মশাবাহিত রোগের ঝুঁকি বাড়ার আশঙ্কা চিকিৎসকদের, প্রস্তুত ঢামেক

চিকুনগুনিয়া বাহিত এডিস মশা (ছবি-ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত)
হঠাৎ করেই রাজধানী ঢাকায় মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। বসন্তের বাতাস উপভোগের চেয়ে খোলা জায়গা থেকে দ্রুত ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে। সেখানেও স্বস্তি নেই, মশা নিস্তার দিচ্ছে না ছোট-বড় কাউকেই। বর্ষা আসার আগেই এমন উপদ্রবে এবার মশাবাহিত রোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা  করছেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন এমন আশঙ্কার কথা স্বীকার করেছেন। তবে চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গুর মতো মশাবাহিত ভয়াবহ রোগের চিকিৎসা দিতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
আজ  শনিবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মশাবাহিত রোগের চিকিৎসার প্রস্তুতি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এ হাসপাতালে চিকুনগুনিয়া বা ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত কোনও রোগী এলে তাকে ভর্তির জন্য প্রথমে আউটডোরে দশ টাকা দিয়ে একটি টিকিট কাটতে হয়। এরপর তাকে মেডিসিন বহির্বিভাগে পাঠানো হয়।

সেখানে গিয়ে ৫ নম্বর কক্ষে কর্মরত চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখানে আসা রোগীদের মধ্যে কারও চিকুগুনিয়া হয়েছে বলে সন্দেহ হলে বা লক্ষণ বোঝা গেলে তাকে  মেডিক্যাল-২ বিল্ডিং এর পাঁচতলায় চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। তারা জানান, চিকুনগুনিয়ার রোগীদের জন্য সেখানেই চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এরপর সেই ভবনটিতে রোগীদের অবস্থা দেখতে গেলে সেখানে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বলেন, গত বৃহস্পতিবার থেকে আমাদের এখানে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত নতুন কোনও রোগী আসেনি। তিনি বলেন, চিকুনগুনিয়ার রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি তেমন একটা লাগে না। বেশিরভাগকেই আউটডোর ট্রিটমেন্ট দেই আমরা। যাদের অবস্থা খুবই খারাপ সেক্ষেত্রে তাদের আমরা হাসপাতালে ভর্তি করি। এখন আপাতত আমাদের এখানে কোনও রোগী নেই। কারণ, এই রোগটা বর্ষার সময় বেশি হয়। যখন বৃষ্টিটা হয় তখন এই রোগটা বেশি বাড়ে। বর্ষার সময় একদিনে ১০ জন রোগীও ভর্তি হয়।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, গতবছর মারাত্মকভাবে চিকুনগুনিয়া রোগ আমাদের বিপর্যস্ত করে দিয়েছিল। তবে ওই অবস্থার ভেতরে আমরা রোগটাকে অ্যানালাইসিস করার সুযোগ পেয়েছি। ২০০০ সালে প্রথম এদেশে মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু ধরা পড়ে। তখন নতুন এই রোগের সঙ্গে সবাই পরিচিত হয়। এরপর গতবছর আসে চিকুনগুনিয়া। এই রোগে রোগীর বেশি কষ্ট হয়। তবে এ রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি কম। চিকুনগুনিয়া এবং ডেঙ্গু দুটো মশাবাহিত রোগই এডিস মশার কারণে হয়। ঢাকা যেহেতু ঘন বসতি পূর্ণ এলাকা, এখানে এডিস মশার জন্মানোর সুযোগ বেশি। ডেঙ্গুর ব্যাপারে মানুষের সচেতনতা তৈরি হয়েছে। আমরা মশার ব্যাপারে সতর্ক হতে পেরেছি। তারপরও এবছরও বর্ষা মৌসুমে চিকুনগুনিয়ার রোগী হবে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। তবে আমাদের এই রোগ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি রয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের হাসপাতালে চিকুনগুনিয়া ক্লিনিক রয়েছে। গতবছর আমাদের চিকিৎসক নার্সরা এই রোগের চিকিৎসা করার কারণে আমরা এই বছর আরও দক্ষ হয়েছি বলে মনে করছি। আমরা গতবছরের মতো এবারও আউট ডোরে বসেই চিকুনগুনিয়ার রোগী দেখবো। এই রোগীদের সাধারণত ম্যাসেজ ফিজিওথেরাপি ট্রিটমেন্ট দিতে হয়। সব রোগী ভর্তি করা লাগে না। যদি কোনও রোগী ভর্তির প্রয়োজন হয় আমরা ভর্তি করবো। 
রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট এর সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার এ এস এম আলমগীর বলেন, বৃষ্টি শুরু হলে চিকুনগুনিয়ার ঝুঁকি থাকে। এখন যে মশাটা আমরা দেখছি সেটা আসলে কিউলেক্স মশা। গতবছরে আমাদের চিকনগুনিয়ার অভিজ্ঞতা ভালো নয়। সাধারণত একবার হলে চিকুনগুনিয়া পরের বছর ঐ শহরে হয় না।  তবে ঢাকার বাইরে এই রোগ ছড়িয়ে পড়লে তা হবে ঝুঁকিপূর্ণ। ডেঙ্গু এখনও আছে তবে, তার চিকিৎসা সম্পর্কে চিকিৎসকরা জানার কারণে এ রোগ থেকে মানুষের কষ্ট কমেছে। তবে, বৃষ্টি শুরু হলে চিকুনগুনিয়া বা এডিস মশা সংক্রান্ত রোগ বাড়তে পারে।