেসব বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে তা বাতিলের বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি কমিটি করা হয়েছে। তারা যে সুপারিশ দেবেন, সেভাবেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সচিব জানান, গত তিন দিন থেকে পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ন্ত্রণে এসেছে। আগামী পরীক্ষাগুলো আরও নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন সচিব।